In Depth Story on Nobel Prize in Physics: মানুষের মাথাকে ‘নকল’ করার ফর্মুলা লিখে নোবেল হপফিল্ড-হিন্টনের, জানুন সেই অসাধ্য সাধনের গল্প
Physics & Artificial Intelligence: কম্পিউটার তো শূন্য আর এক ছাড়া কিছু বোঝে না। তাহলে তারা কীভাবে কোনও ঘটনার প্রতিক্রিয়া কী হওয়া উচিত, তার কম্যান্ড দেবে কী করে? এখানেই কাজে আসে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক।
সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অর্থনীতিতে নোবেল এনেছেন অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঙালির গর্ব এরা। হবেন নাই বা কেন? নোবেল কি চাট্টিখানি কথা? বিশ্বের সেরা পুরস্কার নোবেল পুরস্কার। প্রতি বছরই নোবেল প্রাইজ কমিটি যুগান্তকারী গবেষণা বা আবিষ্কার এবং বিশ্বসমাজে বিশেষ অবদানের জন্য বাছাই করা সেরাদের এই পুরস্কার দিয়ে থাকে। তবে এ বছর সবাই চমকে গিয়েছিল যখন নোবেল প্রাইজ কমিটির তরফে ফিজিক্স বা পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এবার পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন জন জে হপফিল্ড ও জেফ্রি এভারেস্ট হিন্টন। নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে তাঁদের গবেষণার জন্য় এই সম্মান পেয়েছেন। ভাবছেন এতে অবাক হওয়ার কী রয়েছে? কারণ এই গবেষণার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, যা বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে। তবে চমকপ্রদ তথ্য কিন্তু এটা নয়। জন জে হপফিল্ড ও জেফ্রি ই হিন্টনের এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮০-র দশকে! যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তো দূর, অনেকে কম্পিউটারের ব্যবহার সম্পর্কেও ঠিকমতো জানতেন না।
বর্তমান সময়ে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) বা স্টেবল ডিফিউশনের মতো এআই (AI)র ব্যবহার প্রচুর। অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে অনেকেই জানেন না, বহুদিন আগেই এর ভিত্তি স্থাপন করে দিয়েছিলেন এই দুই নোবেলজয়ী। বর্তমানে যে নেটওয়ার্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজ করে, তার থেকে অনেক সহজ-সরল পথে তারা নিউরাল নেটওয়ার্ককে ব্যাখ্যা করেছিলেন। সেই কারণেই যখন এ বছরের নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন অনেকেই ভ্রু কুচকেছিলেন। পদার্থবিদ্যায় আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কী যোগ! কিন্তু নোবেল প্রাইজ কমিটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে বিষয়টি, কারণ পদার্থবিদ্যার ধারণা ও পদ্ধতির উপরে ভিত্তি করেই নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণা হয়েছিল।
নিউরাল নেটওয়ার্ক কী?
১৯৮২ সালে হপফিল্ড প্রথম নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত নিউরনকেই তিনি নেটওয়ার্ক হিসাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যেখানে নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি অংশ থেকে অন্য অংশে স্মৃতি নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলেই উল্লেখ করেছিলেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, মানুষের মস্তিষ্কে যেমন স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে এবং তথ্য সরবরাহ হয়, যার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি, সেই রকমই কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কও কাজ করে।
নিউরাল নেটওয়ার্কের কাজ নিয়ে আলোচনার আগে এই নিউরনের কাজ সম্পর্কে জানা দরকার। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের একক বলা হয় নিউরনকে। এই নিউরনই আমাদের মস্তিষ্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে এবং বন্টন করে। আমাদের মস্তিষ্কে এরকম নিউরনের সংখ্যা কোটি কোটি। তারা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এভাবেই বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে তাদের। যখন আমাদের মস্তিষ্ক কোনও কাজ করে, তা এই নিউরনের পাঠানো কম্যান্ড বা বার্তার উপরে ভিত্তি করেই।
কীভাবে কাজ করে মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্ক?
ধরা যাক, আপনি রাস্তায় পরিচিত এক ব্যক্তিকে দেখলেন। মস্তিষ্কে থাকা নিউরন সঙ্গে সঙ্গে বার্তা পাঠাবে যে এই ব্যক্তির নাম অমুক, তিনি তমুক জায়গায় কাজ করেন বা আপনার সঙ্গে তাঁর এই সম্পর্ক রয়েছে। নিউরনের পাঠানো এই বার্তাগুলির উপরে ভিত্তি করেই আপনার মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত নেয় যে ওই ব্যক্তিকে দেখে হাসবেন, কথা বলবেন নাকি এড়িয়ে চলে যাবেন।
অঙ্ক বড়ই জটিল!
এবার আসা যাক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অংশে। কম্পিউটার তো শূন্য আর এক ছাড়া কিছু বোঝে না। তাহলে তারা কীভাবে কোনও ঘটনার প্রতিক্রিয়া কী হওয়া উচিত, তার কম্যান্ড দেবে কী করে? এখানেই কাজে আসে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক।
আমাদের মস্তিষ্কে যেমন নিউরন স্মৃতি খুঁজে এনে, তার প্রতিক্রিয়া দিতে সাহায্য করে, একইভাবে ১৯৮২ সালে জন হপফিল্ড তাঁর গবেষণাপত্রে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তার এই গাণিতিক সমীকরণে নিউরনগুলি এমনভাবে সাজানো থাকে যে তা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে যায়। এটিই পরবর্তী সময়ে হপফিল্ড নেটওয়ার্ক নামে পরিচিত হয়।
হপফিল্ডের এই গবেষণার উপরেই আরও বিস্তারিতভাবে কাজ শুরু করেন জেফ্রি এভারেস্ট হিন্টন। হপফিল্ড যেখানে দ্বিমুখী নিউরন পয়েন্টের কথা বলেছিলেন, যেখানে এক অংশ থেকে আরেক অংশে স্মৃতি বহন করে নিয়ে যায় নিউরন, সেখানেই হিন্টন এই ইনপুট ও আউটপুটের মাঝে আরও কয়েকটি স্তর যোগ করেন, যা তথ্য সংগ্রহ ও তার বিশ্লেষণে সাহায্য করে। এখানেও ওই পরিচিত ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে গেলে, হপফিল্ডের নিউরাল নেটওয়ার্ক যেখানে শুধু এই ব্যক্তি কে, তার বার্তা পাঠায়, সেখানেই হিন্টনের মডেলে ওই ব্যক্তির পরিচয় ছাড়াও তার শারীরিক গড়ন, স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মস্তিষ্কে পাঠায়, যার ভিত্তিতে আপনি বিচার করেন ওই ব্যক্তি কেমন।
পদার্থবিদ্যার সঙ্গে যোগ কোথায়?
হপফিল্ড তাঁর গবেষণায় ‘স্পিন গ্লাস’-এর কনসেপ্টের উল্লেখ করেছিলেন। হিন্টন ও তাঁর সহযোগীরা স্ট্যাটিস্টিকাল মেকানিকস নিয়ে কাজ করেছিলেন, যা পদার্থবিদ্যারই অংশ। মেশিন লার্নিং পদ্ধতির মাধ্যমেই ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ হয়। এ বছরের রসায়নে নোবেলও গবেষণায় মেশিন লার্নিংয়ের গুরুত্বকেই তুলে ধরেছে।
এর আগে হপফিল্ড ও হিন্টন তাদের এই গবেষণার জন্য একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ২০১৪ সালে আইইইই ফ্রাঙ্ক রসেনব্লাট অ্যাওয়ার্ড পান হিন্টন, ২০২২ সালে হপফিল্ড বোল্টজ়ম্যান মেডেল পান।