Indian peace keeping force: সই করলেন রাজীব, শ্রীলঙ্কায় গেল শান্তিরক্ষী বাহিনী, ফিরে দেখা ইতিহাস

Indian peace keeping force: দেশে গৃহযুদ্ধ যখন ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে, তখন ভারতের কাছে সাহায্য় চায় শ্রীলঙ্কা। পড়শি দেশকে সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। কলম্বো যান। সেইসময় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জে আর জয়বর্ধনে। ১৯৮৭ সালের ২৯ জুলাই ইন্দো-শ্রীলঙ্কা শান্তি চুক্তি হয়। সই করেন রাজীব গান্ধী ও জে আর জয়বর্ধনে। পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন...

Indian peace keeping force: সই করলেন রাজীব, শ্রীলঙ্কায় গেল শান্তিরক্ষী বাহিনী, ফিরে দেখা ইতিহাস
কেন শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠিয়েছিল ভারত?
Follow Us:
| Updated on: Dec 04, 2024 | 10:31 PM

দেশের মধ্যে যুদ্ধের আঁচ। সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতের সাহায্য চাইল পড়শি এই দ্বীপ রাষ্ট্র। হাত বাড়িয়ে দিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। চুক্তি হল দুই দেশের। তার পর শ্রীলঙ্কায় গেল ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী (IPKF)। আড়াই বছরের বেশি সেখানে ছিল। যুদ্ধে প্রাণ গেল অনেকের। শেষ পর্যন্ত স্থিতাবস্থা ফিরল শ্রীলঙ্কায়। ভারতে ফিরল শান্তিরক্ষী বাহিনী। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসছে শান্তিরক্ষী বাহিনীর নাম। প্রশ্ন উঠছে, কোন পরিস্থিতিতে কোনও দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো যায়? চাইলেই কি কোনও দেশ অন্য দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে পারে? এইসব প্রশ্নের মাঝেই জেনে নেওয়া যাক, শ্রীলঙ্কায় ভারতের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর ইতিহাস।

আটের দশকের শুরু থেকে শ্রীলঙ্কায় বিদ্রোহের আঁচ-

আটের দশকের শুরু থেকেই সিংহলী ও তামিলদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়তে শুরু করে শ্রীলঙ্কায়। পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে সরব হয় তামিল সংগঠনগুলি। বিশেষ করে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলাম (এলটিটিই)। ১৯৭৬ সালে এলটিটিই প্রতিষ্ঠা করেন ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ। কয়েক বছরের মধ্যেই তামিল সংগঠনগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে উঠে আসে এলটিটিই।

ভারতের সাহায্য চাইল শ্রীলঙ্কা-

দেশে গৃহযুদ্ধ যখন ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে, তখন ভারতের কাছে সাহায্য় চায় শ্রীলঙ্কা। পড়শি দেশকে সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। কলম্বো যান। সেইসময় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জে আর জয়বর্ধনে। ১৯৮৭ সালের ২৯ জুলাই ইন্দো-শ্রীলঙ্কা শান্তি চুক্তি হয়। সই করেন রাজীব গান্ধী ও জে আর জয়বর্ধনে।

শ্রীলঙ্কায় গেল ভারতের শান্তিরক্ষী বাহিনী-

দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তি হওয়ার পরই দ্বীপ রাষ্ট্রে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। তবে ভারত যখন শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠায়, তখন প্রথমে ঠিক ছিল, কোনও বড় সামরিক অভিযানে অংশ নেবে না ভারতীয় সেনা। কিন্তু, কয়েকমাস পরই এলটিটিই-র সঙ্গে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায় ভারতের শান্তিরক্ষী বাহিনী।

২ বছর পর ১৯৮৯ সালে শ্রীলঙ্কা সরকার ও এলটিটিই যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা করে। ওই বছরের ২ জুন ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীকে শ্রীলঙ্কা ছাড়ার জন্য বলে সেদেশের সরকার। ওই মাসেরই ২৮ তারিখ যুদ্ধবিরতি নিয়ে শ্রীলঙ্কা সরকার ও এলটিটিই-র মধ্যে চুক্তি হয়। এলটিটিই ততদিনে ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর কাছে প্রায় হার মেনে নিয়েছিল। ১৯৯০ সালের শুরুতে ভারত শ্রীলঙ্কা থেকে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন অবশ্য রাজীব গান্ধী আর প্রধানমন্ত্রী নেই। প্রধানমন্ত্রীর আসনে তখন ভি পি সিং। শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর ১১০০-র বেশি জওয়ানের মৃত্যু হয়। জখমও হন বহু জওয়ান।

কূটনীতিকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ থামাতে ভারতের হস্তক্ষেপের একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ভারতের ঐক্য, অখণ্ডতা রক্ষা। বৃহত্তর তামিল ইলমের পরিকল্পনা করেছিলেন প্রভাকরণ। যার মধ্যে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যও পড়ত। সেই পরিকল্পনা প্রতিহত করা দরকার ছিল। দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির ফায়দা নিয়ে অন্য দেশ এই দ্বীপ রাষ্ট্রে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে পারত। তা যাতে না হয়, সেজন্য শান্তি চুক্তি করে ভারত।

কোনও দেশ কি নিজে থেকে অন্য দেশে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠাতে পারে?

অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত কোনও দেশ। গৃহযুদ্ধ বেধেছে। এমন পরিস্থিতি হলেও কোনও দেশ চাইলেই সেই দেশে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠাতে পারবে না বলে জানাচ্ছেন কূটনীতিকরা। শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য সেদেশেরও সম্মতির প্রয়োজন। আবার রাষ্ট্রপুঞ্জও খুবই কম ক্ষেত্রে কোনও দেশের অভ্যন্তরে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠায়। তাও সংশ্লিষ্ট দেশ যখন আবেদন জানায়।

আত্মঘাতী হামলায় মৃত্যু রাজীব গান্ধীর-

১৯৯১ সালের ২১ মে। তামিলনাড়ুর শ্রীপেরমবুদুরে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। হাজার হাজার মানুষের ভিড়। আর সেই জনসভাতেই আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারান রাজীব গান্ধী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সামনে পুষ্পস্তবকের মধ্যে বোমা বেঁধে পৌঁছে গিয়েছিলেন ধানু নামে এক মহিলা। লিবারেশন অব তামিল ইলম (এলটিটি)-র সদস্য ছিলেন তিনি। বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর দেহ। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় রাজীব গান্ধীর। এলটিটিই প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের নির্দেশে এই আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়।