21 July: ‘ঘরে ঘরে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন, আমাদের বিশ্বাস অর্জনে কোথাও খামতি ছিল’, জিতেও কেন একথা বললেন মমতা?

21 July: এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার একাধিক মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে যে কোনও ভাবেই আর আপোশ নয়, তার বার্তা দিয়েছেন। এসবের পরেই অতি সাম্প্রতিক অতীতে উঠে এসেছে আড়িয়াদহের জেসিবি, সোনারপুরের জামালদের নাম।

21 July:  'ঘরে ঘরে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন, আমাদের বিশ্বাস অর্জনে কোথাও খামতি ছিল', জিতেও কেন একথা বললেন মমতা?
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় Image Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Jul 21, 2024 | 5:16 PM

কলকাতা:  লোকসভা নির্বাচনের পর একটা প্ল্যাটফর্ম। বলা ভালো, তৃণমূলের মেগা প্ল্যাটফর্ম,  বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের। আর সেই মঞ্চকেই ব্যবহার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সঙ্গে দলীয় কর্মী নেতাদের উদ্দেশেও একাধিক বার্তা দিলেন তিনি। দলীয় নেতাদের উদ্দেশেই মমতা বললেন, “যেখানে যেখানে জিতেছেন, ভাল করে মানুষকে গিয়ে ধন্যবাদ জানাবেন। যেখানে পারবেন না, দলকে জানাবেন।” আর যেখানে জিততে পারেনি তৃণমূল? সেখানকার মানুষের কাছেও ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “যেখানে আমরা জিতিনি, সেখানে ঘরে ঘরে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন, হয়তো আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে কোথাও খামতি ছিল, আগামী দিনে দেখব।”

তবে এই প্রথম নয়, মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দলীয় নেতা কর্মীদের কাছে আগেও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করলে প্রয়োজনে আপনার বাড়িতে গিয়ে বাসনও মেজে দেব।” একজন মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে বাসন মাজার কথা বলছেন, চর্চা কম হয়নি রাজনৈতিক মহলে। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলেছিলেন, এটা নিতান্তই আই ওয়্যাশ, নজর ঘোরানোর চেষ্টা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে, শিক্ষা থেকে স্বাস্ব্য-নির্বাচনের আগে যখন একাধিক দুর্নীতি বাণে বিদ্ধ মমতা-সরকার, যখন একের পর এক নেতা মন্ত্রী গ্রেফতার হচ্ছেন, তখন নেত্রীর কাছে মুখ্য চ্যালেঞ্জ ছিল দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করা। নেত্রী যে তাতে সমর্থ হয়েছেন,  মমতা-ক্যারিশ্মা যে কাজ করে গিয়েছে, তা লোকসভার নির্বাচনের ফলও ব্যক্ত করেছে।

কিন্তু এখন ছাব্বিশের আগে রাজ্যে কোনও নির্বাচন নেই। লোকসভা নির্বাচনে ল্যান্ডস্লাইড জয় পেয়েছেন  মমতা। কিন্তু এখনও মমতার মুখে সেই বিনয়ের কথাই। নেতা কর্মীদের পা মাটিতে যাতে থাকে, একুশের মঞ্চ থেকেও মমতা তারও পাঠ পড়ালেন। স্পষ্ট বললেন, “তৃণমূল মানুষের সামাজিক বন্ধু হবে। আমি বিবেকবান চাই, বিত্তবান চাই না। পয়সা আসে, চলে যায়। সেবার কোনও বিকল্প নাই।সব পৌরসভা, পঞ্চায়েত, এমএলএ, এমপি, প্রধান সবাইকে বলব, কারোর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ যেন কেউ না পায়। যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, আমরা কিন্তু উপযুক্ত অ্যাকশন নেব। গরিব থাকুন, যা আছে ঘরে, তাই খেয়ে বেঁচে থাকুন। তাহলেই আপনাদের কেউ সরাতে পারবে না।”

মানুষকে এগিয়ে রাখলেন  নেত্রী, বললেন, ” মানুষকে স্যালুট। যাঁরা ভোট দেননি, তাঁদের কাছেও সমর্থন আশা করব। সাধারণ মানুষ ছাড়া আমরা চলতে পারব না। আমরা যত জিতব, আমাদের নরম হতে হবে, দায়িত্ব বাড়বে, মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারব।”

এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার একাধিক মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে যে কোনও ভাবেই আর আপোশ নয়, তার বার্তা দিয়েছেন। এসবের পরেই অতি সাম্প্রতিক অতীতে উঠে এসেছে আড়িয়াদহের জেসিবি, সোনারপুরের জামালদের নাম। তাঁর প্রাসাদপম বাড়ি। বিরোধীদের কটাক্ষ, “ওঁরাই নাকি তৃণমূলের সম্পদ।” কিন্তু মমতা বললেন, “এখানে বিত্তবান চাইনা, বিবেকজ্ঞান চাই।”

জমি দখল, বেআইনি নির্মাণ, কাটমানি-সহ একাধিক অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল। দলের নেতাকর্মীদের দুর্নীতির দায় মুছে ফেলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  বললেন, ” কেউ যেন আপনাদের লোভী বানাতে না পারে, ভাত রুটি খেয়ে থাকবেন, কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করবেন না।” জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “যাঁরা ইলেক্টেড হয়ে পরিষেবা দেবেন না, তাঁদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখব না। সব পৌরসভা, পঞ্চায়েত, এমএলএ, এমপি, প্রধান সবাইকে বলব, কারোর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ যেন কেউ না পাই। যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, আমরা কিন্তু উপযুক্ত অ্যাকশন নেব। গরিব থাকুন, যা আছে ঘরে, তাই খেয়ে বেঁচে থাকুন। তাহলেই আপনাদের কেউ সরাতে পারবে না।”

অত্যন্ত সহজ, সোজা সাপটা ভাষায় দলীয় কর্মীদের সচেতন করেছেন নেত্রী, কোথাও কোনও রাখঢাক না রেখেই। বড় গাড়ির বদলে, স্কুটার, সাইকেলে ঘোরার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সভামঞ্চে বক্তৃতা রাখছিলেন, তখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল। মমতা বললেন, “কী বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু গায়ে লাগবে! একবার স্নান করব, বৃষ্টির জল ধুয়ে যাবে। নোংরা মনে লাগলে, ধোয়া যাবে না।”