Coromandel Express Derailed: পয়েন্টের গোলমালে লুপ লাইনে করমণ্ডল এক্সপ্রেস, ব্রেক কষেও কি দাঁড়ায়নি ট্রেন? চাঞ্চল্যকর তথ্য রেলের রিপোর্টে
Preliminary Report of Railway: সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে করমণ্ডলের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির উপর। পরপর ২১টি কামরা বেলাইন হয়ে যায়। পাশের ডাউন লাইনে ছিটকে পড়ে তিনটি কামরা। এদিকে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই লাইনে চলে আসে ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেস।
ভুবনেশ্বর: বাহানাগা জুড়ে এখন শুধুই হাহাকার। শুক্রবার সন্ধেয় যে ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনা (Train Accident) ঘটে, শনিবার রাতে তার উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। তবে এই দুর্ঘটনা তো আর পাঁচটা ছোটখাটো দুর্ঘটনার মতো নয়। পরপর তিনটি ট্রেনের ধাক্কা, নিমেষে ওলট-পালট সবকিছু। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অধীনে ওড়িশার বালেশ্বর স্টেশনের কাছে শুক্রবার সন্ধের মর্মান্তিক দুর্ঘটনর মুখে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express), ডাউন হাওড়া-যশবন্তপুর এক্সপ্রেস (Howrah-Yashwantpur Express) ও একটি মালগাড়ি (Goods Train)। রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এখনও অবধি ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত কমপক্ষে ৯০০, হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বহু মানুষ। এই ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে শুক্রবার থেকেই নানা তত্ত্ব উঠে আসছিল। তবে শনিবার রেলের প্রাথমিক রিপোর্ট ও রেলের ট্রাফিক চার্টের চিত্রই তুলে ধরল আসল কারণ। রেলের প্রাথমিক রিপোর্ট বলা হয়েছে, সিগনাল নয়, পয়েন্টের গোলমালেই লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ধাক্কা মারে সেই লাইনেই দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে। সংঘর্ষের জেরে লাইনচ্যুত হয় ২১টি কামরা, ৩টি কামরা ছিটকে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে। আবার ওই লাইন দিয়েই হাওড়া ফিরছিল যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনটি ধাক্কা মারে লাইনচ্য়ুত হওয়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরায়। লাইনচ্যুত হয় যশবন্তুপুর এক্সপ্রেসের দুটি কামরা।
শুক্রবার রাতে যখন উদ্ধারকাজ শুরু হয়, তখন দুর্ঘটনার কারণ আন্দাজ করা যায়নি। শনিবার সকাল হতেই বালেশ্বরের বাহানাগায় হওয়া দুর্ঘটনার ভয়াবহতা কতটা, তা আরও স্পষ্ট হয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা মৃতদেহের সারি, আহতদের আর্ত চিৎকারের মাঝেই দেখা যায় কার্যত ধুলোয় মিশে গিয়েছে তিনটি রেল ট্রাক। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রযুক্তির এত উন্নতির পরেও কেন এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা?
রেলের তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। তদন্তকারীদের প্রাথমিক দাবি, পয়েন্টে গোলমালেই রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের জন্য মেইন লাইনে সিগন্যাল দেওয়া ছিল। কিন্তু পয়েন্টে গোলমালের জন্য করমণ্ডল এক্সপ্রেস ঢুকে পড়ে লুপ লাইনে। সেই সময়ে লুপ লাইনে দাঁড়িয়েছিল মালগাড়িটি। ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগে আসা করমণ্ডল এক্সপ্রেস সোজা ধাক্কা মারে মালগাড়িতে।
সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে করমণ্ডলের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির উপর। পরপর ২১টি কামরা বেলাইন হয়ে যায়। পাশের ডাউন লাইনে ছিটকে পড়ে তিনটি কামরা। এদিকে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই লাইনে চলে আসে ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া কামরায় ধাক্কা মেরে ঘষটাতে ঘষটাতে প্রায় আধ কিমি এগোয় যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। আকস্মিক ব্রেক কষায় বেলাইন হয়ে যায় যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের শেষের দুটি কামরা। সেগুলি পড়ে যায় নয়ানজুলিতে। রেলের প্রাথমিক রিপোর্টে এমনটাই জানা গিয়েছে।
বর্তমানে প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে পয়েন্টে গোলমাল হল? এই গাফিলতি কার? করমণ্ডলের দুর্ঘটনার পর কেন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসকে সতর্ক করা গেল না? লাইনচ্যুত হওয়ার পর করমণ্ডল এক্সপ্রেস কেন থেমে গেল না, কেন তার কামরাগুলি পাশের লাইনে গিয়ে পড়ল, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রেনটিতে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। অনেকের মতে, পয়েন্টের গলদের সঙ্গে ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটিও দুর্ঘটনার ভয়বহতা এতটা বাড়িয়ে থাকতে পারে। দুর্ঘটনার আসল কারণ খুঁজতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গড়ে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।