Sheikh Sahajahan: ‘ভদ্রলোক’, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ শেখ শাহজাহানের গ্রেফতার তৃণমূলের বেঁধে দেওয়া সময়েই কেন? উঠছে প্রশ্ন
TMC: যখন তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে ইডি, সেই সময়ই রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় শাহাজাহান প্রসঙ্গে বলেন, "ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদে ব্রিটিশরা অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকেই খুঁজে পায়নি। এখনও বহু রাজ্যে অনেক অপরাধী ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব সময় যে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে, এমন কোনও মানে নেই"।
কলকাতা: অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন সন্দেশখালির বাঘ শেখ শাহাজাহান। সন্দেশখালি থেকেই ধরা পড়ল শেখ শাহাজাহান। গত ৫ জানুয়ারি থেকে তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল ইডি। সন্দেশখালিতে গিয়ে আক্রমণের মুখেও পড়তে হয় ইডিকে। এরপর সন্দেশখালির জল অনেকদূর গড়িয়েছে। যাঁর ভয়ে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত, তাঁর বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়েছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। রাত নামলেই মহিলাদের তুলে নিয়ে যাওয়া থেকে জমি জবরদখল- শাহজাহান ও তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ। গ্রামবাসীরা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিলেন, সন্দেশখালিতেই লুকিয়ে রয়েছেন শাহজাহান। তাতে কোনও লাভ হয়নি। তবে তৃণমূলের তরফে গ্রেফতারির সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার পরই রাতারাতি পুলিশের জালে উঠে এল শাহজাহান। কীভাবে সম্ভব হল এটা? বিজেপির তরফে উঠছে এই প্রশ্ন।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরই নেতা শেখ শাহাজাহান। বসিরহাটের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার দাপট কতটা ছিল, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পেলেও, তৃণমূলের গুডবুকেই এতদিন ছিলেন শাহজাহান। কেউ বলেছেন ভদ্রলোক, তো কেউ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কেউ তো সোজাসুজি সন্দেশখালির বাঘ তকমাও দিয়ে দিয়েছিলেন!
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডায়েরিতেই নাকি প্রথম শাহাজাহানের উল্লেখ মিলেছিল। যখন তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে ইডি, সেই সময়ই রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় শাহাজাহান প্রসঙ্গে বলেন, “ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদে ব্রিটিশরা অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকেই খুঁজে পায়নি। এখনও বহু রাজ্যে অনেক অপরাধী ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব সময় যে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে, এমন কোনও মানে নেই”। পরে যদিও তিনি এই মন্তব্যের সঙ্গে যোগ করেন,যে শেখ শাহজাহান যদি অপরাধ করে থাকে,তাহলে আদালত বিচার করবে এবং যথাযথ শাস্তি দেওয়া হবে।
তার আগে শাহজাহানকে ‘ভদ্রলোক’ বলেছিলেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তিনি বলেছিলেন, “দলের অস্বস্তির কোনও ব্যাপার নেই ৷ একজন ভদ্রলোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমি যদি তাঁকে না পাই, তাহলে আমাকে অন্য কারও মাধ্যমে তাঁকে খুঁজে পেতে হবে।”
শাহজাহানকে “সন্দেশখালির বাঘ” বলেছিলেন তৃণমূলের আরেক নেতা শান্তনু জানা। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে সন্দেশখালির পারদ। রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয় সন্দেশখালি। গোটা দেশবাসীই প্রশ্ন তোলেন, “কোথায় শাহজাহান, কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না তাঁকে?”
শাহজাহানের যাবতীয় কীর্তি ফাঁস হতেই যেখানে বিপাকে পড়েছিল তৃণমূল, সেই সময় দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “তৃণমূল শেখ শাহজাহানকে গার্ড করছে,এমন ভুল ধারণা কেউ মনে রাখবেন না। যদি কেউ গার্ড করে সেটা জুডিশিয়ারি গার্ড করছে। জুডিশিয়ারি স্টে তুলে দিক তারপর যদি না করতে পারে একই প্রশ্ন এখানে এসে করবেন।”
এদিকে, দিন তিনেক আগেই এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি লেখেন, “শেখ শাহজাহানের গ্রেফতার নিয়ে অভিষেক সঠিক বলেছিলেন। আদালতের আইনি জটেই বিষয়টা আটকে ছিল। তার সুযোগে রাজনীতি করছিল বিরোধীরা। আজ হাইকোর্ট সেই জট খুলে পুলিশকে পদক্ষেপের অনুমোদন দেওয়ায় ধন্যবাদ। সাত দিনের মধ্যে শাহজাহান গ্রেফতার হবে।”
তাঁর এই পোস্টের পরই জোর চর্চা শুরু হয়। যেখানে পুলিশ প্রায় দুই মাস ধরে শাহজাহানের টিকি খুঁজে পাচ্ছে না, সেখানেই কবে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে, তার টাইমলাইন কীভাবে বেঁধে দিল তৃণমূল, তা নিয়ে তুমুল তরজা শুরু হয়।
সাতদিন সময় লাগেনি, তার আগেই কুণাল ঘোষের ভবিষ্যতবাণী মিলে গিয়েছে। সত্যিই গ্রেফতার হয়েছেন শেখ শাহাজাহান। তৃণমূলের এই “ভদ্রলোক” নেতার গ্রেফতারির পর দল কী বলে, তাই-ই এখন দেখার।