কয়লা তুলে বাড়ি-ঘর নষ্ট করার অভিযোগ! লালার বিরুদ্ধে ওঠা জনস্বার্থ মামলা খারিজ করল হাইকোর্ট

মামলায় আবেদনকারী তথ্যগোপন করেছেন বলে অভিযোগ। তথ্য গোপনের হদিশ পেতেই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে আদালত।

কয়লা তুলে বাড়ি-ঘর নষ্ট করার অভিযোগ! লালার বিরুদ্ধে ওঠা জনস্বার্থ মামলা খারিজ করল হাইকোর্ট
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 25, 2021 | 7:07 PM

কলকাতা: কয়লাপাচার কাণ্ডের মূলপাণ্ডা অনুপ মাজির বিরুদ্ধে ওঠা জনস্বার্থ মামলা খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলায় আবেদনকারী তথ্যগোপন করেছেন বলে অভিযোগ। তথ্য গোপনের হদিশ পেতেই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে আদালত। বাঁকুড়ায় অবৈধভাবে কয়লা তুলে বাড়ি-ঘর নষ্ট করার দাবি তুলে মামলা করেছিলেন কালিকাপুরের বাসিন্দা। গোটা মামলায় অনুপ মাজি ওরফে লালাই যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ।

বাঁকুড়ার এই বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, অনুপ মাজির মদতেই বেআইনিভাবে কয়লা তোলার কারণে তাঁদের বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু মামলাকারী কার্যত একই মর্মে অন্য একটি মামলাও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির এজলাসে দায়ের করেছিলেন। এই মামলার বিষয়টি আদালতকে না জানানোর কারণেই লালার বিরুদ্ধে থাকা এই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। কেন পৃথক মামলার তথ্য গোপন করা হল? আদালতের এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি মামলাকারী। তারপরই অনুপ মাজির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এই মামলা খারিজ করে আদালত। যদিও তথ্য গোপনের জন্য মামলাকারীকে কোনও জরিমানা করা হয়নি।

১৯৯১ সালে বাঁকুড়ার মেজিয়ায় মাটির নিচে কয়লা খনির খোঁজ পাওয়া যায়। তারপর থেকে ইসিএলের মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন শুরু হয় এই খনি এলাকায়। অভিযোগ, এরপরই এলাকায় শুরু হয় বেআইনি কয়লা উত্তোলন। স্থানীয়রা এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেন। বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে অভিযোগও জানান। এরপরই সেখানে বসানো হয় পুলিশ ক্যাম্প। সূত্রের খবর, এরপর কয়লা চুরির ক্ষেত্রে কিছুটা লাগাম দেওয়া গিয়েছিল।

কিন্তু ২০১৫ সালে তৎকালীন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সেই ক্যাম্প তুলে দেন বলে আদালতে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তারপর থেকে দেদার বেআইনি কয়লা তোলা শুরু হয়। ফলে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাড়ি ঘরে ফাটল ধরতে থাকে। ২০১৭ সালে গ্রামবাসীরা হাইকোর্টে মামলা করেন। সেই মামলায় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি জেলাশাসককে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদতে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর ফের চলতি বছরের অগস্টে মামলা হয় হাইকোর্টে। এলাকায় ফের পুলিশ ক্যাম্প বসানো এবং সিবিআই তদন্ত চাওয়া হয়।

বাংলা নির্বাচনের ঠিক আগে এ রাজ্যে সামনে আসে নতুন কেলেঙ্কারি। অবৈধভাবে কয়লা পাচার করে উঠত কোটি কোটি টাকা। আর সেই টাকা প্রভাবশালীদের অ্যাকাউন্টে যেত বলেও অভিযোগ ওঠে। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে একের পর এক নাম। আইএএস, আইপিএসদের মদত ছিল বলে জানতে পারেন গোয়েন্দারা। সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে অনুপ মাজি ওরফে লালা নামে এক কয়লা ব্যবসায়ীর নামও।

সিবিআই কয়লাকাণ্ডে মামলা দায়ের করে তদন্তে নামার পর চোখ কপালে ওঠে। গত ২৭ নভেম্বর কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তভার নেওয়ার পর থেকে লালাকে নোটিস পাঠায় সিবিআই। কিন্তু সে হাজিরা নিপুণভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর তাঁকে নাগালে পেতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টেও যায় সিবিআই। জারি হয় লুকআউট নোটিসও। কিন্তু কোনও কিছুতেই কিছু হয়নি। এরইমধ্যে গত মার্চ মাস নাগাদ সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে জানায় এখনই লালাকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে সিবিআইকে তদন্তে সবরকম সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হয় লালাকে। এরপর ৩০ মার্চ প্রথমবার সিবিআই দফতরে হাজির হন অনুপ মাজি ওরফে লালা। এরপর থেকে একাধিক বার নিজাম প্যালেসে গিয়েছেন তিনি। যদিও সিবিআই চাইছে লালাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে। অন্যদিকে লালাও দাবি করেছেন, তিনি কোনও ভাবেই এই ঘটনায় যুক্ত নন। আরও পড়ুন: আচমকা ‘চোখ’ বন্ধ কলকাতা পুলিশের! বিকল হয়ে গেল হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা