কলকাতা : বুধবার থেকে বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে শুরু হয়েছে ২ দিনের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)। শিল্প সম্মেলনের জন্য কনভেনশন সেন্টারে ৩ হাজার ৬০০ আসন রয়েছে। বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নেন দেশ বিদেশের শিল্পপতিরা। প্রথমদিন সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনে নিজের বক্তব্যে বাংলার সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন মমতা। শিল্পপতিদের রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে মমতা বললেন, একদিন শিল্পে এক নম্বর হবে বাংলা।
বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় তথা শেষ দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, বাণিজ্য সম্মেলন থেকে ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থানের প্রস্তাব এসেছে। সবমিলিয়ে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাবও এসেছে।
বিস্তারিত পড়ুন : employment : ৪৮ ঘণ্টার বাণিজ্য সম্মেলনের ‘ফল’ : বাংলায় ৪০ লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান
বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী রাজ্যে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে । সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা বলেন, “আগামী দশ বছরে বাংলা যা করবে, কেউ ছুঁতে পারবে না।” তারপরই তিনি বলেন, “ইচ্ছেশক্তি থাকতে হবে। আমরা পারব।”
২০২০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে থাবা বসিয়েছে করোনা। করোনার জেরে ধস নেমেছে অর্থনীতিতে। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “বিপর্যয় আসবে-যাবে। কিন্তু, তার জন্য উন্নয়ন থেমে থাকবে না। করোনার জন্য জীবনযাত্রা থমকে যাবে না। বিপর্যয় এলে লড়াই করব। বাণিজ্য সম্মেলন করে বাংলা রাস্তা দেখাল। এবার অন্যরা করবে।”
সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী বাংলায় কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সম্মেলন থেকে বাংলায় ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থানের প্রস্তাব এসেছে। একইসঙ্গে তিনি জানান, সম্মেলনে ১৩৭টি মউ স্বাক্ষর হয়েছে।
কোভিডের জন্য ২ বছর বন্ধ ছিল বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন। এবার সব বাধা পেরিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করেছে রাজ্য। এরপর কবে সম্মেলন হবে, আজ সেকথাও জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সম্মেলন হবে।”
“করোনাকালে সম্মেলন করা নিয়ে সংশয় ছিল। অনেকেই বলেছিলেন, করোনার এই সময়ে কীভাবে সম্মেলন করবেন? বিশ্বের কোনও দেশের প্রতিনিধিরা আসবেন না। তখন আমি বললাম, সম্মেলন করতে হবে। মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে হবে।”
মমতা বলেন, “৪২ টি দেশের ৪৩০০ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে সম্মেলন সফল।” শিল্পের জন্য বাংলাই ডেস্টিনেশন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিনিয়োগকারীদের বাংলায় বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে নিজের বক্তব্যে কোভিড যোদ্ধাদের প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রণী ভূমিকার জন্য কোভিড যোদ্ধাদের স্যালুট জানাই।”
বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের আজ দ্বিতীয় তথা শেষ দিন। গতকাল সম্মেলনে প্রথম দিনে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী রাজ্যে বিনিয়োগের একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী দশ বছরে দশ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে আদানি গোষ্ঠী। সবমিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি। আবার তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উইপ্রোর এগজ়িকিউটিভ চেয়ারম্যান ঋষদ প্রেমজি। খড়গপুরে টাটা স্টিলের সম্প্রসারণে ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে টাটা গোষ্ঠী। হাওড়ার পাঁচলায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে আইটিসি। হুগলির উত্তরপাড়ায় ডেটা সেন্টার তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে হিরানন্দানি গ্রুপ। সবমিলিয়ে আগামী কয়েকবছরে রাজ্যে দেড় কোটি কর্মসংস্থান হবে বলে আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, “১০০ দিনের কাজে রাজ্য এক নম্বরে। মাঝারি ও ছোট শিল্পে আমরা দেশের এক নম্বর। ই-টেন্ডারে এক নম্বর রাজ্য।”
বিস্তারিত পড়ুন : Bengal Global Business Summit 2022 : ‘এখন আর কর্মদিবস নষ্ট হয় না’, বাংলায় বিনিয়োগের আহ্বান মমতার
বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে নিজের বক্তব্যের শেষে কেন্দ্রকে ‘খোঁচা’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের উদ্দেশে বললেন, এজেন্সি দিয়ে শিল্পপতিদের বিরক্ত না করতে বলুন কেন্দ্রকে। যা শুনে সম্মেলনে সামনের সারিয়ে বসে থাকা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় হেসে ফেললেন।
বিস্তারিত পড়ুন : ‘কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে শিল্পপতিদের যেন বিরক্ত করা না হয়’, মমতার অনুরোধে মুচকি হাসলেন ধনখড়
বাণিজ্য সম্মেলনে বক্তৃতা শেষের সময় রাজ্যপালকে উল্লেখ করে মমতা বলেন, “বাণিজ্যের জন্য কেন্দ্রের সাহায্য চাই। আপনি রাজ্যপালদের সম্মেলনে বিষয়টি তুলুন।”
রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ নিয়ে মমতা বলেন, “রাজ্যে এখন বাণিজ্যের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। কোনও কর্মদিবস নষ্ট হয় না।” আর এই কথা বলতে গিয়ে বাম আমলের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। বলেন, বাম আমলে রাজ্যে কর্মদিবস নষ্ট হত। কিন্তু, এখন হয় না।
মমতা বলেন, করোনার জেরে ২ বছর বাণিজ্য সম্মেলন বন্ধ ছিল। ২ বছর পর বাণিজ্য সম্মেলন হচ্ছে। কোভিডের পর বাংলাতেই প্রথম বাণিজ্য সম্মেলন হচ্ছে। মহিলাদের ক্ষমতায়নেও একাধিক পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে একটি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার।
প্রথমবার বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি। তাঁকে বাণিজ্য সম্মেলনে স্বাগত জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।