নিজে চিকিৎসক, তাও বুঝতে পারেননি! তিলে তিলে বিষ ঢালছিলেন স্ত্রীর শরীরে, ৬ মাস পর চিকিৎসক পড়ল ধরা
Murder Case: যদিও পুলিশ যত তদন্ত করে, ততই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি রিপোর্টে উঠে আসে যে ওই যুবতীর শরীরে প্রোপোফল নামক একটি ওষুধ অতিরিক্ত মাত্রায় পাওয়া গিয়েছে। কী এই প্রোপোফল? এটি একটি অ্যানেস্থাটিক ড্রাগ।

বেঙ্গালুরু: চিকিৎসক দম্পত্তি, আপাতচোখে বেশ সুখী সংসারই ছিল। ৬ মাস আগে হঠাৎ মৃত্যু হয় যুবতীর। তবে এতদিন বাদে সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য়। স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, স্বামীই তিলে তিলে মেরে ফেলেছেন স্ত্রীকে।
বেঙ্গালুরুর ডার্মাটোলজিস্ট ডঃ কৃতিকা এম রেড্ডির মৃত্যু হয়েছিল চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল। বাড়ি থেকে তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ২৯ বছর বয়সী ডার্মাটোলজিস্টের। তাঁর স্বামী, ডঃ মহেন্দ্র রেড্ডি পেশায় জেনারেল সার্জন। তিনিও পুলিশকে জানিয়েছিলেন স্ত্রীর হজমের সমস্যা ছিল। রক্তচাপও খুব কম থাকত। শারীরিক অসুস্থতা ও তার জটিলতার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
যদিও পুলিশ যত তদন্ত করে, ততই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি রিপোর্টে উঠে আসে যে ওই যুবতীর শরীরে প্রোপোফল নামক একটি ওষুধ অতিরিক্ত মাত্রায় পাওয়া গিয়েছে। কী এই প্রোপোফল? এটি একটি অ্যানেস্থাটিক ড্রাগ। অতিরিক্ত প্রয়োগে হার্ট অ্যাটাক, এমনকী মৃত্যুও হতে পারে।
এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই মৃত যুবতীর বাবা পুলিশে জামাইয়ের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই গত ১৪ অক্টোবর অভিযুক্ত ডঃ মহেন্দ্র রেড্ডিকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠলেও, বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ কমিশনার শ্রীমন্ত কুমার সিং জানিয়েছেন, ফরেন্সিক রিপোর্ট না আসা অবধি কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। রিপোর্টে পাওয়া গিয়েছে, মৃত ওই যুবতী চিকিৎসককে অতিরিক্ত মাত্রায় প্রোপোফল দেওয়া হয়েছিল।
জেরায় জানা গিয়েছে, মহেন্দ্র রেড্ডি তাঁর স্ত্রীকে আইভি ইনফিউশন দিচ্ছিলেন টানা তিনদিন ধরে। স্ত্রীকে বলেছিলেন, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য এই স্যালাইন দিচ্ছেন। ২৩ এপ্রিল কৃতিকা অজ্ঞান হয়ে যান। তখন তাঁকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর স্বামী ৩৬ ঘণ্টা পরই তাঁকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই কৃতিকার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্ত স্ত্রীর দেহ ময়নাতদন্তও করতে দিতে চাইছিলেন না। পরে এসএসএল রিপোর্ট পাওয়ার পর খুনের মামলা দায়ের করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের সন্দেহ, ব্যক্তিগত ও আর্থিক কারণেই স্ত্রীকে মেরে দিয়েছেন ওই চিকিৎসক। মহেন্দ্র স্ত্রীকে চাপ দিচ্ছিলেন একটি প্রাইভেট হাসপাতাল খোলার জন্য। এর জন্য টাকার চাপ দিচ্ছিলেন। যদিও যুবতীর পরিবার ইতিমধ্যেই ক্লিনিক খোলার জন্য় টাকা দিয়েছিলেন। নিহত যুবতীর পরিবার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, পণের জন্য হেনস্থা ও গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগও দায়ের করেছেন।
তদন্তে জানা গিয়েছে, মহেন্দ্র রেড্ডি ও তাঁর জমজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে প্রতারণা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল। ২০২৪ সালে যখন কৃতিকার সঙ্গে বিয়ে হয়, তখন এই সমস্ত তথ্য লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বলেই দাবি।
