Bayron Biswas TMC Joining: কংগ্রেসের সবেধন নীলমণি বাইরন জোড়াফুলে, ফের বিধানসভায় শূন্য হাত

Bayron Biswas TMC Joining: তৃণমূলে যোগ দিলেন বাইরন বিশ্বাস।

Bayron Biswas TMC Joining: কংগ্রেসের সবেধন নীলমণি বাইরন জোড়াফুলে, ফের বিধানসভায় শূন্য হাত
তৃণমূলে যোগ বাইরনের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 29, 2023 | 4:45 PM

কলকাতা: অবশেষে তৃণমূলে যোগ দিলেন বাম সমর্থিত কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস। এর ফলে বিধানসভায় ফের ‘শূন্য’ হয়ে গেল হাত। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে তাক লাগিয়ে দেওয়ার পর একাধিকবার তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সম্ভনার মুখে তীব্র বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত সেই ঘাসফুলেই আশ্রয় নিলেন বাইরন। জেতার ৩ মাসের মধ্যেই এই দলবদল ঘটল।

সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে ঘাসফুল পতাকা হাতে তুলে নেন বাইরন। নবাগত বিধায়ককে মা-মাটি-মানুষের উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন অভিষেকও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই দলবদল কংগ্রেসের কাছে নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা।

উল্লেখযোগ্যভাবে এদিন তৃণমূলে যোগ দিয়ে বাইরন বলেন যে তিনি কংগ্রেসের ভোটে জেতেননি, জিতেছিলেন নিজের নাম এবং ভাবমূর্তিতে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলেন, বাইরনের সমগ্র পরিবার তৃণমূলের সমর্থক এবং বাইরন এই উপনির্বাচনের আগে একাধিকবার তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

এ ঘটনায় সঙ্গতভাবেই সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে পড়া প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এদিন বলেন, “নির্বাচনে জেতার পর স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের একজন জনপ্রতিনিধিকে তো ভয় দেখানো কিংবা হুমকি দেওয়া চলবেই। তৃণমূলের প্রথম যেটা পদ্ধতি, অর্থাৎ টাকা দেখানো সেটা দেখায়, তারপর ডান্ডা দেখায়। যখন বাইরনকে টাকার  কথা বলা হয়েছিল, তখন ও বলেছিল, আমি আপনাদের কিনে নেব, কোনও অসুবিধা নাই। তারপর যখন ওরা দেখল বাইরন ভয় পাচ্ছে না, তখন ডান্ডা দেখাল। কারণ, তৃণমূল আর কোনও ভাবেই ম্যানেজ করতে পারল না। ফলে নিয়মিত হুমকি ফোন। বাইরন নিয়ম মেনেই করেছেন যা করার, এর মধ্যে কোনও অনিয়ম নেই।”

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সকলেই খুশি, বাইরন আজকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই বছর ২ মার্চে সাগরদিঘি উপনির্বাচনে ফল ঘোষণা হয়। সেখানে সাগরদিঘির মানুষের আর্শীবাদ নিয়ে জিতেছিলেন। বিধানসভায় বিধায়ক হিসাবে শপথ নেন। আমার সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ হয়েছিল। জনসংযোগ যাত্রায় একাধিকবার ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মযজ্ঞ ও তৃণমূলের মতাদর্শকে সামনে রেখে তৃণমূলে যোগ দিলেন।” তিনি বলেন, “আমার মনে হয় বাইরন মুর্শিদাবাদে ফিরে গিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা করবেন। জাতি দলমত নির্বিশেষে কাজ করবেন। আগামী দিনে তৃণমূলের সৈনিক হিসাবে কাজ করবেন।”

বাম-কংগ্রেস জোট সম্পর্কে তিনি বলেন, “রামধনু জোটের সার্বিক ফল হচ্ছে শূন্য। কী ফল করেছে? লড়াই ছিল তৃণমূল বনাম বিজেপি। কংগ্রেসের নেতারা সিপিএম-আইএসএফের সঙ্গে জোট করে কাদের সুবিধা করে দিয়েছে? মানুষ দেখেছে। আমাদের নেত্রী ১০ দিন আগে বলেছেন, আমরা জাতীয় স্তরে কংগ্রেসকে সমর্থন করতে পারি। কিন্তু বাংলায় যেখানে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছি, সিপিএম আর বিজেপির হাত শক্তিশালী করছেন অধীর চৌধুরী।”

তৃণমূলে যোগ দিয়ে বাইরন বিশ্বাস বলেন, “আমি যে জয়ী হয়েছে, এর পিছনে কংগ্রেসের কোনও অবদান ছিল না। আমরা বরাবরই তৃণমূল করে এসেছি। তৃণমূলের টিকিট পাওয়ারও চেষ্টা করেছিলাম। পাইনি। যদি কংগ্রেসের অবদান থাকত, তাহলে তো ২০২১ সালেও জিততাম। আমি বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। আমি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর আরও বিপুল ভোটে জয়ী হব।”

এই ঘটনার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করতে গেলে, বেশ কয়েকটা মাস পিছোতে হবে। সাগরদিঘি উপনির্বাচন, আর তাতে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের জেতা, বাংলার রাজনীতিতে মাইলস্টোন তৈরি করেছিল। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট হয়েছিল সাগরদিঘি আসনটিতে। এর পর গত ২ মার্চ সাগরদিঘির ফল ঘোষণা হয়। ২২০০০ ভোটে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন বাইরন। বস্তুত, সাগরদিঘিকে মডেল করে বাম-কংগ্রেস নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছিল পঞ্চায়েতের আগে। অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বাইরন আমাদের আয়রন’। সেই বাইরনই আজ তৃণমূলে। আজকের দিনটা অধীর চৌধুরীর আত্মবিশ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাসে জল পড়ল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।