Box Office Clash: ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে একে অপরকে ‘জমি ছাড়তে’ কতটা রাজি বাংলার প্রথম সারির প্রযোজকরা?
প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলার প্রথম সারির প্রযোজকদের পছন্দ কী? কী বলছে টলিউডে এই মুহূর্তে রাজত্ব চালানো তিন প্রধান প্রযোজনা সংস্থাঃ এসভিএফ, সুরিন্দর ফিল্মস ও উইন্ডোজ? জায়গা ছাড়ার 'কনসেপ্ট'কে সমর্থন করছেন ওই তিন হাউজের কর্ণধাররা? খোঁজ নিল TV9 বাংলা...
বিহঙ্গী বিশ্বাস: ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’, নাকি ‘সবে মিলি করি কাজ’…? অন্য প্রযোজনার সংস্থার সঙ্গে যাতে ডেট ক্ল্যাশ না করে সেই কারণে নিজের হাউজের ছবি মুক্তির ডেট পিছিয়ে দেওয়া নাকি নিজেদের নেওয়া সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে বসে থাকা? ‘আ দেখে জরা, কিস মেঁ কিতনা হ্যায় দম’ নাকি ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর তাগিদে একজোট হয়ে কাজ…? প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলার প্রথম সারির প্রযোজকদের পছন্দ কী? কী বলছে টলিউডে এই মুহূর্তে রাজত্ব চালানো তিন প্রধান প্রযোজনা সংস্থাঃ এসভিএফ, সুরিন্দর ফিল্মস ও উইন্ডোজ? জায়গা ছাড়ার ‘কনসেপ্ট’কে সমর্থন করছেন ওই তিন হাউজের কর্ণধাররা? খোঁজ নিল TV9 বাংলা…
তার আগে একটু বলিউডের দিকে তাকানো যাক। বক্সঅফিসের গোলমেলে অঙ্কের কথা মাথায় রেখেই বলিপাড়ার তাবড় দুই পরিচালক যুদ্ধ এড়িয়ে সন্ধির পথ বেছে নিয়েছেন সম্প্রতি। দুই পরিচালক অর্থাৎ ‘বাহুবলী’ পরিচালক রাজামৌলি ও ‘বাজিরাও মস্তানি’র স্রষ্টা সঞ্জয় লীলা বনশালী। সঞ্জয়ের পরিচালিত ‘গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’ ও রাজামৌলির ছবি ‘আরআরআর’ নিয়ে দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা তুঙ্গে। আগামী বছর জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ওই দুই ছবিরই। গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল জানুয়ারির ৬ তারিখে। অন্য দিকে, রাজামৌলির ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে ৭ জানুয়ারি। দুই ছবির কোনওটাই যাতে বক্স অফিসে মার না খায়, তাই কাউকে না কাউকে মুক্তির দিন পিছতেই হতো। পিছবে কে? এগিয়ে এলেন সঞ্জয়। ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে নিজের ছবি ‘গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’র ডেট পিছিয়ে দিয়ে তিনি করলেন ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ। দেরি হল ঠিকই, কিন্তু ওই যে বক্সঅফিস বড় দায়!
টলিউডেও কি এমনটা হয় বা হয়েছে কোনওদিন? কী বলছেন মহেন্দ্র সোনি (এসভিএফ) নিশপাল সিং রানে (সুরিন্দর ফিল্মস) ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের (উইন্ডোজ) মতো বিগ হাউজের প্রযোজকরা? তাঁরা জায়গা ছাড়া কনসেপ্টে আস্থা রাখেন নাকি চুলবুল পাণ্ডের মতো বলে ওঠেন, ‘একবার ম্যায়নে যো কমিটমেন্ট করদি, উস্কে বাদ খুদকা ভি নহি শুনতা’… !
প্রশ্ন আসতেই যেন লুফে নিলেন শিবপ্রসাদ। TV9 বাংলাকে বললেন, “হয়েছে, এমনটা তো হয়েছে। উইন্ডোজের সঙ্গেই হয়েছে।” কোন ছবির ক্ষেত্রে? শিবপ্রসাদের উত্তর, “পুজোর সময় রিলিজ হওয়ার কথা ছিল ‘বেলাশুরু’র, পিছিয়ে দিয়েছিলাম কারণ ‘গুমনামী’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। ‘রসগোল্লা’ পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল ‘শাহজাহান রিজেন্সি’র জন্য। ‘শাহজাহান রেজেন্সি’র জন্য ‘কণ্ঠ’র মুক্তি পিছিয়ে দিয়েছিলাম।”
প্রসঙ্গত, ‘গুমনামী’, ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ এই দুই ছবিই প্রযোজিত হয়েছে এসভিএফ প্রযোজনা সংস্থা থেকে। তাঁর কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি বলিউডের এই ছবি পিছিয়ে দেওয়ার কনসেপ্টের সঙ্গে কতটা সহমত? তাঁর কথায়, “একেবারেই সহমত। ‘আরআরআর’ আর ‘গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’ দুই ছবিই দর্শক টানার ক্ষমতা রাখে। প্রযোজক হিসেবে তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আমিও সহমত। বিগবাজেটের দু’টি ছবি যদি আলাদা দিনে মুক্তি পায়, সেক্ষেত্রে লাভ তো ইন্ডাস্ট্রিরই। দু’টি ছবিই গুরুত্ব পাবে। দর্শককে আবারও হলমুখী করবে। দর্শককেও কোনটাকে বাছব এই ডিলেমার মধ্যে পড়তে হবে না।” এসভিএফের ক্ষেত্রেও যদি এমনটা হয়, অন্য প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে তারিখ ক্ল্যাশ করলে পিছতে হয়, তারাও কি পিছতে রাজি হবে? প্রযোজনা সংস্থার তরফে উত্তর এল, “হ্যাঁ, ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে, দরকারে এমনটা নিশ্চয়ই করা হবে। কেন নয়?”
আর সুরিন্দর? নিসপাল সিং রানে জানাচ্ছেন, প্রতিটা ছবি মুক্তির আগে কোর টিমের সঙ্গে ডেট নিয়ে বিস্তর প্ল্যানিং চলে তাঁর প্রযোজনা সংস্থার তরফে। ক্ল্যাশ এড়াতেই এই প্ল্যানিং। তাঁর বক্তব্য, “বলিউডের মতো আমরা কিন্তু হুটহাট করে রিলিজ করে দিই না। আগে পিছনে অন্যান্য সংস্থার কী-কী ছবি রয়েছে, সব কিছু ভাবনা-চিন্তা করেই আমরা ছবি মুক্তির দিন ঘোষণা করি। ” হেসে বললেন, “এখানে আমরা সবাই বন্ধু।”
কিন্তু পুজোর বা ক্রিসমাসের সময়? একই সঙ্গে বিভিন্ন হাউজ থেকে মুক্তি পায় অনেকগুলো ছবি। সেখানেও কি এই ‘প্ল্যানিং’ কার্যকরী হয়? নিসপালের কথায়, “ফেস্টিভ্যালের সময় আলাদা। তা-ও একটা প্ল্যানিং থাকেই। আমাদের এখানে তো লিমিটেড স্ক্রিন, তাই প্ল্যান করে না চললে সবারই অসুবিধে হবে।” অন্য দিকে, একই সঙ্গে ছ’-সাতটা ছবি যেখানে মুক্তি পাচ্ছে, সেখানে ছবি রিলিজ করার পক্ষপাতী নয় উইন্ডোজ। শিবপ্রসাদ যোগ করলেন, “একসঙ্গে ছ’-সাতটা ছবি যেখানে মুক্তি পাচ্ছে, সেখানে উইন্ডোজ ছবি রিলিজ করে না। আমরা যে ২০২৩-এর ক্রিসমাসে আসব, তা কিন্তু অনেক আগে থেকেই বলে দিয়েছি যাতে বাকিরা সেই বুঝে প্ল্যানিং করতে পারে।”
লড়াই রয়েছে, রয়েছে টক্কর, তা সত্ত্বেও ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে একই দিনে ভিন্ন ভিন্ন প্রযোজনা সংস্থা থেকে বিগবাজেট ছবি মুক্তি পেয়ে যাতে বক্সঅফিসে ‘মার’ না খায়, তা নিয়ে টলিউডেও রীতিমতো চলে ‘গবেষণা’, প্রয়োজনে একে অন্যকে জায়গা ছাড়তেও দ্বিধাবোধ করেন না তাঁরা, বলছেন নিজেরাই। সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে এই সৌজন্য ‘বিরল’ নয় তবে?