পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের মাছ বিক্রেতা অনুপই আজ কয়লাচক্রের ‘কিংপিন’ লালা

লালাকে জেরা করে প্রভাবশালীদের নাম জানতে চাইবে সিবিআই (CBI)।

পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের মাছ বিক্রেতা অনুপই আজ কয়লাচক্রের 'কিংপিন' লালা
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Mar 30, 2021 | 4:12 PM

কলকাতা: রাজ্যে বিস্তীর্ণ খনি অঞ্চল। কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। সেই ব্যবসাকে হাতিয়ার করে নিজের নয়া সাম্রাজ্য বানান অনুপ মাজি ওরফে লালা। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম ভামুরিয়ায় বেড়ে ওঠা একটা ছেলের ‘কালো’ টাকার অধীশ্বর হয়ে ওঠার গল্পটা অনেকটা কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য।

ভামুরিয়া পশ্চিম বর্ধমানের একেবারে গা ঘেঁষা এলাকা। চার ভাই, তিন বোনের সঙ্গে সেখানেই বড় হন অনুপ। ছোট থেকেই ক্ষমতার শিখর ছোঁয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। পড়াশোনার থেকে কাঁচা টাকাতেই তাঁর বেশি আগ্রহ ছিল। তাঁর বাবাও নাকি কাজ করতেন ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল)-এর ভামুরিয়া কোলিয়ারিতে।

মাছ বিক্রি করা শুরু করেন অনুপ। তবে ছোট থেকেই কালো হিরের চমক টানত তাঁকে। সে টানই ধীরে ধীরে নামিয়ে আনে ‘কালো’ পথে। এরপর আর পিছনে তাকাননি। ভামুরিয়ায় সাদামাটা অনুপ হয়ে গেলেন কয়লার কারবারী লালা। ইসিএলের কয়লা চুরি করে সে কয়লায় বানিয়েছিলেন নিজের সাম্রাজ্য।

আরও পড়ুন: প্লাস্টিকে জলের বোতল ঝুলিয়ে সিবিআই দফতরে কে? লালাকেই প্রশ্ন ‘আপনি কি লালা?’

কিন্তু টাকার নেশায় আরও ছুটতে থাকেন লালা। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বাড়ে সখ্যতা। প্রভাবশালীদের সঙ্গে শুরু করেন ‘ডিল’। রাজনৈতিক প্রভাবশালী, পুলিশের প্রভাবশালী, প্রশাসনিক প্রভাবশালীদের কাজে লাগিয়ে অর্থের মিনার তৈরি করে ফেলেন অচিরেই। মোটা টাকার বিনিময়ে এই প্রভাবশালীদের ট্যাঁকে গুজে রাখতেন লালা।

গত নভেম্বরে সিবিআই মামলা দায়ের করে তদন্তে নামার পর চোখ কপালে ওঠে। লালার জাল যে কত দূর ছড়িয়েছে তার তল এখনও পাননি তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যেই তাঁকে তিনবার তলব করে সিবিআই। হাজিরা এড়িয়ে যান লালা। গ্রেফতারি পরোয়ানা থেকে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, পলাতক ঘোষণা- কিছুতেই কোনও লাভ হয়নি।

অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে ঢাল করে সিবিআইয়ের দফতরে পৌঁছলেন লালা। গত চার মাস তিনি কোথায় ছিলেন এখন সেটাই বড় প্রশ্ন। কারণ, প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, লালা বিদেশে পালিয়েছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সদ্য তাঁকে রক্ষাকবচ দিয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে এত তাড়াতাড়ি কলকাতায় তাঁর আসার কথা নয়। তার মানে স্পষ্ট, রাজ্যেই ছিলেন তিনি। এ বিষয়ে এদিন লালাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে সিবিআই।

আরও পড়ুন: কয়লাকাণ্ডে বড় খবর! অবশেষে সিবিআই দফতরে হাজিরা লালার

সিবিআই সূত্রে খবর, কোন কোন প্রভাবশালী লালার ব্যবসাকে বাড়াতে সাহায্য করেছেন তাও জানতে চাওয়া হতে পারে। কয়েক হাজার কোটি টাকার এই ব্যবসা প্রভাবশালীদের হাত মাথায় না থাকলে চালানো সম্ভব নয় বলেই মনে করছে সিবিআই। কার মাধ্যমে সেই সাম্রাজ্যের বিস্তার তা জানতে চাইতে পারে তারা। কত দিন ধরে, কত টাকা লালা তুলেছে, কে কে জড়িত তাও জানতে চাওয়া হতে পারে। ইতিমধ্যেই লালার একটি খাতা পেয়েছে সিবিআই। কাকে, কত টাকা সে দিয়েছে তা লেখা সেই খাতায়। মাসোহারার সেই খাতা নিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।