কিয়েভ: জন্ম থেকেই যুদ্ধ করছে ওরা। জীবন যুদ্ধ! বেঁচে থাকার লড়াই। কারও বয়স ২ বছর, কেউ ৫ বছরের, কারও আবার বয়স ১০। ওরা কেউ ক্যানসারের সঙ্গে যুঝছে, কারও আবার কিডনির সমস্যা। এরইমধ্যে আবার দেশে যুদ্ধ লেগেছে! মর্মন্তুদ ছবি কিয়েভের শিশু হাসপাতালে। নিয়মিত কেমো না দিলে বাচ্চাগুলোকে বাঁচানো যাবে না। কিন্তু ওদের নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় কারই বা আছে। আপাতত মাটির নীচে চলছে হাসপাতাল, বেসমেন্টে। উপরে যুদ্ধ, নীচেও যুদ্ধ —এক ভয়ঙ্কর দিনলিপি। শুধু ক্যানসার রোগীই নয়, রয়েছে কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত শিশুরাও। নিয়ম মেনে ডায়ালিসিস দরকার ওদের। আপাতত হাসপাতালের বেসমেন্ট ইনটেনসিভ কেয়ার ডায়ালিসিস ইউনিটে পড়ে রয়েছে তারা। মাথার কাছে শুকনো মুখ করে বসে আছেন মা।
আন্তর্জাতিক এক সংবাদমাধ্যম বলছে, এই মুহূর্তে কিয়েভের শিশু হাসপাতালে ডায়ালিসিসের জন্য ২০ থেকে ২১ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। তাদের বয়স ১ বছর থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। ১০-১১ পার হয়ে গেল বাইরের জগতের মুখ দেখেনি ওরা। জীবনের খুচরো মজাটুকুও উধাও। ওয়েস্টার্ণ ইউক্রেনের লিভিভের এক হাসপাতালেও এক ছবি। তবে রাজনীতির কারবারিরা ওদের কথা না ভাবলেও, হাসপাতালের লোকজন ভেবেছে। দিনভর রটআয়রনের বিছানাগুলির সঙ্গে লেগে থাকা শিশুমুখগুলিতে খানিক হাসি ফোটাতে আনা হয়েছে ক্লাউন।
একটু অন্যরকম মুহূর্ত তৈরির চেষ্টা করছেন হাসপাতালের লোকজন। একটু হাসি, একটু আনন্দ খুঁজে পাক ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলি সেটাই চাইছে তারা। ক্লাউনরাও খুব অল্প বয়সী। তাদের মুখে মাস্ক পরা। তার উপর দিয়েই নাকের জায়গায় একটা বল লাগানো। লাল রঙের, হাতে পুতুল। নানারকম মজাদার অঙ্গভঙ্গি করছে তারা। তাদের দেখে ছোটরা তো হাসছেই, বড়রাও হেসে কুটিপাটি। কিয়েভের বেশির ভাগ মহিলা, শিশুই পোল্যান্ডের পথে। সবমিলিয়ে দেশ ছাড়া প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ।
কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুরা সেই তালিকায় নেই। কারণ এতটা পথ পেরিয়ে যাওয়া তাদের জন্য মুশকিল। চিকিৎসকরা বলছেন, টানা হাসপাতালের পরিষেবা না পেলে মৃত্যু ঠেকানো যাবে না। আবার এটাও সত্যি, যুদ্ধ যেভাবে চলছে তাতে হাসপাতালে থেকেও চরম কিছু এড়ানো যাবে কি? পালাতে গেলেও মৃত্যু, মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেও মৃত্যু। শুধু সুদিনের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।