‘…খুব লজ্জা লাগে’, আরজি কর কাণ্ডে বিদ্যার মন্তব্য শুনে কী বলছেন বুদ্ধিজীবীরা
Vidya Balan On RG Kar: আরজি কর কাণ্ড, যা নিয়ে গত দুইমাসের বেশি সময় ধরে লড়াই চলছে প্রতিটা স্তরে, বিদ্যাকেও স্পর্শ করেছে সেই যন্ত্রণা। আরজি কর প্রসঙ্গে তাই প্রশ্ন করা হলে, বিন্দুমাত্র না ভেবে উত্তর দিলেন...
উৎসা হাজরা, জয়িতা চন্দ্র
বিদ্যা বালান, বরাবরই কলকাতার সঙ্গে তাঁর বিশেষ যোগ। কেরিয়ারের শুরুও এই শহরেই। সে বাংলায় কথা বলা হোক কিংবা বাংলা চরিত্রে অভিনয়, বারবার বাংলার দর্শকদের মন জিতে নিয়েছেন তিনি। বিদ্যা বালান কলকাতায় যতবারই এসেছেন পরিবারের মতোই আপ্যায়ন পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। সোমবারও তার ব্যতিক্রম হল না। তাঁর আগামী ছবি ‘ভুল ভুলাইয়া থ্রি’-র প্রচারে কলকাতায় পা রেখেছিলেন সকাল সকাল। সঙ্গে ছিল কার্তিক আরিয়ান। ছবি প্রসঙ্গে নানা মন্তব্য করলেও তালিকা থেকে বাদ পড়ল না কলকাতার কঠিন পরিস্থিতি। আরজি কর কাণ্ড, যা নিয়ে গত দুইমাসের বেশি সময় ধরে লড়াই চলছে প্রতিটা স্তরে, বিদ্যাকেও স্পর্শ করেছে সেই যন্ত্রণা। আরজি কর প্রসঙ্গে তাই প্রশ্ন করা হলে, বিন্দুমাত্র না ভেবে তিনি উত্তর দিলেন, “আমার খুব ধাক্কা লেগেছিল। আমার কেরিয়ারের শুরু থেকেই এই শহর জড়িয়ে রয়েছে। কলকাতা প্রতিবাদের শহর। মায়ের শহরে এই রকম একটা ঘটনা কী ভাবে হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না।”
বিদ্যা বালানের এই মন্তব্যের পরই TV9 বাংলা যোগাযোগ করে তৃণমূল বিধায়ক তথা এই ছবির অন্যতম চরিত্র কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে। সবটা শুনে তিনি বললেন, ‘আমি এই নিয়ে এখনই কিছু বলব না। কারণ বিষয়টা বিচারাধীন। আমরা সকলেই বিচার চাইছি। যত দ্রুত সম্ভব, আমরা সকলেই বিচারের আশায় রয়েছি। এইটুকুই বলার’।
অন্যদিকে আবার বিদ্যার এই মন্তব্য শুনে প্রশংসায় ভরালেন অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা রূদ্রনীল ঘোষ। TV9 বাংলাকে বললেন, ‘বিদ্যা বালানের কেরিয়ারের শুরুই কিন্তু এই কলকাতা শহর থেকে। তাই বাংলাকে উনি খুব ভাল করে চেনেন। আমি যতটুকু বিদ্যাকে চিনি এবং জানি, ও ভীষণ সমাজ সম্পর্কে সচেতন, সেই বিষয় যথেষ্ট খবর রাখেন। যাঁরা বাইরে থাকেন, অথচ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে টান অনুভব করেন, তাঁদের যে এই খবর বিচলিত করছে, কষ্ট দিচ্ছে, সেই প্রমাণ বহুবার পেয়েছি আমরা। গোটা বিশ্ব জুড়ে চলেছে প্রতিবাদ। তাই বিদ্যা বালানও আঘাত পেয়েছেন এই ঘটনায়। খুব স্বাভাবিক। আরজি কর কাণ্ডে তো ক্রাইম থেমে যায়নি। একের পর এক ঘটনা চলেই যাচ্ছে। যখন বাইরে কাজ করতে যাই, শুনতে হয়, ‘কেয়া চল রাহা হ্যায় ইয়ার?’ তখন খুব লজ্জা লাগে। বুঝতে পারি না কী বলব। কারণ রাজনৈতিক কারণে সরকারের বিরোধিতা করা আমার কাজ। কিন্তু রাজ্যের বাইরে আমি তো পশ্চিমবঙ্গকেই উপস্থাপন করছি। আমার শহর, আমার রাজ্য। দিন দিন যে রাজ্যটা নিজের সম্মান হারাচ্ছে। আর সরকার বলছেন উৎসবে ফিরতে। বিদ্যার মনে হয়েছে এটা অসম্ভব, এমন ঘটনা ঘটতে পারে না, তিনি বলেছেন। এটাই তো স্বাভাবিক। অরিজিৎ সিং-শ্রেয়া ঘোষালেরও তো রাজ্য এটা। তাঁদেরও শুনতে হচ্ছে নিশ্চয়ই। তাঁরাও কথা বলছেন। বিচার চাইছেন। আমিও চাইছি।’
অভিনেতা তথা সিপিএম কর্মী দেবদূত ঘোষ আবার এই প্রসঙ্গে টানলেন অতীতের ছবি। তিনি TV9 বাংলাকে বললেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে যেখানে বড় হয়েছি, আমার বাড়িটা মায়েরাই চালাতেন। একদম যখন ছোট তখন পাড়ার মেয়েদের দলেও আমাদের দল থেকেও আমাদের ডাক আসত পাড়ার অনুষ্ঠানের জন্যে। তখন কি দুষ্কৃতি ছিল না? ছিল, তবে সমাজটা এমন ছিল, যাদের এমন মনোভাব ছিল তারা কোণে লুকিয়ে থাকত। মায়েদের কথাই চলত, এটা দেখেই বড় হয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে ফলে সেই পুরুষশাসন কখনও সেভাবে চোখে পড়েনি। মেয়েরা পুজো করছেন, অনুষ্ঠান করছেন। তাতে সকলের সমর্থনই ছিল। বিদ্যা এখানে থাকেন না। আর বাইরের মানুষ এই শহরটাকে ধর্মীয় শহর, মায়ের শহর, সংস্কৃতির শহর বলেই চেনেন। তাই তিনি বলেছেন। যার যথাযত মানেও রয়েছে। এটা মায়ের শহর। ভেবে দেখলে বিদ্যার কথার গভীর মানে রয়েছে।’