নতুন বছরে সৌভাগ্য বয়ে আনতে সারা শহর আপনজনেদের ছুঁড়ে মারে কমলালেবু
Carnival of Binche: মিছিলে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি গিলের মাথায় থাকে উট পাখির পালকে তৈরি তিন কেজি ওজনের বিশাল টুপি। এই টুপির দামই ন্যূনতম এক হাজার ইউরো।
জীবনে সৌভাগ্য আনতে কখনও কারোর দিকে কিছু ছুঁড়ে মেরেছেন কখনও? ভাবছেন এ আবার কী, কাউকে কিছু ছুঁড়ে মারার সঙ্গে সৌভাগ্যের কী সম্পর্ক। সম্পর্ক আছে। আপনার শুনতে অদ্ভুত লাগলেও বেলজিয়ামের একদল মানুষ আপনজনকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে কমলালেবু ছুঁড়ে মারেন। তাঁদের ধারনা এর ফলে তাদের এবং আপনজনেদের জীবনে সৌভাগ্য বয়ে আনবে।
মূলত ওলন্দাজ এবং ফরাসিভাষীদের বাস বেলজিয়ামে। বেলজিয়ামের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মানুষই এই দুই সম্প্রদায়ের। বেলজিয়ামের দক্ষিণ-পূর্ববর্তী অঞ্চল ওয়ালোনিয়া। এই অঞ্চলে মূলত ফরাসিদের বাস। ফরাসিরা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে এই অঞ্চলে মেতে ওঠেন ‘দ্যু বাশ্চ’ নামে এক ঐতিহ্যশালী জাঁকজমকপূর্ণ উৎসবে। তিনদিন ধরে চলা এই উৎসবে তারা একে অপরের দিকে ছুঁড়ে মারেন কমলা লেবু। একই সময়ে চলে খ্রিস্টানদের অ্যাশ ওয়েন্সডে উৎসবও।
বিশেষ খ্রিস্টিয় উৎসব ‘শ্রভ সানডে’ এই দ্যু বাশ্চ উৎসবের আনুষ্ঠানিক শুরু হিসেবে বিবেচিত হয়। সেদিনে ড্রাম ও ভায়োলার মতো বাদ্যের সুরে আকাশ-বাতাস আলোড়িত হয়ে ওঠে। প্রথমদিনের মিছিলে অংশগ্রহণকারী পুরুষ ও নারীরা সমকালীন বিভিন্ন ঘটনাবলী ও চরিত্রের আদলে নিজেদের সজ্জিত করেন। এদিনের পোশাক সাধারণত সকলের জন্যই এক। নারী-পুরুষ উভয়েই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। রবিবার শুরু হয় এই উৎসব, যাকে বলা হয় শ্রভ সানডে।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন শ্রভ মনডে নামে পরিচিত। এই দিনটি মূলত শিশু-কিশোরদের জন্য উৎসর্গীকৃত। এই দিন রঙিন কাগজ দিয়ে এমনভাবে সাজানো হয়, মনে হবে যেন রঙিন কাগজের বৃষ্টি নেমেছে। স্থানীয় চার্চগুলি তাদের চিরাচরিত ভাবগম্ভীর পরিবেশে ত্যাগ করে অনেক খোলামেলা হয়ে ওঠে, প্রতিটি চার্চে পিয়ানো বাজে পিয়ানো।
উৎসবের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ দিনের নাম শ্রভ টিউসডে। উৎসবের এই দিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন এখানকার পুরুষরা সবাই এক বিশেষ ধরনের পোশাক পড়েন। সেই পোশাকের অঙ্গ হিসাবে গোঁফ আঁকা মোমের মুখোশও থাকে মুখে। এই পোশাক পরিহিত পুরুষদের বলা হয় ‘গিলে’। ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রতিটি গিলে সদস্য এই বিশেষ পোশাক পড়ে বাড়ি থেকে বেরোন। তারা ড্রামের তালে তালে পা মিলিয়ে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে গিয়ে হাজির হন। দেখলে মনে হবে যেন রাত্রিকালীন প্যারেড চলছে! উৎসবের নিয়ম অনুযায়ী ঠিক সকাল ৭ টার সময় তারা ওস্টার নামে শামুকের একরকম পদ এবং শ্যাম্পেন সহযোগে প্রাতরাশ সম্পন্ন করেন একত্রে।
অনুষ্ঠানের এই তৃতীয়দিনে মহিলারাও পরেন এক বিশেষ ধরনের পোশাক। তাদের বলা হয় প্যাসেন। এরপর বেলা বাড়লে গিলে এবং প্যাসেনরা শহরের টাউন হলের সামনে জড়ো হন। মেয়র সমবেত জনতার মধ্যে থেকে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে গলায় মেডেল পরান। এরপর নির্বাচিত ১০০০জন গিলের মিছিল বের হয় শহরের রাজপথে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি গিলের মাথায় থাকে উট পাখির পালকে তৈরি তিন কেজি ওজনের বিশাল টুপি। এই টুপির দামই ন্যূনতম এক হাজার ইউরো। বোঝাই যাচ্ছে এই মিছিলে অংশ নিতে পুরুষরা বেশ ভালমতোই খরচা করে থাকেন। তাঁদের কাছে এই মিছিলে অংশ নেওয়া রীতিমতো সম্মানের ব্যাপার।
মিছিল শেষে শুরু হয় কমলালেবু ছোঁড়া। তবে ছুঁড়লেই হবে না, তার নিয়মও আছে। এমন ভাবে এই কমলালেবু ছুঁড়তে হবে যাতে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত না হন। সারা রাস্তা কমলালেবু রসে ভিজে ওঠে। এরপর সন্ধেবেলা চলে নাচগান আর পানাহার। পরেরদিন সূর্যের আলো ফোটার আগে শেষ হয় উৎসব। বেলজিয়ামবাসীরা উৎসবের তিন মাস আগে থেকেই এই উৎসবের প্রস্তুতি হিসেবে রিহার্সাল দেন।
আরও পড়ুন: নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এই দেশে প্রেমিকাকে লাল অন্তর্বাস উপহার দেন প্রেমিক