TV9 Explained: টুইটার থেকে মেটা, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চলছে গণহারে ছাঁটাই, কিন্তু কেন?
Tech giants laying off: গত কয়েক সপ্তাহে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলি গোটা বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করছে অথবা নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। কেন এই পথে হাঁটছে টুইটার থেকে মেটা?
নয়া দিল্লি: ভয়ে কাঁপছে সিলিকন ভ্যালি। এই বোধহয় চলে গেল চাকরি। গত কয়েক সপ্তাহে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলি গোটা বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করছে অথবা নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। । টুইটার থেকে মেটা, সকল বড় বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে বর্তমানে একই ছবি দেখা যাচ্ছে।
স্ন্যাপ
স্ন্যাপচ্যাটের মূল সংস্থা, স্ন্যাপই প্রথম ছাঁটাইয়ের কথা ঘোষণা করেছিল। গত অগস্ট মাসে সংস্থাটি কর্মী সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ কমিয়েছে। ছাঁটাইয়ের আগে স্ন্যাপের মোট কর্মী সংখ্যা ছিল প্রায় ৬,৪০০।
অ্যামাজন
চলতি সপ্তাহের শুরুতে অ্যামাজন সংস্থা প্রায় ১০,০০০কর্মী ছাঁটাই করেছে। এর দুই সপ্তাহ আগেই, ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগ-সহ বিভিন্ন বিভাগে পরবর্তী কয়েক মাসের জন্য কর্পোরেট নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এই ছাঁটাই এবং নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছে একেবারে আচমকা। তবে, এটা শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করা হবে, না কি অন্যান্য দেশেও ছাঁটাই হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী অ্যামাজনের প্রায় ১৫ লক্ষ কর্মী রয়েছে।
মেটা
ফেসবুকের মূল সংস্থা মেটা সম্প্রতি তার মোট কর্মশক্তির ১৩ শতাংশ বা ১১,০০০-এরও বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে। সংস্থার ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের থেকে আয় বড় অঙ্কে কমে যাওয়ার পরই এই সিদ্ধআন্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুসারে, সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের সঙ্গে বৈঠকের পরই মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ এই ছাঁটাইয়ের নির্দেশ দেন। চাকরি হারানো কর্মীদের কমপক্ষে চার মাসের বেতন দিচ্ছে মেটা। মেটার ১৮ বছরের ইতিহাসে এরকম গণ ছাঁটাই আগে দেখা যায়নি।
টুইটার
বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি, ইলন মাস্ক টুইটারের দায়িত্ব নিয়েই প্রায় ৫০ শতাংশ কর্মীকে বরখাস্ত করেছেন। টেসলা সিইও টুইটার অধিগ্রহণ করার পর ছাঁটাই প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু যেভাবে গণহারে ছাঁটাই হয়েছে, তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। প্রথমে টুইটারের সিইও পরাগ আগরওয়াল, সিএফও নেড সেগাল এবং টুইটারের আইন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান বিজয়া গাড্ডেকে বরখাস্ত করেন মাস্ক। এরপর ৪ নভেম্বর কর্মীদের ইমেল পাঠিয়ে ব্যাপক হারে ছাঁটাই করা হয়েছে।
গুগল
গুগলে এখনও কোনও ছাঁটাই হয়নি। তবে, গুগলের মূল সংস্থা অ্যালফাবেট-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সুন্দর পিচাই জানিয়েছেন, ২০২২ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে এবং পুরো ২০২৩ সাল জুড়ে নিয়োগের হার কমানোর পরিকল্পনা করছে তার সংস্থা।
অ্যাপল
অ্যাপলও এখনও পর্যন্ত কোনও ছাঁটাইয়ের কথা ঘোষণা করেনি। তবে, এই সংস্থা ব্যাপক হারে নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে।
ইন্টেল
ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুসারে ইন্টেল কর্পোরেশনও হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছে। সেলস এবং মার্কেটিং-সহ ইন্টেলের বেশ কিছু বিভাগ থেকে প্রায় ২০ শতাংশ কর্মীকে ছাঁটাই করা হতে পারে।
বাইজুস এবং আনঅ্যাকাডেমি
ভারতেও, বাইজুস এবং আনঅ্যাকাডেমির মতো সংস্থাগুলিও বেশ কয়েকজন কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। বাইজুস সংস্থা সম্প্রতি ২৫০০ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে।
কেন এই গণহারে ছাঁটাই?
প্রশ্ন হল, কেন এই সংস্থাগুলি এই ভাবে ছাঁটাই এবং নিয়োগ বন্ধের রাস্তায় হাঁটছে? বস্তুত, কোভিড মহামারি এবং লকডাউনের পর তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে নিয়োগের জোয়ার এসেছিল। কারণ সেই সময় চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছিল। তাহলে এখন কী ঘটল? বিশ্লেষকদের মতে, সিঁদুরে মেঘ দেখছে সংস্থাগুলি। আগামী দিনে বড় সমস্যা আসতে চলেছে বলে আশঙ্কা করছে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলি। আর তাই ধীরে ধীরে তারা খরচ কমানোর লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কোভিড মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্ব জুড়ে এখন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ করা যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্রমে মন্দার দিকে এগিয়ে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত দুই বছরের মধ্যে, বিশ্ব জুড়ে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলির আয় এখন তার সবচেয়ে ধীর গতিতে বাড়ছে। সেই সঙ্গে কোভিড পরবর্তী সময়ে তথ্য় প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে মাত্রাতিরিক্ত হারে নিয়োগ করা হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে, যা সংস্থাগুলি এখন সংশোধন করছে। সম্ভাব্য মন্দা, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, বিজ্ঞাপনে ব্যয়-সহ এই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলিই তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে খরচ কমানোর দিকে ঠেলে দিয়েছে। আর তারই কোপ পড়ছে কর্মীদের উপর।