প্রথমে ভেবেছিলেন রসিকতা, নরসিংহ রাওয়ের একটা ফোনই বদলে দিয়েছিল মনমোহন সিং ও দেশের অর্থনীতিকে

Manmohan Sing-Narsimha Rao: সেই সময়ে (১৯৯১ সালে) ভারতের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে নরসিংহ রাও চেয়েছিলেন, এমন একজনকে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হোক, যিনি দেশের অর্থনীতিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে পারেন।

প্রথমে ভেবেছিলেন রসিকতা, নরসিংহ রাওয়ের একটা ফোনই বদলে দিয়েছিল মনমোহন সিং ও দেশের অর্থনীতিকে
নরসিমহা রাওয়ের সঙ্গে মনমোহন সিং। ফাইল চিত্র।Image Credit source: X
Follow Us:
| Updated on: Dec 27, 2024 | 8:01 AM

নয়া দিল্লি: সালটা ১৯৯১, জুন মাস। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (UGC) অফিসে বেজে উঠল ফোন। ও’প্রান্ত থেকে বললেন, নরসিংহ রাও বলছি। নিমেষে হইচই পড়ে গেল গোটা অফিসে। নরসিংহ রাও জানালেন, তিনি ডঃ মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিছুক্ষণের মধ্যেই এলেন মনমোহন সিং। ও’প্রান্ত থেকে নরসিংহ রাও সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “আমি তোমাকে অর্থমন্ত্রী করতে চাই, তুমি তৈরি হয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে আসো।”

ডঃ মনমোহন সিং-এর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল নরসিংহ রাও-এর এই আহ্বানের মাধ্যমেই। দেশের অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগে, মনমোহন সিং ১৯৭২ সালে অর্থমন্ত্রীর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, ১৯৭৬ সালে অর্থ মন্ত্রকের সচিব, তারপর ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর এবং ৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। চন্দ্রশেখরের সরকারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টাও ছিলেন মনমোহন সিং।

১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় হত্যা করা হয়েছিল রাজীব গান্ধীকে। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, কংগ্রেস ২৪৪টি আসনে জয়ী হয়েছিল। কংগ্রেস সরকার গঠিত হবে এটা নিশ্চিত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?  সনিয়া গান্ধীর নাম শোনা গেলেও, সেই সময় তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে না আসার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর খোঁজ শুরু হয় কংগ্রেসের মধ্যেই। প্রথমেই উঠে আসে শঙ্করদয়াল শর্মার নাম। তাঁকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও, তিনি রাজি হননি প্রধানন্ত্রী হতে।

শঙ্করদয়াল না করাতেই শিকে ছেড়ে নরসিংহ রাওয়ের। সেই সময় তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার প্রায় অস্তাচলে।  নরসিংহ রাওয়ের নাম প্রস্তাব করা হয় সনিয়া গান্ধীর কাছে। তিনি রাজি হন।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে নরসিংহ রাও বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও অর্থ মন্ত্রক নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত ছিলেন, কারণ সেই সময়ে (১৯৯১ সালে) ভারতের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে নরসিংহ রাও চেয়েছিলেন, এমন একজনকে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হোক, যিনি দেশের অর্থনীতিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে পারেন।

নরসিংহ রাওয়ের উপদেষ্টা পিসি আলেকজান্ডার প্রথমে আইজি পটেলের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। আইজি পটেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ছিলেন। মায়ের অসুস্থতার কারণে দিল্লিতে আসতে চাননি আইজি পটেল, তাই নরসিংহ রাওয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দেন। এরপরই আলেকজান্ডার নাম প্রস্তাব করেন মনমোহন সিংয়ের।

অর্থমন্ত্রী হতে পারেন তিনি, এই জল্পনা শুনে প্রথমে রসিকতা ভেবেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন মনমোহন সিং। পরের দিন নরসিংহ রাও নিজেই মনমোহন সিংকে ফোন করেন এবং তাঁকে প্রস্তুত হয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে আসতে বলেন। এভাবেই মনমোহন সিংয়ের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় এবং তিনি দেশের অর্থমন্ত্রী হন।

মনমোহন সিংয়ের হাত ধরেই অর্থনৈতিক উদারীকরণ হয় ভারতের। ভেন্টিলেটরে চলে যাওয়া অর্থনীতির চিকিৎসা করে, প্রাণ ফিরিয়েছিলেন মনমোহন সিং। দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করেন ভারতকে। ভারতীয় অর্থনীতিকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন তিনি। পাঁচ বছর অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। এরপর কংগ্রেস বিরোধী দলে এলে তাঁকে রাজ্যসভায় বিরোধীদলীয় নেতা করা হয়। ২০০৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর একটানা ১০ বছর দেশের দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি।