মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা আগে উত্তমকে ফোন তরুণ কুমারের, ভাইয়ের কথা শুনে আবেগে কণ্ঠরুদ্ধ দাদার! কী বলেছিলেন বুড়ো?
সেই সময় 'ওগো বধূ সুন্দরী' ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন উত্তম। চলছিল শেষপর্যায়ে শুট। কিন্তু দাদার সঙ্গে সেই ফোন বার্তালাপই যে শেষকথা হবে তা আন্দাজও করতে পারেননি তরুণ কুমার। নিয়তি তো অন্য কিছুই লিখেছিল।

উত্তম কুমার অনেক সাক্ষাৎকারেই বলতেন, তরুণ কুমার জাত অভিনেতা। এমনকী, ভাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে মহানায়ক বলতেন, তাঁর থেকেই নাকি ভাল অভিনয় করেন তরুণ। আর সেই কারণেই, উত্তম বেশিরভার সময়ই অভিনয়ের জন্য তরুণের সঙ্গে আলোচনায় মাততেন। উত্তম বারবারই বলতেন, ভাই তরুণই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সমালোচক। আর সেই কারণেই যখন মুম্বইতে (তখন বম্বে) পা রাখেন উত্তম, তখন সিনেমার অন্যান্য কাজগুলোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন তরুণ কুমারের কাঁধে।
সালটা ১৯৮০। ২২ জুলাই। উত্তম কুমার অভিনীত ‘প্লট নাম্বার ৫’ ছবির সত্ত্ব কেনার জন্য এক প্রযোজককে সঙ্গে মুম্বই গিয়েছেন তরুণ কুমার। উত্তমই তাঁকে এই গুরু দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ছবিটা দেখার পর, সোজা হোটেল রুমে ফিরেই তরুণ ফোন করলেন উত্তমকে। দুটো রিং হতেই ফোন ধরলেন মহানায়ক— কীরে বুড়ো (তরুণ কুমারকে এই নামেই ডাকতেন উত্তম) প্রযোজকের ছবিটা পছন্দ হল? তরুণ কুমার, দাদা ছবিটা অসাধারণ। তোমার অভিনয়ও। একেবারে নতুন ধরনের ছবি। এই ছবি বলিউডকে নাড়িয়ে দেবে দেখে নিও। তোমার ছোটি সি মুলাকাতের ফ্লপ হওয়ার দুঃখও দূর করে দেবে। ভাইয়ের মুখে এমন কথা শোনায়, উত্তম যেন কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে পড়লেন, কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, সত্যি বলছিস! তুই জলদি কলকাতায় আয়…সাক্ষাতে সব বিস্তারিত শুনব। এখন শুটিংয়ের জন্য বের হতে হবে রে।
সেই সময় ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন উত্তম। চলছিল শেষপর্যায়ের শুট। কিন্তু দাদার সঙ্গে সেই ফোন বার্তালাপই যে শেষকথা হবে তা আন্দাজও করতে পারেননি তরুণ কুমার। নিয়তি তো অন্য কিছুই লিখে রেখেছিল।
সেদিন হঠাৎ করেই মুম্বইয়ের আকাশে ঘনমেঘ। তুমুল বৃষ্টি। ফলে মুম্বই থেকে কলকাতা আসার প্লেন উড়ল অনেক দেরিতে। সন্ধ্যায় নামার বদলে, কলকাতায় প্লেন এল অনেক রাতে। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে উঠেই ক্লান্তিতে চোখ বুজে এল। ইচ্ছা থাকলেও, সে রাতে আর দাদার ময়রাস্ট্রিটের বাড়িতে যাওয়া হল না। কিন্তু পরের দিন যে এমন একটা ঘটনা ঘটে তাঁর আঁচও পাননি তরুণ কুমার।
দিনটা ২৩ জুলাই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি উত্তম কুমার। ওগো বধূ সুন্দরীর সেটেই প্রথম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন উত্তম। সেখান থেকেই নার্সিং হোম। উত্তমের হাসপাতালের রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তরুণ কুমার। থমথমে চোখে। চোখের সামনে দেখছিলেন চিকিৎসক মণি ছেত্রী, সুনীল সেনরা ঘন ঘন ভিসিট করছেন উত্তমকে। ঠিক এমন সময়ই সুনীল সেন তরুণকে উত্তমের কাছে যেতে বললেন, মহানায়ক তখন হালকা নিদ্রায়। সুনীল সেন তাঁকে ডেকে বললেন, দেখও তো চিনতে পারছ কিনা। আদো স্বরে বলে উঠলেন, বুড়ো তুই এসে গেছিস! ব্যস, তারপরই ফের ঘুমিয়ে পড়লেন মহানায়ক। এটাই ছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে শেষকথা। ২৪ জুলাই সবাইকে কাঁদিয়ে মহানায়কের মহাপ্রস্থান। তরুণ কুমার, উত্তমকে নিয়ে লেখা তাঁর বইয়ে এক আপসোসের কথা লিখেছিলেন, হয়তো মুম্বই না গেলে দাদাকে বাঁচাতে পারতাম!
তথ্যসূত্র- আমার দাদা উত্তম কুমার, তরুণ কুমার
