আজকালকার বাচ্চারা হাতে মোবাইল পেলে আর কিছু চায় না। সারাদিন কার্টুন দেখানা হলে, গেম খেলা লেগেই আছে। এমনকি বাবা-মায়েরাও ছোটবেলা থেকেই খাওয়ানো বা অন্য কাজ করার সময় ব্যস্ত রাখার সময় শিশুদের হাতে মোবাইল দিয়ে দেন। ফলসরূপ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে শিশুদের স্ক্রীন টাইম অর্থাৎ মোবাইল দেখার সময়। কিন্তু এই অভ্যাস আদৌ কি ভাল? অজান্তেই শিশুদের কত ক্ষতি জানেন? গবেষণা বলছে স্ক্রীন টাইম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে চাইল্ড ওবেসিটি বা শিশুদের মধ্যে স্থূলতায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও। অল্পবয়সীদের মধ্যে ওবেসিটিতে আক্রান্ত হওয়ার হার এতটাই বেশি যে, তা বেশ উদ্বেগজনক। সারাদিন মোবাইল দেখার কারণে অনীহা দেখা দিচ্ছে খেলাধুলাতেও।
বিশেষজ্ঞদের মতে স্ক্রীন এক্সপোজার সীমিত করা শিশুদের সু-স্বাস্থ্যের জন্য একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলার সময় কমে যাওয়ায় শিশুদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কমে যাচ্ছে। ফলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরতে পারে না, তা শরীরেই থেকে যায়। ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসকদের মতে শিশুদের স্থূলতা বা ওবেসিটির মতো রোগ থেকে দূরে রাখতে হলে প্রতিদিন অন্তত ৬০ মিনিট নিয়ম করে শরীরচর্চা প্রয়োজন।
এএম মেডিক্যাল সেন্টারের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জয়তি সেনগুপ্ত এই বিষয়ে বলেন, “শিশুরা এখন এমন পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে যেখানে তাদের জীবন ডিজিটাল মিডিয়া এবং মোবাইলের সাথে জড়িত। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার শিশুর বিকাশে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই রকম প্রভাবই ফেলে।”
মোবাইল থেকে অনেক কিছুই শেখা যায়। তবে গবেষণা বলছে বেশিক্ষণ মোবাইল দেখার ইতিবাচকের থেকে নেতিবাচক প্রভাবই বেশি। আপনি দিনে কতক্ষণ মোবাইলের সামনে কাটাচ্ছেন, তা আপনার কার্যক্ষমতা, অনুভবের ক্ষমতা, বা পড়াশোনাকেও প্রভাবিত করে। এমনকি শিশুর ভাষার বিকাশের উপরেও প্রভাব ফেলে। গবেষণা বলছে শিশুরা সাধারণত মাতৃ ভাষা শেখে, ছোট থেকেই যাঁর কাছে বড় হচ্ছে তাঁর সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু সারাদিন মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকলে সেখানেও প্রভাব পড়ে।
ওই একই গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সব সন্তানদের বাবা-মায়েরা বেশিক্ষণ টিভি বা মোবাইলের পর্দার সামনে কাটান, তাঁদের শিশুদের মধ্যেও সেই প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে এই অভ্যাস স্থূলতা, ঘুমের সমস্যা, বিষন্নতা এবং উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সমীক্ষা বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওবেসিটি গত ৩ দশকে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের মধ্যে ওবেসিটির হার প্রায় ১৭ শতাংশ। বিশেষ করে একভাবে টিভি দেখা শিশুদের অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূল হওয়ার ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সচেতনতা বৃদ্ধি, জীবনযাপনে পরিবর্তন এবং স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে বাবা-মাকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।