Sikkim: কেড়ে নিতে চেয়েছিল সিকিমকে? বদলে যেত ভারতের ম্যাপ? এক RAW এজেন্টের কারসাজিতেই ভেস্তে গিয়েছিল চিনের প্ল্যান

Sikkim: ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ - এই তিন বছর সিকিমে ‘র’-এর স্টেশন হেড ছিলেন সিঁধু। ‘র’-এর তত্‍কালীন প্রধান আরএন কাওয়ের অন্যতম আস্থাভাজন হিসাবেই তাঁকে সিকিমে পাঠানো হয়। সিকিম নিয়ে চিনের গোপন প্ল্যানের আঁচ প্রথম এসেছিল এই সিঁধুর কাছে।

Sikkim: কেড়ে নিতে চেয়েছিল সিকিমকে? বদলে যেত ভারতের ম্যাপ? এক RAW এজেন্টের কারসাজিতেই ভেস্তে গিয়েছিল চিনের প্ল্যান
প্রতীকী ছবি Image Credit source: Facebook
Follow Us:
| Updated on: Aug 23, 2024 | 10:43 PM

নয়া দিল্লি: আর কিছুটা দেরি করলে, প্ল্যানিংয়ে একটু ভুল হলে ভারতের ম্যাপটাই হয়ত পালটে যেত। উড়ে এসে সিকিমে জুড়ে বসত চিন। কীভাবে সেই ছক ভেস্তে গেল? সবার অজান্তে কী, কী ঘটেছিল সেই সময়? উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়। জেবিএস সিঁধু, ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এবং ‘র’ শীর্ষকর্তা। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ – এই তিন বছর সিকিমে ‘র’-এর স্টেশন হেড ছিলেন সিঁধু। ‘র’-এর তত্‍কালীন প্রধান আরএন কাওয়ের অন্যতম আস্থাভাজন হিসাবেই তাঁকে সিকিমে পাঠানো হয়। সিকিম নিয়ে চিনের গোপন প্ল্যানের আঁচ প্রথম এসেছিল এই সিঁধুর কাছে। নিজের বস কাওয়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আরএন কাও – ‘র’-এর রূপকারও এই দুঁদে গোয়েন্দা। এতটাই সতর্ক থাকতেন যে নিজের ছবি তোলাতেন না। এক জায়গায় দু-বার মিটিং করতেন না। চোখের কালো চশমাও কখনও খুলতেন না।

কী ছক কষেছিল চিন? 

এদিকে ততদিনে হিমালয়ের কোলে ছোট্ট রাজ্যটার দখল নেওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছিল পিপলস লিবারেশন আর্মি। উদ্দেশ্য ছিল, সিল্ক রুট থেকে ভারতকে বিচ্ছিন্ন করা। চিনের কমিউনিস্ট সরকারের প্ল্যানিংটা ছিল সোজা-সাপটা। প্রথমে, সিকিমের রাজ-পরিবারকে সামনে রেখে অশান্তি তৈরি করা হবে। পরে, সিকিম রাজপরিবারই ভারতের পাশাপাশি চিনের হস্তক্ষেপ চাইবে। মধ্যস্থতার সুযোগে চিন সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোবে। তখনও সিকিম অফিসিয়ালি ভারতের অংশ হয়নি। সেইদিনই স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘র’ চিফ। আর এক মুহূর্তও দেরি নয়। ছ-মাসের মধ্যে সিকিমকে ভারতের সঙ্গে জুড়তে হবে। সেটা হলেই চিনের প্ল্যান ঘেঁটে যাবে। না হলে সিকিমকে চিরদিনের মতো খোয়াতে হবে। 

এই খবরটিও পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীকেও এই কথা বলেন ‘র’-এর প্রধান। সেইসময়ে সিকিমের রাজা ছিলেন পলডিয়ান নামগিয়াল। কয়েকটা ক্ষেত্র ছাড়া রাজার হাতেই ছিল যাবতীয় ক্ষমতা। ১৯৭৩ সালে সিকিমে ভোটের পর দেখা যায়, রাজাই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। তবে, পলডিয়ানের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন সিকিমবাসীরই একটা অংশ। এই অবস্থায় ১৯৭৪ সালে আবার ভোট হয়। এবার কিন্তু আর রাজপরিবার জিততে পারেনি। ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন লেন্দুপ দর্জি। ভারতের সামনে দুটো চ্যালেঞ্জ ছিল। এক, চিনকে আটকাতে সিকিমকে অফিসিয়ালি ভারতের অন্তর্ভূক্ত করে নিতে হবে। দুই, সিকিমের রাজা ও প্রধানমন্ত্রীকে এতে রাজি করতে হবে। কাও জানতেন, শুধু মুখের কথায় চিঁড়ে ভিজবে না। সিকিম রাজ ও লেন্দুপকে সম্ভাব্য চিনা আগ্রাসনের প্রমাণও দিতে হবে। দু-জনের সামনেই একটি টপ সিক্রেট চিঠি প্রমাণ হিসাবে পেশ করেন ‘র’ কর্তারা। যেখানে চিনা প্রশাসনের কোনও শীর্ষকর্তা সেনাকে বিশেষ অভিযানের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিচ্ছেন। 

অনেক ঝুঁকি নিয়ে ভারতের হাতে সেই চিঠি তুলে দেন চিনা প্রশাসনে থাকা ভারতের কোনও চর। এরপর আর আপত্তির কোনও সুযোগই ছিল না দুজনের কাছে। বরং নিজে থেকেই ভারতে যুক্ত হতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন সিকিম-রাজ। সেটাও কাও এবং সিঁধুর পরামর্শ মেনেই। এর ভিত্তিতে ৩৬ তম সংবিধান সংশোধন করে সিকিমকে ভারতের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ভাবলে অবাক হতে হয়, সিকিমকে জোড়ার এই পুরো অপারেশনটা হয়েছিল মাত্র ৫ মাস ২৯ দিনের মধ্যে। কাওয়ের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার ১ দিন আগে। ১৯৭৫ সালের ১৬ মে অফিসিয়ালি ভারতের অংশ হয়েছিল সিকিম। প্রতিবছর দিনটা সিকিম দিবস হিসাবে পালিত হয়। তবে এরপরও দীর্ঘদিন সিকিমকে ভারতের অংশ বলে মেনে নেয়নি চিন। ২০০৩ সালে বাজপেয়ী সরকারের আমলে প্রথম সিকিমকে ভারতের অংশ বলে মেনে নেয় তারা।