‘শাহিনবাগ বানাবেন না’ রাজ্যসভায় অনুরোধ কেন্দ্রের, আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আজও উত্তাল সংসদ
রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেন, "বিভিন্ন স্তরে ব্যর্থ হয়েছে সরকার, এমনকি সংসদের পবিত্রতা রক্ষাতেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার। গত বচরের ২০ সেপ্টেম্বর সাতজন সাংসদ কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, তাঁদের সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়।"
নয়া দিল্লি: কৃষি আইন নিয়ে বিভক্ত রাজ্যসভা (Rajya Sabha)। শাসক দলের সাংসদরা কৃষি আইনের উপকারিতার বুলি আওড়ালেও বিরোধীদের দাবি, “আইন প্রত্যাহারই মিলবে সমাধান”। তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন (Derek O’brian) বলেন, “সরকার বিভিন্ন স্তরে ব্যর্থ হয়েছে”। অন্যদিকে বিরোধীদলগুলিকে প্রশাসনের অনুরোধ, কৃষক আন্দোলনকে দ্বিতীয় শাহিনবাগে যেন পরিণত না করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হতেই কৃষি আইনের বিষয়টি আলোচনার জন্য তুলে ধরেন বিরোধী দলের সাংসদরা। সরকারের তরফে বলা হয়, “শান্তিপূর্ণভাবে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য দরজা সবসময় খোলা।” একইসঙ্গে বিরোধীদের অনুরোধ করা হয়, দয়া করে এই আন্দোলনকেও যেন শাহিনবাগে পরিণত না করা হয়।
রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণের পরই তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিজেপি সাংসদ ভূবনেশ্বর কালিতা বলেন, “তিনটি কৃষি আইনের উপকারিতা ইতিমধ্যেই দেশের ১০ কোটি মানুষ ও ছোট কৃষকদের কাছে পৌঁছেছে। এই আইনে কারোর অধিকার কিংবা কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়নি। কৃষিক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকার কৃষকদের নতুন অধিকার দিয়েছে।”
আরও পড়ুন: ‘অতিমারিতেও কৃষি-উন্নতি অব্যাহত’, সাফল্য তুলে কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা মোদীর
কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার এবং রেলমন্ত্রী পিযুষ গোয়েলের সঙ্গে কৃষকদের একাধিক দফার আলোচনার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কৃষকদের প্রতি অত্যন্ত সম্মান বজায় রাখে সরকার। যেকোনও বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি সরকার। তবে আমার বন্ধুদের কাছে আবেদন, দয়া করে এই আন্দোলনকেও শাহিনবাগের আন্দোলনে পরিণত করবেন না।”
অন্যদিকে, বিরোধীদের তরফে জেডি(এস) নেতা এইচ ডি দেবেগৌড়া বলেন, “প্রজাতন্ত্র দিবসে কিছু সন্ত্রাসবাদীরা যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিল, তার কড়া সমালোচনা করছি। কিন্তু এই ঘটনার জন্য কৃষকরা কোনওভাবেই দায়ী নয়, তাই তাঁদের শাস্তি দেওয়াও উচিত নয়। আন্দোলনস্থলে কংক্রিটের দেওয়াল তুলে দেওয়া সরকারকে সাহায্য করবে না। সরকারের উচিত শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি সমাধান করা।”
রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “বিভিন্ন স্তরে ব্যর্থ হয়েছে সরকার, এমনকি সংসদের পবিত্রতা রক্ষাতেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার। গত বচরের ২০ সেপ্টেম্বর সাতজন সাংসদ কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, তাঁদের সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়।” বিগত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনে যেসকল কৃষকরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে এক মিনিট নিরাবতা পালন করার অনুরোধ জানান তৃণমূল সাংসদ। অন্যান্য বিরোধীদলের সাংসদরাও সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে কৃষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
Government has failed India at many levels, it failed to uphold Parliament’s sanctity because of its arrogance. On September 20, 2020, seven MPs who stood for farmers were suspended. I stand in solidarity with the farmers who lost their lives: Derek O’Brien, TMC in Rajya Sabha pic.twitter.com/Jjc8dODRWf
— ANI (@ANI) February 4, 2021
গতকালও কৃষি আইন নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজ্যসভা। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করার ঘটনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে এই তিনটি কৃষি আইন যেন প্রত্যাহার করা হয়।” প্রজাতন্ত্র দিবসের বিশৃঙ্খলার ঘটনার পর থেকে যেসকল কৃষকরা নিখোঁজ, তাঁদের খুঁজে বের করার জন্যও একটি কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান তিনি।
কৃষকদের অন্নদাতা বলে সম্বোধন করে তিনি জানান, কৃষকদের জেরা করে বা তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে কোনও লাভ নেই, বরং সরকারের উচিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর নজর দেওয়া।
আরও পড়ুন: সৌগত রায়দের গাজিপুর সীমানায় আটকাল পুলিশ