AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ফেলুদা-ফ্যানবয় অনীক প্রকট, বাকিটা? পড়ুন ‘যত কাণ্ড কালকাতাতেই’ ছবির রিভিউ

দুর্গাপুজোর সময়ে বাঙালির মগজে ঢাকের বাদ্যি বা পেটপুজোর তালিকা যতই দাপাদাপি করুক না কেন, কোন বাড়ির সম্পত্তির উত্তরাধিকার কে পেল, কোন বাড়িতে কেন ঝামেলা লাগল, দুই ভাইয়ের ভাব না ঝগড়া ইত্যাদি বিভিন্ন কৌতূহল-জনিত রহস্য সমাধানের ইচ্ছা থাকে তুঙ্গে। সম্পত্তি, উত্তরাধিকার, ঝগড়া, এই শব্দগুলোর উপর ভর করেই পরিচালক অনীক দত্ত তৈরি করেছেন তাঁর নতুন ছবি 'যত কাণ্ড কলকাতাতেই'।

ফেলুদা-ফ্যানবয় অনীক প্রকট, বাকিটা? পড়ুন 'যত কাণ্ড কালকাতাতেই' ছবির রিভিউ
| Updated on: Sep 25, 2025 | 4:08 PM
Share

দুর্গাপুজোর সময়ে বাঙালির মগজে ঢাকের বাদ্যি বা পেটপুজোর তালিকা যতই দাপাদাপি করুক না কেন, কোন বাড়ির সম্পত্তির উত্তরাধিকার কে পেল, কোন বাড়িতে কেন ঝামেলা লাগল, দুই ভাইয়ের ভাব না ঝগড়া ইত্যাদি বিভিন্ন কৌতূহল-জনিত রহস্য সমাধানের ইচ্ছা থাকে তুঙ্গে। সম্পত্তি, উত্তরাধিকার, ঝগড়া, এই শব্দগুলোর উপর ভর করেই পরিচালক অনীক দত্ত তৈরি করেছেন তাঁর নতুন ছবি ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’। এখানে ফেলুদা ফ্যান-বয় অনীক প্রকট, সেন্স অফ হিউমার উপহার দেওয়া অনীককে সতর্কভাবেই কি আড়ালে রেখেছেন পরিচালক?

অনীক কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিত্‍ রায়ের অনুরাগী। তাঁর বিভিন্ন কাজে সেই প্রভাব লক্ষ করা যায়। ‘অপরাজিত’ যখন তিনি তৈরি করেছেন, বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই পরীক্ষায় তাঁর নম্বর সবচেয়ে বেশি। তবে নতুন ছবির ক্ষেত্রে সত্যজিত্‍ রায়ের সৃষ্টি থেকে সরাসরি বেশি কিছু নেওয়ার সুযোগ ছিল না। শুধুমাত্র কিছু রেফারেন্স নিয়েছেন আর প্রধান চরিত্রের ডাকনাম তোপসে রেখেছেন পরিচালক। গল্পটার স্বাদ নিতে শুরু করুন এই লেখা থেকে। বাকিটা জানতে অবশ্যই টিকিট কাটতে হবে। কলকাতা শহরের এক আইনজীবীর বাড়ি। আইনজীবীর দুই পুত্র। এক ছেলের সঙ্গে বাবার মতবিরোধ হয়েছিল। বাড়ি ছেড়ে চলে যায় সে। পরবর্তীকালে সেই ছেলের নাতনি এসে হাজির হয় বাড়িটিতে। সে ইতিহাসের পাতার অক্ষরগুলো ভালো করে পড়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ থেকে এসেছে এই শাবা। চরিত্রটি করেছেন নওশাবা আহমেদ। তবে বাংলাদেশের মেয়ের এই শহরে একা গোয়েন্দাগিরি করা সম্ভব নয়। তাকে সঙ্গ দেয় ছবির নায়ক তোপসে। এই চরিত্রে আবীর চট্টোপাধ্যায়।

ছবির মজা হচ্ছে ধাঁধায়। ধাঁধা-বন্দি সম্পত্তি কী খুঁজে পাওয়া যাবে? দর্শক ছবির মাঝপথ থেকে নিজেরাই ধাঁধার সমাধান করতে শুরু করবেন। শেষে যখন অনুভব করবেন, তিনিও গোয়েন্দা নন মন্দ, তখন মজা পাবেন। তবে ফেলুদার গল্প বা ছবিতে কিছু ধাঁধা আছে, যা আজও বাঙালির মুখে-মুখে ফেরে। সেই ধাঁধা সমাধান করতে মগজাস্ত্রে কিছুটা বেশি শান দিতে হয়। এখানে ধাঁধা সমাধান করা অনেকটাই সহজ। ছবিতে একটা দৃশ্যে ক্লাইম্যাক্সের অনেকটা আগে ধাঁধা সমাধানের সূত্র একেবারে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। খেলাটা বরং আরও জমানো যেত। ছবির দুষ্টু লোক ধরার ক্ষেত্রেও অভিনেতার কাশি ভুগিয়েছে। দু’ একটা চরিত্রের হাবভাব দেখে সহজেই বোঝা যায়, তারা ঝামেলা পাকাবে। ছবির চিত্রনাট্যকে শেষ অবধি ‘মেলাবে-মিলিবে’ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে বলে, কিছু ক্ষেত্রে হয়তো জটিলতায় যাওয়া হয়নি। কিন্তু মগজাস্ত্র যখন প্রয়োগ করতেই হবে, পরিচালক দর্শকদের আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললে জমত বেশ! ফেলুদাকে ট্রিবিউট হিসাবে এই ছবি দেখুন। তবে ফেলুদার গল্প বা ছবির সঙ্গে তুলনা করবেন না। মছলিবাবার প্রকাশ বা উঠের পিঠে গোয়েন্দাবাহিনির মতো যেসব চিরস্থায়ী দৃশ্য রয়েছে দর্শকের মগজে, তেমন পর্যায়ের দৃশ্য এই ছবিতে রাখেননি অনীক। পরিচালক শরীর খারাপের জন্য কিছুদিন শুটিংয়ে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তার প্রভাব যে একেবারেই টের পাওয়া গেল না, তা নয়।

আবীর চট্টোপাধ্যায়কে তোপসে চরিত্রে দারুণ মানিয়েছে। তোপসে আর শাবার সম্পর্কের সমীকরণটা ভারি মিষ্টি। প্রেমে পড়া বারণ না হলেও যে সব সময়ে প্রেমে পড়ি না আমরা, অথচ ভালোবাসায় জড়িয়ে যাই, সেই বার্তা বড্ড সুন্দর করে দিলেন অনীক। আগামীতে প্রেম হবে? এই সিরিজ এগোবে কিনা, তা হলে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হয়। মিঠু চক্রবর্তী, অপরাজিতা ঘোষের মতো অভিনেত্রীরা নজর কেড়ে নিলেন। অপরাজিতার চরিত্রটি যে ছবিতে অনেকটা রয়েছে এমন নয়, তবে মনে তীব্র প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। ঋক চট্টোপাধ্যায়-রোজা পারমিতা দে-কে ইদানীং বাংলা ছবিতে দেখিনি। তাঁরা একটা তরতাজা ভাব নিয়ে এসেছেন।

দুর্গাপুজো এমন একটা সময়, যখন আমরা যা কিছু চেনা, বহুবার দেখা, তার কাছেই ফিরে যেতে ভালোবাসি। কলকাতা শহর ঘিরেও এই উন্মাদনা কাজ করে। বহু সন্ধে পার্ক স্ট্রিটে পাবে কাটানোর পরও এই ছবিতে ট্রিঙ্কাস-সুন্দরী যেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সাহেবপাড়া বা সাহেবদের সমাধির ঝলক দেখে মনে হয়, আর একটু সময় নিয়ে শহরটাকে কাল্টিভেট করলে বেশ হতো। যা কিছু নিষিদ্ধ, তার গভীরে যেতে কার না ভালোলাগে? ফেলুদা সিরিজের প্রভাবে ছবি বা কলকাতাকে কাটাছেঁড়া, সবই কিন্তু নস্টালজিয়া। ছবি দেখে বেরিয়ে এই প্রশ্নও মনে জাগে, কিংবদন্তি পরিচালক, অনীক পরিচালিত এই ছবি দেখলে কত নম্বর দিতেন? কী প্রতিক্রিয়া হতো তাঁর? এই যে ভাবনার সমুদ্রে ডুব দেওয়ার ইন্ধন, তা ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ ছবিটাই জুগিয়েছে!