শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের (Uric Acid) মাত্রা তো বলে কয়ে বাড়ে না! কিন্তু কয়েকদিন বিষয় নজর রাখলে এটি নর্মাল থাকে। শীতকালে অনেকের এই সমস্যা আবার বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা এই সময় নানা খাবারে রাশ টানতে পরামর্শ দেন। ডায়েটে বিকল্প খাবার যোগ করার কথাও জানান চিকিৎসকরা। বাচ্চাদের কি ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা হয়? এ বিষয়ে জানতে টিভি নাইন বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল পেডিয়াট্রিশিয়ান জয়দেব রায়ের সঙ্গে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, বাচ্চাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা হয়। কী কারণে হয়, খাদ্যতালিকায় কী বদল দরকার সে কথাও জানিয়েছেন তিনি।
শিশু বিশেষজ্ঞ জয়দেব রায় বলেন, ‘বড়দের যেমন গাউট হয়, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুব বেশি সেটা দেখা যায় না। তবে বাচ্চাদের ইউরিক অ্যাসিড হতে পারে। বড়দের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ফিক্সড থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। বয়স অনুযায়ী, লিঙ্গ অনুযায়ী বাচ্চাদের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা আলাদা আলাদা হয়। যেমন ১-৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ২-৫ হলে, তা নর্মাল। আবার ১৫ বছর বয়সের কোনও ছেলে বা মেয়ের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ২.৫-৭ (নর্মাল) হতে পারে। এই ক্ষেত্রের বাচ্চা ছেলে ও বাচ্চা মেয়েদের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা আলাদা আলাদা হয়।’
বাচ্চাদের ইউরিক অ্যাসিডের কারণ কী?
পেডিয়াট্রিশিয়ান জয়দেব বলেছেন, ‘ডাউন সিনড্রোম, কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ থেকে বাচ্চাদের ইউরিক অ্যাসিড হতে পারে। আবার কিছু কিছু মেটাবলিক ডিজিজ রয়েছে, তা থেকেও বাচ্চাদের ইউরিক অ্যাসিড হতে পারে। তবে সেগুলি সংখ্যায় কমই। লিসনিয়ান সিনড্রোম একটা বিরল রোগ। এইরকম কেস খুব কমই দেখেছি। এটা জেনেটিক ডিসঅর্ডার। কিছু কিছু জেনেটিক ডিসঅর্ডার হলেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে। খুব সহজ করে বললে বিভিন্ন জেনেটিক ও মেটাবলিক কারণে বাচ্চাদের ইউরিক অ্যাসিডের বাড়তে পারে।’
তাঁর কথায়, ‘ওবেসিটিকে মেটাবলিক ডিজিজ বলে ধরা হয়। কোনও কোনও বাচ্চার ডায়াবেটিস থাকে পারে। যে বাচ্চাদের শরীর স্থূল, তাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়তে পারে। তাদের ক্ষেত্রে ওষুধ নয়, ওজন কমালেই ইউরিক অ্যাসিড নর্মাল হয়ে যায়। অনেকের ব্রঙ্কাল অ্যাজমা, হিমোলাইটিক ডিজিজ, ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু রোগে ওষুধ দেওয়া হয়। তা ছাড়া ডায়েটে বদল ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হয়।’
কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে ইউরিক অ্যাসিড?
শিশু বিশেষজ্ঞ জয়দেব রায়ের কথায়, ‘নির্দিষ্ট কয়েকটি রোগ যেগুলি ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার কারণ হতে পারে, সেগুলিতে ওষুধ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডায়েটে বদল আনা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। পরিমিত পরিমাণে জল পান করতে হবে। প্রোটিনে বেশি ইউরিক অ্যাসিড থাকে। তাই মাংস কম খেতে হবে। সবজি বেশি খাওয়া প্রয়োজন। ডিমে পিউরিন বেশি থাকে না। বেশ কিছু ফল যেমন – চেরি, কলা, আপেল খাওয়া ভালো। ভেজিটেবল জুস খাওয়া ভালো। জলে লেবু দিয়েও খেতে পারেন। আবার বিটরুট জুসও খেতে পারেন, এগুলো ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
এই বিশেষজ্ঞর কথায়, অনেক সময় দেখা যায় কিছু কিছু রোগে যেহেতু তার চিকিৎসা হয়, তাই সেখান থেকে ইউরিক অ্যাসিডও নর্মাল হয়ে যায়। বাচ্চার শরীরে ইউরিক অ্যাসিড মায়ের গর্ভে থাকার সময় কি আসতে পারে? এই প্রসঙ্গে শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রেগনেন্ট মহিলাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা হলে তার চিকিৎসা অবশ্যই করা উচিত। প্রোটিন কম খেলে বাচ্চার সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, বাচ্চারা খাবার মায়ের কাছ থেকে পায়। সেখানে খাবার পর্যাপ্ত না পেলে বাচ্চা কম ওজনের ভূমিষ্ঠ হতে পারে। বাচ্চার ক্ষতিও হতে পারে।’