পালার হালখাতার দিনে সুনসান যাত্রা পাড়া

রাস্তার মোড়ে যে বড় নোটিশ বোর্ড এর মত বাঁশের ফ্রেমে জ্বলজ্বল করত হাজারো নতুন যাত্রার পোস্টার। সেখানে তো ধুধু প্রান্তর। পড়ে আছে কাঠামো। আর কিছু ছেড়া পালা পোস্টার।

পালার হালখাতার দিনে সুনসান যাত্রা পাড়া
দেখা গেল না এই চেনা দৃশ্য
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 14, 2021 | 2:32 AM

প্রীতম দে: রথযাত্রা যাত্রার যাত্রা শুরুর দিন। এ দিনই নতুন পালার বায়না নেওয়ার শুভ মহরত। এদিনই একসময় খবরের কাগজে পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন বেরোতো নতুন যাত্রাপালার। চিৎ পুর চিৎ হয়ে সোজা গেছে কুমোরটুলি । মাঝে রাস্তার দুধারে হঠাৎই জগৎটা যেন বদলে যায়। ছড়া মেকআপ নেওয়া নানা রকম রঙচঙে পোশাক রঙিন হরফে লেখা নানার নাম ঘর গুলোর উপরে নামের শেষে অপেরা লেখা। যাত্রাপালা নিশ্চয়ই নতুন করে চেনাতে হবে না। বরং একবার ফিরে দেখা যাক যাত্রা পাড়ার দিকে। রথের দিন শুভ দিন একদিকে যখন দুর্গাপুজোর কাঠামোপুজো। অন্যদিকে যাত্রাপালার সারা বছরের যাত্রা শুরু। মালা দিয়ে সাজানো গেট নতুন পোস্টার দূর দূরান্ত থেকে আসা যাত্রা প্রেমীদের ভিড়। নতুন খাতা খোলা। মেকআপ ছাড়া পালার নায়ক নায়িকাদের দর্পিত আগমন উপস্থিতি অটোগ্রাফ বিতরণ। এই ছবিটাই দস্তুর।

কিন্তু একি। রাস্তার মোড়ে যে বড় নোটিশ বোর্ড এর মত বাঁশের ফ্রেমে জ্বলজ্বল করত হাজারো নতুন যাত্রার পোস্টার। সেখানে তো ধুধু প্রান্তর। পড়ে আছে কাঠামো। আর কিছু ছেড়া পালা পোস্টার। “প্রতিবছর ৬০টা করে বুকিং তো হতই। কত বছর থেকে সেটা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে। গতবার ৩০ এবারেও ৩০। গতবারও পোস্টার প্রচার ছিল না। এবারও নেই । ” মলিন হেসে জানালেন কনক ভট্টাচার্য, যাত্রাপালা সংগঠনের সম্পাদক। নিজেও অপেরা মালিক। শতাবদিরায় তাপস পালের জুটি একসময় রমরম করে চলেছে তার তত্ত্বাবধানেই। এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সেলিব্রিটিরাও। লোকাল ট্রেন চলছেনা। অনেকেই বুকিং করতে পারছেন না তাই শুধুমুধু খরচা করে পোস্টার করছেন না অপেরা মালিকরা। যাত্রা পাড়ার অন্যান্য কর্মীরাও রথের দিন নিদেন পক্ষে উপস্থিতও হতে পারেননি। বায়না তো দূর অস্ত। যেটুকু বায়না হয়েছে ফোনে ফোনে।

সাদা কাগজের বৌ,ঈশ্বরের পদচিহ্ন, দালান বাড়ীর দুর্গা বৌ, সাক্ষী শুধুই রাতের আকাশ, বিজ্ঞাপনের বৌ,ঘরে ফিরেছে দুর্গার মত পালাকার বর্তমানের গভীর রাতে উড়ো চিঠি যাত্রাপালার লেখক মেঘদূত গঙ্গোপাধ্যায় ভারী গলায় বললেন, ” করোনা কালে লকডাউনে যা অবস্থা হয়েছে ভাবা যায় না। মানুষের মনে করোনা আতঙ্ক,গণ পরিবহন বন্ধ সেই সঙ্গে পেট্রো পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে দলের বর্দ্ধিত রেট নায়েক বন্ধুদের ভাবিয়ে তুলেছে।তাঁর প্রতিফলন দেখা গেছে এই বারের রথ যাত্রায়। আমরা খুবই হতাশ। পেট্রোপণ্যের মূল্য না কমালে যাত্রা শিল্প ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একাধিক গাড়ি নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘোরা এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষাধিক মানুষের জীবন ও জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”

অপেরার প্রযোজক-পরিচালক বাপি ঘোষ জানালেন , “আমরা ভয় পাচ্ছি তাই পোস্টারও ছাপাইনি। পাছে সে টাকাও জলে যায়। ” মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রীচৈতন্য অপেরা নতুন পালা নিয়ে আসছে । অভিনয়ে একসময়ের ডাকসাইটে যাত্রা অভিনেত্রী রুমা দাশগুপ্ত। নতুন কয়েকটি পালার নামকান্না ভেজা মায়ের আঁচল আইপিএস দামিনী ভালো মেয়ের মন্দবাসা।

শুনলেও নস্টালজিক লাগে কী বলেন?