AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Stock Market: শেয়ার বাজারে এটা কি সবচেয়ে বড় ‘জুয়া খেলা’?

Future & Option in Share Market: ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ 'গ্ল্যামারহীন লাস ভেগাস' বলছেন বিশেষজ্ঞ। 'আপনি যদি জুয়া খেলতে চান, ডায়বেটিস চান, হাই ব্লাড প্রেসার চান তাহলে অপশন মার্কেটে ঢুকতেই পারেন', বলছেন সেবির বোর্ড মেম্বার। ফিউচার অ্যান্ড অপশন আসলেই কি জুয়ার নতুন রূপ?

Stock Market: শেয়ার বাজারে এটা কি সবচেয়ে বড় 'জুয়া খেলা'?
| Updated on: Jul 22, 2024 | 6:51 PM
Share

যাঁরা শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত, বিভিন্নক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে থাকেন তাঁরা অবশ্যই ফিউচার অ্যান্ড অপশন ট্রেডিংয়ের নাম শুনে থাকবেন। আবার অনেকেই আছেন যাঁরা নিয়মিত ট্রেডিং করেন। যখন অপশন ট্রেডিং করা যেত না, ভারতের বাজারে বিনিয়োগ করতে গেলে বিনিয়োগকারীর কাছে দুটো রাস্তাই খোলা থাকতো। হয় বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা নাহলে নিফটি বা সেনসেক্সের মতো কোনও ইনডেক্সে বিনিয়োগ করা। ইনডেক্সে বিনিয়োগ করা অর্থাৎ, যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে তার ছোট ছোট অংশ প্রতিটা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ হয়ে যাবে। কিন্তু একবিংশ শতকে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ ডেরিভেটিভ নিয়ে আসার পরই এই ছবির বদল ঘটতে থাকে।

কিন্তু এই ডেরিভেটিভ কী? ডেরিভেটিভ আসলে একপ্রকার অর্থনৈতিক চুক্তি, যা দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে হয় এবং যার মূল্য অন্য কোনও সম্পত্তি থেকে আসে। সহজ করে বললে, ডেরিভেটভের নিজস্ব কোনও মূল্য হয় না। এই ডেরিভেটিভ দুই রকমের হয়, ফিউচার ও অপশন। যাদের একসঙ্গে F&O বলা হয়। ইতিহাসের পাতায় নথিবদ্ধ সবচেয়ে পুরানো ডেরিভেটিভের প্রমাণ পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রিসে। যার ব্যবহার করেছিলেন দার্শনিক থেলিস।

ভারতে আমার আপনার মতো অনেক সাধারণ মানুষই অপশন ট্রেডিংয়ের দিকে যেতে চায় কারণ, অপশন ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে একঝটকায় অনেক টাকা উপায় করা যেতে পারে। ঠিক যেমনটা জুয়া খেলায় হয়ে থাকে। ‘ট্রেডিং হচ্ছে উত্তেজনা’, বলছেন কলকাতার এক নামকরা শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ। ইক্যুইটাস ইনভেস্টমেন্টস কনসাল্টেন্সি (Aequitas Investment Consultancy)-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ ভাইয়ার কথায়, “ভারতে ডেরিভেটিভে বিনিয়োগ জুয়ার সমতুল্য হয়ে উঠেছে। আর এইক্ষেত্রে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ ভারতের গ্ল্যামারহীন লাস ভেগাসে পরিণত হয়েছে”।

হঠাৎ অপশন ট্রেডিংয়ের মতো ‘মারণ খেলা’য় কেন নেমে পড়ল ভারতের যুব সমাজ? করোনার সময় অনেক ভারতীয় অপশন ট্রেডিংয়ের এই হাই রিটার্ন দেখে চমকিত হয়ে যায় ও অপশন ট্রেডিংয়ের দিকে ঝুঁকতে থাকে। কারণ সেই সময় সারা বিশ্বেই সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিটের মতো সাধারণ ব্যাঙ্কিং মেশিনারিতে সুদের হার খুবই কমে গিয়েছিল। আর ঠিক এই কারণেই ২০২০ সালে ভারতে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা যেখানে ছিলও ৪.১ কোটির আশেপাশে সেখানে ২০২৩-এ সেই সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ১১.৪ কোটিতে। যদিও শেয়ার মার্কেটে এই বিপুল বিনিয়োগকারীর পদার্পণে অনেকাংশে লাভ হয়েছে ভারতীয় শেয়ার মার্কেটের। ২০২০-র ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪-র ১ জানুয়ারির মধ্যে ভারতীয় শেয়ার বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রোথ হয়েছে। আর এই বিপুল বিনিয়োগকারীর মধ্যে অনেকেই ডেরিভেটিভের দিকে ঝুঁকে পড়ে। করোনার আগে ভারতে মাত্র ৭ লক্ষ মানুষই ডেরিভেটিভে ট্রেড করত। আজকের দিনে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ।

সাধারণ শেয়ার কেনাবেচা করাকে বলা হয় ক্যাশ মার্কেট। যে কোনও দেশের উদাহরণ টানলে দেখা যাবে ক্যাশ মার্কেটের তুলনায় ডেরিভেটিভের মার্কেট ৫ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত বড় হয়। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে ক্যাশ মার্কেটের তুলনায় ডেরিভেটিভের মার্কেট প্রায় ৪০০ গুণ বড়। আর এই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা বড় অংশ কমবয়সী। কোটাক সিকিওরিটিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সহজ আগরওয়াল বলছেন, “নতুন বিনিয়োগকারীরা খুব দ্রুত ট্রেডিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন কারণ তাঁরা মনে করছেন তাঁরা গ্ল্যামারাস এই খেলায় যোগ দিতে অনেকটা দেরি করে ফেলেছেন”।

আর এই ‘মারণ জুয়া’ খেলায় ‘ফিনফ্লুয়েন্সার’রা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের ভিডিয়োয় তাদের অনেক টাকা বা উচ্চবিত্ত জীবনযাত্রা দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ইনফ্লুয়েন্স করেছে। আর আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে অর্থনোইতিক শিক্ষা এতই কম যে তারা মনে করতেই পারে, এইভাবে অপশন ট্রেডিং করেই কোটিপতি হওয়া যায়। ফলে, টিয়ার ২ ও টিয়ার ৩ শহরের অনেক বিনিয়োগকারী যারা এই ক্ষেত্রের একেবারে নতুন তারাই এই ফাঁদে পা দেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে অনেক ব্রোকারেজ কোম্পানিও এই ধরণের কাজ করে নতুন বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলার ক্ষেত্রে একটা সহযোগী ভূমিকা নেয়। তবে এত খারাপের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। ব্রোকারেজ সংস্থা জিরোধার সিইও নিতিন কামাথ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অপশন ট্রেডিং থেকে সাবধানে থাকার পরামর্শও দিয়েছেন। যদিও, এই খেলায় ইনফ্লুয়েন্সার, ব্রোকারেজ কোম্পানি ও স্টক এক্সচেঞ্জ সকলেই টাকা কামাচ্ছে। আর এতে ফায়দা হচ্ছে সরকারেরও। ২০২২ থেকে এই ধরণের লেনদেন থেকে সরকার প্রায় ২৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা কর সংগ্রহ করেছে।

ট্রেডিং করা কি উচিৎ? কলকাতার এক বিখ্যাত শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞের কথায়, “এক কথায় বলা যেতে পারে ট্রেডিং করা উচিৎ নয়। কারণ, আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিনিয়োগ করা। ট্রেডিং হচ্ছে উত্তেজনা, আর সুচিন্তিত ভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে রোজগার করার আসল জায়গা। সেটা সারা পৃথিবীতেই প্রমাণিত। শেয়ার মার্কেটের মহাতারকা বলা যায় যাঁকে, সেই ওয়ারেন বাফেট পৃথিবীর ধনীতম মানুষের তালিকায় প্রথম ১০-এর মধ্যে রয়েছেন তাঁর বিনিয়োগের মাধ্যমের উপার্জিত অর্থের মাধ্যমেই। আর তার থেকেই এটা প্রমাণিত, ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে এমন বড়লোক হওয়া যাবে না। যদিও অনেকেই মনে করে তাৎক্ষণিক কিছু উপার্জনের মাধ্যমে একটা বড়লোক বড়লোক ভাব তৈরি হবে। সুতরাং এক কথায় বলা যেতে পারে, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হচ্ছে আসল রাস্তা, সুচিন্তিত শেয়ার বাছাই করা আর একটা রাস্তা।”।

সেবির বোর্ড মেম্বার অশ্বিনী ভাটিয়ার কথায়, ‘আপনি যদি জুয়া খেলতে চান, ডায়বেটিস চান, হাই ব্লাড প্রেসার চান তাহলে অপশন মার্কেটে ঢুকতেই পারেন’। “ইয়ং জেনারেশন ট্রেডিং করতে নেমে পড়েছে শেয়ার বাজারে। এককথায় যদি বলা যায়, এটা ঠিক নয়। তার কারণ, ট্রেডিং করতে হলে পড়াশুনা করতে হয়। তাছাড়াও ট্রেডিংয়ের কিছু কায়দাকানুনও আছে। না জেনে এতে হাত লাগালে, হাত পুড়বে বলেই মনে করা যেতে পারে। যাঁরা ট্রেডিং করছেন, তাঁরা যদি না জেনে করেন তাহলে তাঁরা বিপদের সম্মুখীন হবেন”, বলছেন এক শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ।

বিঃ দ্রঃ – এটি একটি শেয়ার বাজার এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত শিক্ষামূলক প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য কখনই বিনিয়োগে উৎসাহিত করা বা মুনাফা কামানোর সহজ উপায় খুঁজে দেওয়া নয়। শেয়ার বাজারের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানানোই এই প্রতিবেদনের অন্যতম লক্ষ্য। উল্লেখ্য, শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ সর্বদাই ঝুঁকিুপূর্ণ।