Weather Update: নিম্নচাপ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে, দূর থেকেই ‘কলকাঠি’ বাংলার পুজোয়?
Weather Update: নিম্নচাপ রয়েছে অনেকটা দূরে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে। সহজ কথায়, অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে।
কমলেশ চৌধুরী: পুজোর মধ্যে বাঙালির রক্তচাপ বাড়িয়েছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ। মহাষ্টমীতে দফায় দফায় বৃষ্টি, কোথাও মণ্ডপ ভেঙে পড়েছে, কোথাও মাটিতে লুটোচ্ছে আলোর গেট, কোথাও বৃষ্টির জলে কাদা কাদা মণ্ডপের মাঠ। ‘খলনায়ক’ নিম্নচাপ যে বাংলার দোরে, এমন কিন্তু নয়। নিম্নচাপ রয়েছে অনেকটা দূরে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে। সহজ কথায়, অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে।
নিম্নচাপ অন্ধ্র উপকূলে আর বিঘ্ন বাংলায়? দূর থেকেই কলকাঠি?
শুনলে মনে হবে, এ যেন প্রকৃতির ষড়যন্ত্র! আসলে সবই হাওয়া-বাতাসের খেলা। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘নিম্নচাপ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের কাছে থাকলেও, তার প্রভাবে দখিনা-পুবালি বাতাস সাগর থেকে সরাসরি বাংলার ভিতরে ঢুকে আসছে। এই দখিনা-পুবালি বাতাস দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির জন্য অনুকূল। দখিনা বাতাসও ঢুকছে, তার জন্য উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া, বায়ুমণ্ডলের উপর ও নীচের স্তরে বাতাসের গতি ও অভিমুখের বড়সড় পার্থক্য রয়েছে, যার ফলে নিম্নচাপ এক জায়গায়, বৃষ্টি হচ্ছে আর এক জায়গায়।’
যা অষ্টমীর উপগ্রহ চিত্র দেখলে একেবারে জলের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। অন্ধ্র বা ওড়িশা উপকূলে ইতিউতি মেঘ। যত মেঘপুঞ্জ হয় বাংলা নয়তো বাংলাদেশের উপর। শুধু যে সাগরের বাতাসে বাংলার পুজোর ‘হাওয়া খারাপ’, তা নয়। নেপথ্যে বিপরীতধর্মী বাতাসও। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে শুকনো, ঠান্ডা বাতাস বইছে। উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে সেই বাতাস আসছে। বাংলার মাঝামাঝি অঞ্চলে এই শুকনো, ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের জোলো বাতাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি হচ্ছে।’
এই বিপরীতধর্মী বাতাসের সংঘর্ষের জন্যই অষ্টমী জুড়ে টানা বৃষ্টি হয়েছে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ বা উত্তর-দক্ষিণ দিনাজপুরে। নবমীতেও এই জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস উত্তরের বাকি জেলাতেও। অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে। পূর্বাভাস মিলে গেলে বিপাকে পড়তে পারেন পাহাড়ের পর্যটকরাও।
তাহলে কী দাঁড়াল? মণ্ডপে গেলেও বৃষ্টি, বেড়াতে গেলেও কপালে সেই বৃষ্টিই। অবশ্য আবহাওয়া যে খারাপ হতে পারে, তা ২৬ সেপ্টেম্বরই বলে দিয়েছিল আলিপুর। সে সময় আবহবিদরা নজর রাখছিলেন সুদূর দক্ষিণ চিন সাগরে। ফিলিপিন্স সাগরে সৃষ্ট টাইফুন নোরু ফিলিপিন্সের একাধিক দ্বীপে ধ্বংসলীলা চালানোর পর দক্ষিণ চিন সাগরে চলে আসে। সেখান থেকে ঢুকে পড়ে ভিয়েতনামে। আবহবিদরা অঙ্ক কষে দেখেন, ভিয়েতনাম পৌঁছে টাইফুন দুর্বল হলেও, একেবারে ফুরিয়ে যাবে না। লাওস, থাইল্যান্ড, মায়ানমার হয়ে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছবে। স্থলভাগ পেরিয়ে সাগরে পৌঁছনোর অর্থই হল ফের শক্তি বাড়ানোর সুযোগ পাবে। বাস্তবেও হল তাই। নোরুর অবশিষ্টাংশ থেকে বঙ্গোপসাগরে জন্ম ঘূর্ণাবর্তের। সোমবার সেই ঘূর্ণাবর্তই শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে পরিণত। ৫ হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়েও উত্সবে ‘কাঁটা’ নোরু-জাত নিম্নচাপ।
নিম্নচাপ শুধু অন্ধ্র লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে রয়েছে, তা নয়। নিম্নচাপ এগোবেও অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে। শুধু হাওয়া-বাতাসের খেলায় বারবার ব্যাঘাত বাংলার পুজোয়। তবে এর মধ্যেও রুপোলি রেখা দেখছেন সঞ্জীববাবু। তাঁর মন্তব্য, ‘নিম্নচাপ অক্ষরেখার অবস্থান বাংলায় বৃষ্টির জন্য ততটা অনুকূল নয়। তেমনটা হলে দিনভর বৃষ্টি হতে পারত। যা হয়েছিল সেপ্টেম্বরের প্রথম নিম্নচাপের সময়।’ একে প্রকৃতির পুজোর ছাড় হিসেবেই দেখছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।