বাম দুর্গে বুমেরাং সবরীমালা! ভুল স্বীকার করেও বিপাকে পিনারাই প্রশাসন
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) সবরিমালা মন্দিরে (Sabarimala Temple) মহিলাদের প্রবেশে ছাড়পত্র দেয়, সেইসময় প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিল পিনারাই বিজয়ন (Pinarayi Vijayan) সরকার। আসন্ন নির্বাচনী প্রচারে সেই সিদ্ধান্তকে ভুল বলেই দাবি করছে বাম সরকার।
জ্যোতির্ময় রায়: আগামী ৬ এপ্রিল কেরলে বিধানসভা নির্বাচন (Kerala Assembly Election 2021)। ক্ষমতাসীন বাম দলের জন্য এ বারের বিধানসভা নির্বাচন সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। বর্তমানে কেরলে পিনারাই বিজয়ন (Pinarayi Vijayan) সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যে যে রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে, তা দেখে বামের শেষ দুর্গটির অস্তিত্বও সংকটে রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে কেরলের সবরিমালা মন্দির(Sabarimala Temple)-এ মহিলাদের প্রবেশের বিষয়টি বাম সরকারের মাথা ব্যথার বিশেষ কারণ হয়ে উঠেছে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট সবরিমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে একটি রায় দেয়। তাতে বলা হয়, সব বয়সের মহিলারা এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন এবং মন্দিরে প্রবেশের জন্য মহিলা দর্শনার্থীদের কোনও ভাবেই বাধা দেওয়া যাবে না। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বে বাম সরকার সেই সময় এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তিনি মনে করেছিলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বামেদের ভোট ব্যাংক আরও শক্তিশালী হবে।
সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশ কার্যকর হয় ২ জানুয়ারী, ২০১৯ সালে। পুলিশি নিরাপত্তায় বিন্দু আম্মিনী এবং কনকদুর্গা নামক চল্লিশোর্ধ্ব দুই মহিলা সবরিমালা মন্দিরে প্রবেশ করেন। তবে বিজয়ন সরকার যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিল, তা জনগণ ভাল চোখে দেখেনি। কেরলের অনেক হিন্দু সংগঠন ও জনসাধারণ প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেন। জনগণের মন বুঝে বিরোধীরাও মুখ্যমন্ত্রীর “হিন্দু বিশ্বাস ও প্রচলিত আস্থাকে অসম্মান করা” নিয়ে রাজ্যব্যাপী আন্দলনের সমর্থন জানায়।
আরও পড়ুন: দেশে ৮ রাজ্যই করোনার আঁতুড়ঘর, ৩ রাজ্যে শোচনীয় অবস্থা
প্রথমদিকে যখন সুপ্রিম কোর্ট মহিলাদের স্বপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা করেছিল যে, সমস্ত বয়সের মহিলারাই সবরিমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। সেই সময় এই সিদ্ধান্তকে ভারতীয় জনতা পার্টি ও কংগ্রেস সহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই স্বাগত জানিয়েছিল। এমনকি, কেরলের প্রবীণ বিজেপি নেতা রাজগোপাল এবং কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীও এই সিদ্ধান্তটিকে “ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত” বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই বিষয়টিই যখন জনআন্দোলনের রূপ নিতে শুরু করে, কংগ্রেস এবং বিজেপিও ভোল পালটে জনসমর্থনেই সুর মেলায়।
ভারতীয় জনতা পার্টি আন্দোলনকারীদের সমর্থনে জানিয়ে কেরলের বাম সরকারকে “হিন্দু বিশ্বাস ও ঐতিহ্য বিরোধী” বলে আখ্যা দেয়। বিজেপির সমর্থনের দেখাদেখি কেরলের কংগ্রেস নেতারাও অনুভব করেন যে, ভারতীয় জনতা পার্টি পুরো বিষয়টি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে। পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসও এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনকারীদেরই সমর্থন জানায়।
কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তের ফলও হাতেনাতে মেলে। কংগ্রেস-সমর্থিত ইউডিএফ জোট ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেরলের ২০টি আসনের মধ্যে ১৯টিতে জয়লাভ করে। এর মধ্যে অন্যতম একটি আসন ছিল রাহুল গান্ধীর আসন ওয়েনাড। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) দুটি জায়গা থেকে দাড়িয়েছিলেন। এরমধ্যে উত্তরপ্রদেশের আমেথি আসন থেকে তিনি হেরে যান, জেতেন কেরলের ওয়েনাড থেকে। অন্যদিকে, ভারতীয় জনতা পার্টি ২০১৯-র নির্বাচনে একটিও আসন না পেলেও ভোটের শতাংশ কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারে সিপিআইএম ২ জানুয়ারী সবরিমালা মন্দিরে দুই মহিলার প্রবেশের ঘটনাকে নিজেদের ভুল হিসাবে স্বীকার করেছে এবং কেরালায় সিপিআই (এম) কর্মীরা নির্বাচন প্রচারে ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণকে সেই বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টাও করছেন। তবে এ জাতীয় ভুলের স্বীকারোক্তি রাজনীতিতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তার উত্তর নির্বাচনের ফলেই জানা যাবে।
আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী-কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংঘর্ষে শহিদ ৫ জওয়ান, খতম কমপক্ষে ২ মাওবাদী