Dakghar Controversy: ‘আমার ভিশন কেউ নিতে পারবে না,’ ‘ডাকঘর’ বিতর্কে শেষমেশ মুখ খুললেন ‘বাদ যাওয়া’ পরিচালক অভিষেক

Abhishek Saha: তাঁর সম্মান কাউকে ছিনিয়ে নিতে দেবেন না অভিষেক, সাফ জানিয়েছেন সেই কথা।

Dakghar Controversy: 'আমার ভিশন কেউ নিতে পারবে না,' 'ডাকঘর' বিতর্কে শেষমেশ মুখ খুললেন 'বাদ যাওয়া' পরিচালক অভিষেক
'ডাকঘর' বিতর্কে এবার মুখ খুললেন সিরিজ়ের বিতাড়িত পরিচালক অভিষেক সাহা।
Follow Us:
| Updated on: Mar 03, 2023 | 7:46 PM

তিনি কেন চুপ? এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল, তাও তিনি কেন নির্মোহ সাধু হয়ে চুপ থেকে গেলেন। টু শব্দটি করলেন না। তাই নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন পরিচালকের স্ত্রী, তথা বাংলার নামকরা অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। নিজ সন্তানের মতো লালন করে একটি ওয়েব সিরিজ়ের প্রায় সিংহভাগ শুটিং করেছিলেন তাঁর স্বামী অভিষেক সাহা এবং ডিওপি (সিনেমাটোগ্রাফার) মৃন্ময় নন্দী। সেই ওয়েব সিরিজ় স্ট্রিম করতে শুরু করেছে হইচই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। দেখা যায়, বেশির ভাগ শটই অভিষেকের নেওয়া। কিন্তু ‘ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্সের’ কারণ দেখিয়ে তাঁকে এবং মৃন্ময়কে একদিন হঠাৎই বাদ দিয়ে দেওয়া হয় সিরিজ় থেকে। সকালে উঠে জানতে পারেন শুটিং চলছে তাঁদের ছাড়াই। তাঁদের বদলে অন্য পরিচালক এবং ডিওপিকে নিয়ে আসা হয়েছে। সুদীপ্তা এবং মৃন্ময়ের দাবী অনুযায়ী, এই ঘটনার পর অনেকটা অপমানেই সিরিজ়ের সঙ্গে নিজেকে আর যুক্ত রাখতে চাননি অভিষেক। এমনকী, নামটাও নিতে চাননি। মৃন্ময়ের নাম গিয়েছে কিন্তু ডিওপি শানের (মৃন্ময়কে সরিয়ে যাঁকে দিয়ে বাকি কাজ শেষ করানো হয় সিরিজ়ের) পরে। সিংহভাগ টাকাও তাঁরা পাননি সিরিজ়ের শুটিং করে। এ সব নিয়ে মৃন্ময় পূর্বেই Tv9 বাংলার কাছে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সুদীপ্তাও তাঁদের ক্ষোভের কথা ব্যক্ত করেছেন কারও নাম না করে। এবার মুখ খুললেন অভিষেক। করলেন ফেসবুক পোস্ট:

কী লিখেছেন অভিষেক?

“নমস্কার, বন্ধু, শুভাকাঙ্খী ও মিডিয়ার সাংবাদিকদের অনুরোধে প্রথম এবং শেষবারের জন্য কয়েকটা কথা..’ডাকঘর’ নিয়ে। আমার নামে অভিযোগ, আমি চুপ কেন? আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন, আমি কথা কমই বলি, বিশ্বাস করি আমার কাজই কথা বলবে। লেখালিখির ব্যাপারেও অনীহা আছে। তবে জীবন দেখেছি অনেক। তাই আমার কাজ দিয়ে সহজসরল জীবনের কথাই বলি বারবার। আমার যে কোনো কাজে দর্শক তার পরিচয় পেয়েছেন বা আজও পাচ্ছেন। ঝগড়াঝাঁটি, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি অপছন্দ করি। অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অপমানজনক এই ঘটনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে মুভ অন করতে চেয়েছিলাম, তাই চুপ ছিলাম। আজকের পর আবার চুপই থাকতে চাই। অভিযোগ – আমি লুকিয়ে পড়েছি। না, দু’-তিনদিন কলকাতার বাইরে ছিলাম। ফোনে নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেট ভাল ছিল না। আপাতত শহরেই আছি, নিজের বাড়িতেই আছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত নই। যাঁরা আমার সোশ্যাল মিডিয়া ফলো করেন, তাঁরা জানেন। অনর্গল অনেক কথা বলতে না চাওয়ার মানে লুকিয়ে পড়া নয়। অভিযোগ – ১৪ দিন শুটিংয়ের সুযোগ পেয়েও আমি গল্প দাঁড় করাতে পারিনি। বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের, মানে, বাংলার পরিচালক/ প্রযোজকদের এই যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে। এত কম সময়ে এত কম বাজেটে এত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করতে হয় যে নিজেদের অসহায় লাগে খুব। যেহেতু এর থেকে বেরনোর কোনো উপায় আপাতত নেই, তাই প্রযোজক/পরিচালকরা আজকাল এমন বিষয় বা গল্প বাছেন, যাতে খুব কম সময়ে অনেক কম্প্রোমাইজ় করেও মোটামুটি গল্পটা দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায়। ‘ডাকঘর’ তেমন গল্প ছিল না। পদ্মনাভ এত ভাল স্ক্রিপ্টটা লিখেছিলেন, এত সুন্দর সব মুহূর্ত ছিল সেই স্ক্রিপ্টে, যার প্রতি জাস্টিস করে ১৬০ মিনিটে গল্পটা বলতে গেলে ১৪ দিনের কিছু বেশি সময় চাই আমার, শুরুতেই বারবার আর্জি জানিয়েছিলাম চ্যানেলের কাছে। তাঁরা রাজি হননি, বাজেটের কারণেই নিশ্চয়ই। প্ল্যান করেছিলাম, আমরা তাহলে দুটো ক্যামেরায় শুট করি, একটা বড়, একটা ছোট, কম সময়ে বেশি কাজ যাতে তুলতে পারি। সেই মত বাজেটও ধরা হয়। বাজেট পাশও হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ক্যামেরা আমাদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রথম থেকেই অনেক সময় নষ্ট হয়। শিডিউল অনুযায়ী কাজ তুলতে পারছিলাম না। তখনও অনুরোধ জানিয়েছিলাম, এই শুটটা এইভাবে হবে না, প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল দিতে পারব না। প্রযোজকের আরও বেশি আর্থিক ক্ষতি হওয়ার আগে হয় এখানেই বন্ধ করা হোক এটা, অথবা কিছু শট অন্তত ছোট ক্যামেরায় নিতে দেওয়া হোক। যাতে গল্পটা ঠিক করে বলার জন্য এত কম সময়ে প্রয়োজনীয় শটগুলো নিতে পারি। দ্বিতীয় ক্যামেরা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও, লোকেশন থেকে বারবার ফোনে চ্যানেলকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও আমাদের দ্বিতীয় ক্যামেরায় শট নিতে দেওয়া হয়নি। ছোট ক্যামেরার ভাড়া শুধু-শুধু দেওয়া হচ্ছে দেখে আমি প্রযোজককে অনুরোধ করি ওই ক্যামেরা কলকাতায় ফেরত পাঠিয়ে দিতে। অকারণ খরচ কিছুটা কমানো যাবে, এই আশায়। শুটটা বন্ধও করা হয়নি। হইচই কর্তৃপক্ষ ফোনে আশ্বাস দিয়েছিলেন, “করো করো, হয়ে যাবে, হয়ে যাবে, আমরা আছি।” এত কম সময়ে, এত দুর্যোগ ও প্রোডাকশনাল ইস্যু সামলে আমাদের ভিশন মতো শুট করতে পারিনি শেষমেশ, জানিয়েছিলাম তাঁদের। তবে তখন ‘আমরা আছি’ বলা বন্ধুদের আর খুঁজে পাইনি। আমরা থেকে আমি হয়ে গেছিলাম ততদিনে। পরে অবশ্য আমার অবর্তমানে এবং অগোচরে যে এক্সট্রা শুটিং বা প্যাচ শুটিং হয়, তার জন্য আরও সাত দিন সময় এবং দ্বিতীয় ক্যামেরাও দেওয়া হয়েছিল শুনেছি। সেখানে আমি এবং আমার সিনেমাটোগ্রাফার মৃন্ময় নন্দী ছিলাম না। সুতরাং, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আমরাই দ্বিতীয় ক্যামেরা ব্যবহারের যোগ্য ছিলাম না, ধরে নিচ্ছি। যদিও আমার বিশ্বাস, এক্সট্রা সময় পেলে এর চেয়ে কমদিনেই বাকি কাজটা করে ফেলা যেত, আগে থেকে সম্মত হলে। তাতে আমার প্রযোজকের কিছুটা ব্যয় হয়তো কম হত। অভিযোগ – আমি শুটিং শেষ করে এডিটের অপেক্ষা না করেই লন্ডন চলে যাই। প্রথমত, লন্ডন আমি বেড়াতে যাইনি, প্রফেশনাল কমিটমেন্ট ছিল। দ্বিতীয়ত, লন্ডন যাওয়া রাতারাতি হয় না। টিকিট, ভিসা, কনট্র্যাক্ট ইত্যাদি পুরো প্রসেসটা হতে মাস ২-৩ সময় লাগে। আমার ক্ষেত্রেও লেগেছিল এবং আমাদের টিমের প্রত্যেকেই এবং চ্যানেল কর্তৃপক্ষও আগে থেকেই জানতেন আমি কবে যাচ্ছি। বাজেট ফিক্সিং, শিল্পীদের কম্বিনেশন ডেটস পাওয়াও আরও কিছু কারণে আমাদের শুটিং ডেটস বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় দুটো ঘটনা পরপর ঘটে। এর কোনওটাতেই আমার হাত ছিল না। তৃতীয়ত, এডিটের অপেক্ষা একদিনে শেষ হয় না। যে কোনও টেকনিক্যাল লোকই জানেন। ১৩/১৪ দিনের শুট মেটেরিয়াল জড়ো করে বেসিক টাইমলাইন সেট করতেই কমপক্ষে ৮/১০ দিন লেগে যায়। এডিটের আসল কাজ তারপর শুরু হয়। আমার অত্যন্ত ভরসার, তিনবার ফিল্মফেয়ারপ্রাপ্ত এডিটর সুজয় দত্তরায়কে সবটা বুঝিয়ে, এডিটের দায়িত্ব দিয়ে আমি লন্ডন যাই আমার প্রি কমিটমেন্ট রাখতে এবং সকাল বিকেল ফোনে যোগাযোগে থাকি এডিটরের সঙ্গে। প্রাথমিক এডিট শেষ হওয়ার আগেই আমি ফিরে আসি, ফেরার তারিখও আগে থেকেই ঠিক ছিল। চতুর্থত, আমি সেই মুহূর্তে লন্ডনে না পৌঁছলে অন্য একটা বাংলা ছবির শুটিং আটকে যেত। সেই ছবির পরিচালক, প্রযোজক বিপদে পড়তেন। একজন পেশাদার হিসেবে সজ্ঞানে সেটা করা সম্ভব ছিল না আমার পক্ষে। অভিযোগ – আমি পালিয়ে গেছি আমার কাজ ছেড়ে, চুপচাপ কেটে পড়েছি। না, কাজের সঙ্গেই ছিলাম। লন্ডন থেকে ফিরেই মিটিংয়ে বসি। শুটিংটা হইচই কর্তৃপক্ষের মন মতো না হওয়ায় টিমের সঙ্গেই প্ল্যানিং করছিলাম কীভাবে সেটাকে সঠিক জায়গায় আনা যায়। তার জন্য কী-কী করতে হবে, কোন-কোন শট নিতে হবে, এই সব নিয়ে। সেই প্ল্যান শেয়ারও করেছিলাম চ্যানেলের সঙ্গে। প্যাচ শুট নিয়ে আমার প্রধান অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক, সুহোত্র, দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে কথাও হয়। সে কথা তাঁরা আজ স্বীকার করবেন কি না জানি না। পালিয়ে যেতে চাইলে এই প্ল্যান বাস্তব করার জন্য সবার সঙ্গে নিজে যোগাযোগ করতাম কি? যাই হোক, তারপর সব চুপ। আমি ক্রমাগত প্রযোজকের থেকে জানতে চাই কী হচ্ছে, কবে হচ্ছে। তিনি প্রতিবারই বলেন যে, চ্যানেল এখনও তাঁকে কিছু জানায়নি। বেশ কিছুদিন এইভাবে কেটে যায়। ক্রমশই প্রযোজক এবং হইচই কর্তৃপক্ষ আমার ফোন ধরা বন্ধ করে দেন। এ দিকে আশপাশ থেকে খবর আসে মিটিং হচ্ছে, অথচ আমার প্রযোজক বা হইচই কর্তৃপক্ষ আমাকে কেউ কিছু জানাচ্ছেন না। আমি আবার ফোন করি, কেউ তোলে না। কিছুদিন পর খবর পাই, ‘ডাকঘর’-এর প্যাচ শুট শুরু হচ্ছে, আমাকে না জানিয়েই। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। মৃন্ময়কে জিজ্ঞাসা করি, দেখি সেও কিছু জানে না। খবর নিয়ে জানতে পারি, সত্যিই শুটিং হচ্ছে। আমার সীমিত বুদ্ধি আর এক্সপেরিয়েন্স থেকে আন্দাজ করতে পারি কী ঘটছে। অপমানিত বোধ করি। আরও অপমানিত না হতে হয়, এই আশঙ্কায় ফোন করা বন্ধ করি। প্যাচ শুটিং শুরুর কয়েকদিন আগে প্রযোজক পথিকৃৎ সেনগুপ্ত ফোনে জানান যে শুট হচ্ছে, আমাকে ছাড়া, মৃন্ময়কে ছাড়া। আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। নিজের সন্তানকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলে যেমন মনে হয়, আমার ঠিক তেমন লাগে। একদম চুপ করে যাই আমি। আত্মসম্মান বজায় রাখতে চুপ করে যাওয়াকে কি পালিয়ে যাওয়া বলে? চুপচাপ কেটে পড়া বলে? তাহলে তাই। জানিনা, আমার প্রযোজক ও হয়তো বাধ্য হয়েছিলেন এই কাজে সায় দিতে। অনেক টাকা ইনভেস্ট করে ফেলেছিলেন। তাঁর এক্ষেত্রে হাত-পা বাঁধা ছিল বলেই আমার ধারণা। অন্তত নিজের মনে সেটাই বিশ্বাস করতে চাই। আশা করব মৃন্ময় নন্দীর প্রাপ্য বাকি টাকাটাও তিনি দিয়ে দেবেন। অভিযোগ – চ্যানেল আমার উপর ভরসা করতে পারেননি, তাই অন্য পরিচালককে দিয়ে বাকি শুটিং করিয়েছেন। না-ই করতে পারেন। সেই অধিকার তাঁদের আছে, কারণ প্রোডাক্টটা ফাইনালি তাঁদের। তাঁদের প্ল্যাটফর্ম খুবই জনপ্রিয়। আমি নগণ্য পরিচালক। লোকে বোধহয় খুব একটা চেনেনও না আমাকে। নামও জানেন না আমার। ওদের স্টেক অনেক বেশি। আমাকে বাদ দিতেই পারেন। আমাকে সে কথা অফিশিয়ালি জানাতে পারতেন তাঁরা। আমার সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে কথা বলে ওখানেই নিষ্পত্তি করে নিতে পারতেন ব্যাপারটা। করেননি। পারিশ্রমিকের প্রসঙ্গ আর নাই বা তুললাম। শুরুতে কিছু টাকা পেলেও, যে কাজটা নিজে হাতে শেষ করার সুযোগ পেলাম না, তার জন্য পারিশ্রমিক চেয়ে কী হবে? অভিযোগ – আমার পরিচালনায় মৃন্ময় নন্দীর শুট করা মেটিরিয়াল এত খারাপ, এত জঘন্য ছিল যা চোখে দেখা যায় না। তাই প্রযোজককে সব ফেলে দিয়ে ‘রিশুট’ করতে হয়। প্যাচ শুট মানে কিছু অংশ শুট, আর রিশুট মানে পুরোটা নতুন করে শুট। ‘ডাকঘর’ আমার দেখা হয়নি। তবে ইন্টারনেটে ট্রেলার, গানের অংশ, দৃশ্যের অংশ, শুটয়ের স্টিল ছবি যেটুকু যা আজ অবধি চোখে পড়েছে, তার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ শুট আমার পরিচালনায় মৃন্ময় নন্দীরই শুট করা। তার মানে ‘রিশুট’ হয়নি। আমাদের নেওয়া জঘন্য সব শট রেখেই কিছু এক্সস্ট্রা শট নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ – আমি অন্য কাজে লন্ডনে থাকার জন্যই চ্যানেলের নির্দেশে আমার অবর্তমানে পরের শুটিংটা করে নিয়েছেন প্রযোজক। আমি লন্ডন থেকে ফিরে আসি ৬ জুন, ২০২২। তারপর একাধিক মিটিং ও এডিটিংয়ে সশরীরে উপস্থিত ছিলাম আমি। হঠাৎ সবকিছু চুপচাপ হয়ে যাওয়ার আগে অবধি। পরের শুটিংটা হয়েছিল অগস্ট মাসে, মানে আমার ফিরে আসার দু’ মাস পর। আর ৭ জুন ২০২২ থেকে আজ অবধি আমি দেশেই আছি। বাকিটা আপনারা বুঝে নেবেন আশা করি। অভিযোগ — আমি বলেছি আমার নাম দিতে চাই না। বলেছি, তবে নিজে থেকে যেচে কিছু বলিনি। আমাকে আনএথিক্যালি সরিয়ে দিয়ে, আমাকে দিনের পর-দিন অপমান করে, আমার সিনোমাটোগ্রাফার ও এডিটরকে বাদ দিয়ে, এডিট সুইট থেকে পুরো মেটিরিয়াল তুলে নিয়ে গিয়ে, পুরো পুরো পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ আমার অবর্তমানে সেরে ফেলে, হঠাৎ প্রযোজক একদিন আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার নাম কীভাবে দেবে?” আমার সীমিত এবং ছোট কেরিয়ারে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি কখনও। কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। তাৎক্ষণিক ঘোর কাটিয়ে বলি, “ছেড়ে দাও, আমার নামটা দেওয়ার দরকার নেই।” উনি সঙ্গে সঙ্গে বলেন, “তাহলে ইমেইলে একটা NOC দিয়ে দাও”। আমি দিয়ে দিই। ব্যস্, এই পর্যন্তই। অভিযোগ – ট্রেলার রিলিজ় হতে কিছু বলিনি, এখন কেন বলছি? আমি তখনও কিছু বলিনি। এখনও কিছু বলতে চাইনি। তখনও চুপ ছিলাম, এখনও চুপ করেই থাকতে চেয়েছিলাম। এই প্রসঙ্গ থেকে অনেকদিন আগেই নিজেকে কষ্ট করে সরিয়ে এনেছিলাম। আমরা এত জঘন্য কাজ করেছি যে সব ফেলে দিতে হয়েছে, পুরোটা নতুন করে করতে হয়েছে, এসব শুনে খারাপ লেগেছে। নিজেকে কী করে আরও বেটার করা যায়, যাতে পরের কাজটা আরও ভালো করে করতে পারি, সেই চিন্তায় ডুবিয়ে দিয়েছিলাম নিজেকে। সিরিজ় স্ট্রিমিং হতেই এর সঙ্গে যুক্ত অনেকে জানাতে থাকেন যে, গোটা সিরিজ়ের বেশির ভাগ শটই আমাদের নেওয়া। মানে, যে গল্প দেখে দর্শক আপ্লুত হচ্ছেন, তার বেশির ভাগটাই আমার বলা গল্প, যে ভিজ়ুয়াল দেখে মানুষ এত প্রশংসা করছেন, তার প্রায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি আমার পরিচালনায় মৃন্ময় নন্দীর নেওয়া শট থেকে তৈরি, যেগুলো চ্যানেলের ভাষায় ‘জঘন্য ছিল। শট নেওয়ার সময় ক্লিপের উপর শুটিংয়ের তারিখ এবং টিসি থাকে। কেউ প্রমাণ চাইলে অরিজিনাল থেকে সে সব দেখে নেওয়া যেতে পারে। আমাদের করা কাজ তার মানে ফাইনালি ফেলে দেওয়া হয়নি। তাতে কিছু মেরামত করা হয়েছে মাত্র। একটা ফার্নিচার দেখতে ভাল লাগলে কাঠুরেও খুশি হয়, ছুতোরও খুশি হয়, শেষ চারটে পেরেক মারা মেরামতি মিস্ত্রিও খুশি হয়। তাতে দোষ কোথায় ? খুশি তো ভাগ করলে বেড়ে যায়, ছোটবেলায় পড়েছিলাম। সবার পরিশ্রমের ফসল ‘ডাকঘর’ দর্শকের ভাল লাগছে, আমি তাতে খুশি। ভেবে ভাল লাগছে যে, এর মধ্যে আমার অবদান আছে অনেকটাই। খুব খুশি সুহোত্রকে নিয়ে এত হইহই দেখে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষই যদিও ওর নাম প্রথমে সাজেস্ট করেন, তবে পরে বেঁকে বসেছিলেন। বারবার চাইছিলেন কোনও স্টার অভিনেতাকে নেওয়া হোক। সুহোত্র বাদই পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি ততদিনে ওর মধ্যে ‘দামোদর’কে দেখে ফেলেছি। অনেক লড়ে ফাইনালি সবাইকে রাজি করাতে পারি ওকে নিতে। ‘ডাকঘর’ এত মানুষ দেখছেন আর এত লোকের ওকে ভাল লাগছে, এবার নিজ গুণেই ও স্টার অভিনেতা হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতের পথ মসৃণ হচ্ছে ওর। আমার ভিশন তার মানে একেবারে ফেলে দেওয়ার মত ছিল না। তবে আমি আগেও কিছু দাবি করিনি, এখনও করছি না। আপাতত দাবি একটাই – মৃন্ময়ের প্রাপ্য টাকাটা দিয়ে দেওয়া হোক। অভিযোগ – আমি মেঘের আড়ালে দাঁড়িয়ে বাণ ছাড়ছি। আমি ইন্দ্রজিৎ নই। কোনও কিছুই তেমন জিততে পারিনি, আমার দর্শকের আশীর্বাদ ও ভালবাসা ছাড়া। ও হ্যাঁ, আমার প্রথম বাংলা ছবি ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ইন্ডিয়ান প্যানোরামা’ সেকশনে অফিশিয়ালি সিলেক্টেড ছিল। একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও জিতেছে। তবে সেটা আমার একার জয় নয়। গোটা টিমের জয়। ‘উড়নচণ্ডী’ সিনেমার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটা মানুষের জয়। আমার কাজই আমার পরিচয় হোক, অন্য কিছু নয়। আমার কথাগুলো বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করার পুরো দায়িত্ব আপনাদের দেওয়া রইল। এই প্রসঙ্গে হয়ত আবার কিছু যুক্তি, পাল্টা যুক্তি, আসবে, আরও বেশি করে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হবে। আমি আর থাকতে চাই না তার মধ্যে। আশা করি আমাকে মুক্তি দেবেন সে সব নোংরামি থেকে। শাসকরা সবসময় দলে ভারী হন। অনেক মানুষের টিকি বেঁধে রাখার ক্ষমতা তাঁদের থাকে যে। আর টিকিধারিরা শাসকের হয়েই কথা বলেন যুগযুগ ধরে, অথবা চুপ থাকেন। খবরের কাগজ খুললে রোজ তাই-ই তো দেখি। তাই আমি বিস্মিত নই একেবারেই। ওরা আমার কাজ নিয়ে নিক, আমার নাম নিয়ে নিক, অসুবিধা নেই। আমার ভিশন কেউ নিতে পারবে না। আর আমার সম্মান কাউকে নিতে দেব না। আমি লেখক নই, ভাল বক্তাও নই। এতগুলো কথা গুছিয়ে বলতে/লিখতে অনেক সময় লেগে গেল। হয়ত আরও কিছু কথা বাকিও থেকে গেল। জানি না, এখন মনে পড়ছে না। এইটুকু লিখতে যাঁরা সাহায্য করলেন, সেইসব বন্ধুদের আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। ‘ডাকঘর’-এর সঙ্গে জড়িত সমস্ত অভিনেতা ও কলাকুশলী, যাঁরা এই কাজে আমার সঙ্গে ছিলেন এবং যাঁরা এখন আর আমার সঙ্গে নেই, তাঁদের সকলকে অনেক ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকুন। ‘ডাকঘর’ দেখুন। হইচই প্লাটফর্মে চলছে।