Tahawwur Rana Extradition: ছিলেন নির্ভয়া কেসে, মামলা লড়েছেন সংসদ হামলার! তাহাউরকে শাস্তি দিতে তাঁকেই বেছে নিল NIA
Tahawwur Rana Extradition: বুধবার রাতে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ৫৮ বছর বয়সী মান দিল্লির বিশেষ আদালত এবং আপিল আদালতগুলিতে NIA মামলায় বিচার ও অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন।

নয়া দিল্লি: দেশে আনা হয়েছে ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম মূল চক্রী। শুরু হবে তাঁর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়াও। কোন আইনজীবী পালন করবেন রাজধর্ম? কে মামলা লড়বেন সন্ত্রাসবাদী তাহাউর রানার হয়ে? দেখে নিন এক নজরে।
বিচার প্রক্রিয়ায় জাতীয় তদন্ত সংস্থার (NIA) পক্ষে প্রসিকিউশন টিমের বাদীপক্ষের নেতৃত্ব দেবেন প্রবীণ আইনজীবী দয়ান কৃষ্ণন। তাঁকে সহায়তা করবেন অ্যাডভোকেট নরেন্দ্র মান, যাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (SPP) হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ করেছে। এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় রানার ভারতে আগমনের ঠিক একদিন আগেই।
বুধবার রাতে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ৫৮ বছর বয়সী মান দিল্লির বিশেষ আদালত এবং আপিল আদালতগুলিতে NIA মামলায় বিচার ও অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন। বিজ্ঞপ্তিটি NIA আইন এবং ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, ২০২৩-এর সংশ্লিষ্ট ধারার অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগ করে জারি করা হয়েছে।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট তার চূড়ান্ত আপিল খারিজ করে দেওয়ার পরেই ৬৪ বছর বয়সী তাহাউর রানাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে ভারতে। তাহাউরের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসী হামলায় লস্কর-ই-তইবাকে সাহায্য করা থেকে শুরু করে, ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে টার্গেট খোঁজার কাজে সহায়তা করার মতো বহু অভিযোগ রয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে মামলার সরকারি পক্ষের আইনজীবীর দলকে নেতৃত্ব দেবেন দয়ান। ৫৭ বছর বয়সী সিনিয়র অ্যাডভোকেট দয়ান কৃষ্ণন ১৯৯৩ সালে এনএলএসআইইউ বেঙ্গালুরুর প্রথম ব্যাচের স্নাতক। ২০১০ সাল থেকে রানার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া জুড়ে ভারত সরকারের পক্ষে বিনা পারিশ্রমিকে (pro bono) প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রত্যর্পণ এবং মানি লন্ডারিং আইনের ক্ষেত্রে দক্ষ হিসেবে পরিচিত কৃষ্ণন ছিলেন সেই চার সদস্যের NIA টিমের অংশ যারা শিকাগোতে গিয়ে হেডলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। হেডলি মামলায়ও বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করেছেন।
তিন দশকেরও বেশি সময়জুড়ে তাঁর আইনি জীবনে দয়ান কৃষ্ণন কেন্দ্র সরকার, এনআইএ, সিবিআই এবং দিল্লি পুলিশের পক্ষে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল আলোচিত মামলায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর প্রতিনিধিত্ব করা মামলাগুলির মধ্যে রয়েছে ২০০১ সালের সংসদ হামলা মামলা, ২০১২ সালের ডিসেম্বরের দিল্লি গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা, ২০০২ সালের নীতীশ কাটারা হত্যা মামলা, ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতি কেলেঙ্কারি, এবং ২০০৫ সালের নৌসেনার ওয়ার রুম লিক মামলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি, তিনি দিল্লি হাই কোর্টে যৌন হেনস্তা ও নির্যাতনের একটি মামলায় সঞ্জয় সিং-এর নেতৃত্বাধীন কুস্তি ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন, যেখানে চার কুস্তিগির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
এবার আসি নরেন্দ্র মানের কথায়। অপরাধবিষয়ক আইন বিশেষজ্ঞ, মানের ৩০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি দিল্লির কিরোরি মাল কলেজ এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ল’ সেন্টারের প্রাক্তনীও বটে। দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন ও খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধ আইনের মতো বিশেষ আইনের মামলার মাধ্যমে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন নরেন্দ্র।
২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সিবিআই-এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মান। দিল্লি হাই কোর্টে সংস্থার পক্ষে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জৈন হাওয়ালা কাণ্ড, বোফর্স কেলেঙ্কারি এবং ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এএন রায়কে হত্যা চেষ্টার মামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। যেখানে দুই আনন্দ মার্গির দোষসিদ্ধি তিনি ২০১৪ সালে সফলভাবে রক্ষা করেন। সেই মামলাটির চূড়ান্ত আপিল এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
NIA-এর প্রসিকিউশন টিমে রয়েছেন অ্যাডভোকেট সঞ্জীবী শেশাদ্রি ও শ্রীধর কালে। শেশাদ্রি NLU দিল্লির প্রাক্তন ছাত্র এবং প্রায় আট বছর ধরে দয়ান কৃষ্ণনের সঙ্গে কাজ করছেন।
উলটোদিকে তাহাউর রানার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন অ্যাডভোকেট পিয়ূষ সচদেব এবং লক্ষ্য ধীর। এই দুই আইনজীবীকে দিল্লি স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি (DSLSA) নিযুক্ত করেছে।
৩৭ বছর বয়সী পিয়ূষ সচদেব ২০১১ সালে পুনের ILS ল কলেজ থেকে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে কিংস কলেজ, লন্ডন থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বাণিজ্যিক আইনে মাস্টার্সও করেন। ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া তাঁর আইনি কেরিয়ার এক দশকের বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। তিনি CGC পার্টনারস ফার্মের অংশীদার এবং ২০২১ সাল থেকে DLSA-এর প্যানেলে রয়েছেন।
লক্ষ্য ধীর, ডঃ রাম মনোহর লোহিয়া ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি, লখনউ থেকে ২০১৮ সালে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছর তিনি পেশাগতভাবে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। হোয়াইট কলার ক্রাইম, বাণিজ্যিক বিরোধ, সাইবার অপরাধ এবং জালিয়াতি/ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। সম্প্রতি তিনি সেশন কোর্ট এবং পাতিয়ালা হাউস কোর্টে ফৌজদারি মামলায় প্রতিনিধিত্ব করার জন্য DLSA-এর প্যানেলে নিযুক্ত হয়েছেন।





