টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে, ৬ ডিসেম্বর শহরে ‘মাই নেম ইজ জান’
My Name Is Jaan: গত শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এসে সকলের উদ্দেশ্যে অর্পিতা জানিয়েছিলেন তাঁর এই নাটকের কথা। কারণ অনেকেই মাই নেম ইজ জান দেখার অনুরোধ রেখেছিলেন। কবে নিজের শহরে টিম অর্পিতা নজর কাড়বেন অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন অনেকেই। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ।
আর মাত্র একটা দিনের অপেক্ষা। কলকাতার বুকে নতুন রূপে আসতে চলেছে ‘মাই নেম ইজ জান: আ ট্রিবিউট টু দ্য টাইমলেস লেগাসি অফ গওহর জান’ নাটক। সদ্য জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে News 9-এর গ্লোবাল সামিটের দ্বিতীয় দিনে মঞ্চে নজর কেড়েছেন অভিনেত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর টিম। এবার ঘরের মঞ্চে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার পালা। ৬ ডিসেম্বর, জিডি বিড়লা সভাঘরে মঞ্চস্থ হবে এই নাটক। আর কিছু সংখ্যক আসন পড়ে রয়েছে। অনলাইনে মিলছে টিকিট। সেদিন অফলাইনেও মিলবে। গত শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এসে সকলের উদ্দেশ্যে অর্পিতা জানিয়েছিলেন তাঁর এই নাটকের কথা। কারণ অনেকেই ‘মাই নেম ইজ জান’ দেখার অনুরোধ রেখেছিলেন। কবে নিজের শহরে টিম অর্পিতা নজর কাড়বেন অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন অনেকেই। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ।
গওহর জানের জীবনকে ভিত্তি করে নাটক ‘মাই নেম ইজ জান’। পটভূমিকায় অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। ‘স্টুডিয়ো নাইন’-এর উদ্যোগে ২৫ অক্টোবর মুম্বইয়ের বাল গান্ধর্ব রঙ্গ মন্দির অডিটোরিয়ামে এই বছরের প্রথম শো মঞ্চস্থ হয়। উপস্থিত ছিলেন বলিউড তারকা অনুপম খের, টিভিনাইন নেটওয়ার্কের এমডি ও সিইও বরুণ দাস, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। এই নাটক ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে দর্শক মহলে। প্রশংসিত হচ্ছে বিভিন্ন মহলেও। শুধু মুম্বই নয়, কলকাতা-সহ একাধিক শহরে এবার মন কাড়তে চলেছে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের ‘মাই নেম ইজ জান’।
এই নাটকের উপস্থাপনা অন্যান্য নাটকের থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন। ‘মাই নেম ইজ জান’ গোটা বিশ্বের দরবারে দর্শকদের মন জয় করছে। নাচ, গান, অভিনয়, সূত্রধর, সবটাই একা হাতে যেভাবে সামলাচ্ছেন অর্পিতা, তা সত্যি প্রশংসার। দর্শক আসনে প্রায় ২ ঘন্টা সকলকে বসিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে টিম অর্পিতা। নাটকের মিউজিক্যাল যে জার্নি, তাও থিয়েটার দর্শকদের স্বাদ বদল করে চলেছে। যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা আরও এবার দেখার অপেক্ষায়, যাঁরা দেখেননি, তাঁরা একাধিকবার ‘মাই নেম ইজ জান’ দেখার অনুরোধ রেখেছিলেন। এবার তাঁদের জন্যই শহর কলকাতার সন্ধ্যা সেজে উঠছে গওহরের গল্প নিয়ে। ২০২১ সালে মূলত বাংলাতেই দেখা গিয়েছিল এই নাটকটি। সেবার কলকাতায় বসে এই অনুষ্ঠান দেখেছিলেন একাধিক প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বরা। দর্শক আসনে বসে পুরো অনুষ্ঠানটা দেখেন প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। নাটক তিনি বললেন, ‘আমি সবার আগে শুভেচ্ছা জানাব, আর অনেক আশীর্বাদ করব অর্পিতাকে। এই নাটকের যিনি ‘জান’, তাঁকে অনেক অভিনন্দন। এই বিষয়ে শুনেছিলাম, কিন্তু এই শো’টা যে এতটা ভাল হয়েছে ভাবতে পারিনি। কথায় আছে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’, এক জওয়ানই যুদ্ধ জিতে নিতে পারেন। সেটাই আজ অর্পিতা আরও একবার সকলের সামনে প্রমাণ করলেন। আমি এই নাটকের সকল কলাকুশলীদের শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমার কেরিয়ার শুরু নাটক থেকেই। তাই আমি জানি, মঞ্চের পিছনে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা কত বড় শক্তি। আমি আপনাদেরও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। TV9-এর বরুণকেও শুভেচ্ছা জানাই। এই ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’কে নিয়ে বরুণ যে বিশ্বভ্রমণে (গওহর জান শো ট্যুর) যাচ্ছেন, সেই প্রসঙ্গে আমি একটা কথাই বলতে চাই– বিজয়ী ভব। বিশ্বজয় করতে চলেছেন, বিশ্বজিৎ যাচ্ছেন না, তবে অর্পিতা যাচ্ছেন হাতে দেশের পতাকা নিয়ে। ভারতের নাম উজ্জ্বল করে ফিরুক, আমি এটাই প্রার্থনা করব ঈশ্বরের কাছে। তখন অর্পিতার বিয়ে হয়নি, প্রথম বাংলা ছবি করল ‘অনুপমা’, তখন থেকেই আমি ওকে চিনি। এর কিছুদিন পর ও আমাদের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য হয়ে গেল। ফলে বিয়ের আগে থেকেই আমি ওকে চিনি। তবে যে প্রতিভা আজ আমি ওর মধ্যে দেখেছি, তা আগে দেখিনি। এই যে TV9 বাংলা ওর প্রতিভাকে এভাবে সকলের সামনে তুলে এনেছে, এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি আগে কখনও এভাবে ওকে দেখিনি। গহওর জান, ওঁর বিষয় আমি বেশি তথ্য জানতাম না, আজ জানলাম। আমি আমার জীবনের প্রথম বাংলা গান লন্ডনে গিয়ে রেকর্ড করেছিলাম। তখন এইচএমভি-র রাজত্ব। সেই এইচএমভি-র প্রথম রেকর্ড গওহর জানের ছিল। আজ গওহর জানের জীবন সম্পর্ক আমি জানতে পারলাম। নাটক দেখতে-দেখতে এতটাই নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিলাম যে মাঝে মধ্যে করতালি দিয়ে উঠেছি। অর্পিতার মধ্যে কত গুণ রয়েছে, কত প্রতিভা রয়েছে, আজ সেটা দুনিয়া দেখছে। আপনারা সকলে ওর জন্য প্রার্থনা করুন, আশীর্বাদ করুন। গোটা টিমকে ধন্যবাদ জানাই, আর দর্শক, যাঁদের জন্য আমরা, তাঁদের প্রণাম।’
‘গওহর জান’-এর উপস্থাপনা, প্রোযোজনা, আলোক প্রক্ষেপণ, আবহ সঙ্গীত- সব মিলিয়ে যেন একেবারে ‘পারফেক্ট প্রোডাকশন’। অনুপম বললেন, “অর্পিতার অসাধারণ কাজ দেখে আমি মুগ্ধ। বহু দিন পরে এমন একটা কাজ দেখলাম। সহকর্মী হিসাবে আমার মনে হয়, অর্পিতা যেমন দক্ষ অভিনেত্রী তেমনই অসাধারণ সঙ্গীতশিল্পী।”
নাটক দেখে উচ্ছ্বসিত লেখক মকরন্দ দেশপাণ্ডে। বললেন, “এক কথায় অনবদ্য। শুধু একটাই জিনিস বলতে ইচ্ছে করছে– ‘মাই নেম ইজ অর্পিতা জান’। তিনি যোগ করেন, “ওঁর উপস্থিতিতে গোটা মঞ্চটাই কেমন যেন ছোট মনে হচ্ছিল। নাচ-গান-আবেগের মেলবন্ধনে মনে হচ্ছিল যা হচ্ছে তা যেন পার্থিব নয়। এমন একজনের জীবন অর্পিতা মঞ্চস্থ করছিলেন যাঁকে হিন্দুস্তানের প্রথম আওয়াজ বললেও ভুল বলা হবে না। গোটা নাটক জুড়ে অর্পিতার আবেগ, ওঁর স্ফূর্তি, ওঁর অভিব্যক্তি যেন ছাপ রেখে গিয়েছে।”
অর্পিতাকে গওহর জান রূপে দেখে TV9 বাংলাকে নাটকের সঙ্গীত পরিচালক জয় সরকার বলেছিলেন, “অর্পিতার এমন একটা পারফরম্যান্স, এটা যে দেখবে তাঁরই মনে দাগ কেটে যাবে।”
অর্পিতাকে গওহর জান রূপে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন সকলেই। অভিনেতা, অভিনেত্রীদের দিয়ে অভিনয় করিয়ে নেওয়া যাঁর কাজ অর্থাৎ পরিচালক গৌতম ঘোষ ছিলেন দর্শকাসনে। তাঁর কথায়, “অর্পিতা অসাধারণ একটা কাজ করেছে। অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ ভাবে গান গাওয়া, নৃত্য এবং অভিনয় অত্যন্ত কঠিন কাজ।”
ঋতপর্ণা সেনগুপ্ত বলেছিলেন ঋতুপর্ণা বললেন, “অসাধারণ উপস্থাপনা দেখলাম। আমার আসন্ন একটি হিন্দি ছবির ট্রায়াল ছিল। কিন্তু স্থির করে রেখেছিলাম যে ভাবেই হোক আসব। যদিও আমার আসতে একটু দেরি হয়েছে।গওহর জানের সঙ্গে আমার নিবিড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর জীবনী নিয়ে আমি অনেক পড়াশোনা করেছি। বিক্রম সম্পতের লেখা বইটিও আমি পড়েছি। তাই আরও বেশি উত্তেজিত ছিলাম অর্পিতার শো-টি দেখার জন্য। আমি মুগ্ধ এই নাটক দেখে। যেমন অসাধারণ অভিনয়, তেমন সুন্দর গান। একটা পরিপূর্ণ কাজ আমি আপ্লুত গোটা টিমের এই কাজ দেখে। আবহ সঙ্গীতও কিন্তু দারুণ ছিল। অর্পিতা, অবন্তী ও গোটা টিমকে আমার অভিনন্দন। অনেক দিন পর দেখা হল আমার পুরনো বন্ধু জুহি বব্বরের সঙ্গে। অনুপমজিও ছিলেন। খুব সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছি।”
কলকাতা আরও একবার সেই মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে চলেছে। প্রসঙ্গত, কেন ‘গওহর জান’-এর জীবনীই বেছে নিলেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়? সেই কারণ নিজেই জানিয়েছেন অভিনেত্রী। সেই ভিডিয়ো নিজের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন অর্পিতা। “এই বিষয়টি আমি বেছে নিইনি। অবন্তী এবং এই প্রোডাকশনের যিনি সৃজনশীল প্রযোজক তাঁরা দুজনে মিলে ভেবেছিলেন গওহর জানের কথা। মঞ্চে অভিনয় করার ইচ্ছা আমার বরাবরই ছিল। ‘নটীর পূজা’ নাটকটি আমি করেছি স্বপ্নসন্ধানীর সঙ্গে। তার পর মঞ্চে অভিনয় করার ইচ্ছাটা আরও বেড়ে যায়। অভিনয়ের একটা অসাধারণ মাধ্যম মঞ্চ। অভিনেত্রী হিসাবে আমার মনে হয় প্রতিটি অভিনেতার একবার মঞ্চে অভিনয় করা উচিত ভাল অভিনেতা হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য। তাই ইচ্ছাটা বরাবরই ছিল। তার পরেই অবন্তীর যোগাযোগ হয়। ও বলেছিল,”তুমি তো গানও গাইতে পারো।” তার পরেই নানা আলোচনা চলে এবং তৈরি হয় মাই নেম ইজ জান।”