Kolkata New Metro: জানেন কি হাওড়া-Sec V মেট্রো চালু হলে কয়েক হাজার মানুষ সমস্যা পড়বেন?
Howrah- Sec V Metro: এতে অফিসযাত্রীদের মুখে স্বস্তির চওড়া হাসি, ঝঞ্ঝাটের যাত্রাপথে এবার সুরাহা! কিন্তু একটা বিষয় কি ভেবে দেখেছেন, মেট্রো চালু হলে অনেকেরই পড়বে সমস্যায়! পেটে পড়বে টান! কারা?

কলকাতা: বাংলায় এখন মেট্রো বিপ্লব! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে কলকাতা শহর জুড়ছে নতুন তিন মেট্রো লাইনে। শুক্রবার উদ্বোধন হচ্ছে কলকাতা মেট্রোর তিনটি সম্প্রসারিত লাইন। এর আগেই হাওড়ায় গঙ্গার তলা থেকে মেট্রো ছুটেছে, সংযুক্ত হয়েছে শিয়ালদহ- সেক্টর ফাইভ। শহরে জুড়ে এখন মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত সুড়ঙ্গপথ। কিন্তু এবার সবটা এক সুতোয় গাঁথা হল! হাওড়া থেকে শিয়ালদহ পৌঁছে যাবেন ১১ মিনিটেই, আবার হাওড়া থেকে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যাবে শহরের অন্যতম তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র সেক্টর ফাইভেই। তাও প্রায় দু’ঘণ্টার যাত্রাপথ মাত্র ৩০-৩৫ মিনিটেই! এতে অফিসযাত্রীদের মুখে স্বস্তির চওড়া হাসি, ঝঞ্ঝাটের যাত্রাপথে এবার সুরাহা! কিন্তু একটা বিষয় কি ভেবে দেখেছেন, মেট্রো চালু হলে অনেকেরই পড়বে সমস্যায়! পেটে পড়বে টান! কারা? সেই বিষয়টি নিয়েই আজকের দ্য ব্রিফিং রুমে বিস্তারিত আলোচনা করব আমি শর্মিষ্ঠা।
গ্রিন লাইন- হাওড়া টু সেক্টর ফাইভ
গত বছর গঙ্গার নীচ দিয়ে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে। তবে তাতেও কিছুটা সীমাবদ্ধতা ছিল। অসম্পূর্ণ ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো অর্থাৎ গ্রিন লাইন কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ বার সেই প্রতিবন্ধকতাও কাটল। হাওড়া থেকে শিয়ালদহ এখন মাত্র ১১ মিনিটেই। এখনও পর্যন্ত এই যাত্রাপথের একমাত্র পরিবহনের ভরসা বাস! একাধিক বাসও চলে এই রুটে, তবে আসতে সময় লেগে যেতে ঘণ্টা খানেকেরও বেশি। এবার সহজ হল যাত্রাপথ! আবার ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা পুরোদমে চালু হলে তার সুবিধা পাবে কলকাতার দুই প্রধান অফিসপাড়াও। এসপ্ল্যানেড চত্বরের অফিসপাড়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে এত দিন শুধু হাওড়া স্টেশন থেকেই মেট্রোর সুবিধা পাওয়া যেত। এখন শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও সেই সুবিধা মিলবে। পাশাপাশি, হাওড়া থেকে সরাসরি মেট্রোয় চেপে পৌঁছে যাওয়া যাবে মাত্র ৩৫ মিনিটেই কলকাতার তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র সল্টলেক সেক্টর ফাইভে। সম্ভাব্য ৩০ টাকা খরচ করেই! যা এতদিন কেবল শিয়ালদহ স্টেশন থেকেই মিলত।
এক্ষেত্রে বলতেই হয়, নিত্য যাঁরা হাওড়া-শিয়ালদহের মেইন কিংবা কর্ড লাইন থেকে সেক্টর ফাইভ আসেন, তাঁদের যন্ত্রণাটা কী! সেক্টর ফাইভে দিনদিন বাড়ছে অফিসের সংখ্যা, বাড়ছে অফিসযাত্রীদের, আর চাপ বাড়ছে অটো কিংবা বাসে! প্রতিদিনের একই ছবি! বাসে বাঁদুরঝোলা ভিড়, আর অটোয় দীর্ঘ লম্বা লাইন! অফিস যাতায়াতেই দিনের অর্ধেক এনার্জি শেষ! শিয়ালদহ-সেক্টর ফাইভ মেট্রো চালু হয়েছিল, কিন্তু হাওড়া স্টেশন যাঁদের গন্তব্য! এবার শিকে ছিঁড়ল তাঁদের কপালেও! আর কিছুটা ক্ষতি হতে পারে, শিয়ালদহগামী বাসরুটি গুলির।
রুট বালি হল্ট-উল্টোডাঙা, তাতে মার খাবেন কারা?
হাওড়ার মেইন ও কর্ড লাইনের বাসিন্দারা অর্থাৎ যাঁরা শ্রীরামপুর, চন্দননগর, ব্যান্ডেল, শেওড়াফুলি, ডানকুনি, কিংবা আরও বেশ কিছুটা দূরের স্টেশন থেকে যাঁরা সেক্টর ফাইভ কাজ করতেন, তাঁদের অধিকাংশই মূলত বালি হল্ট স্টেশনে নামেন, তারপর বাস কিংবা শাটল বা অ্যাপ ক্যাবে সেক্টর ফাইভ আসেন। ওই রুটে বাসও চলে একাধিক, যেমন বলতে গেলে S-23, C-23 A, NDRTC, ছাড়াও আরও বেসরকারি বাস রয়েছে প্রচুর। কিন্তু একে সেই বাসে প্রবল ভিড়, ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা, আর অফিস পাড়ায় ঢুকতেই সময় লেগে যেত ঘণ্টা দেড়েক! আর সেখানে এই মেট্রো চালু হলে হাওড়া থেকে ৩৫ মিনিটেই সেক্টর ফাইভ পৌঁছে যাবেন অফিসযাত্রীরা। আর সেক্ষেত্রে মেট্রো চালু হলে মার খেতে পারেন বালি হল্ট, বালি খালে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শাটল ড্রাইভাররা। বাস মালিকদের তো আগে থেকেই অভিযোগ ছিল, তেলের খরচ উঠছে না! মেট্রো চালু হলে বাসের ভিড় কমতে থাকবে, চাপ বাড়তে পারে বাস মালিকদের। তবে যাঁরা ইকোস্পেস, নারকেলডাঙার দিকে কাজে যান, তাঁদের ভরসা সেই বাস।
ডানকুনির প্যাসেঞ্জারদের সুবিধা
ডানকুনি থেকে যাঁরা আসেন রোজ সেক্টর ফাইভ, তাঁদের বরাবরই অভিযোগ, বিধাননগর থেকে ডানকুনি লাইনের ট্রেন কম। একে সেক্টর ফাইভ থেকে বেরনোই ঝক্কি, তারপর ট্রেন মিস হলে দুর্ভোগের অন্ত নেই। তাঁরাও এখন সরাসরি সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া স্টেশন পৌঁছে যেতে পারেন। আর তারপর ট্রেনে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারেন ডানকুনি।
যদিও এক্ষেত্রে একটা বিষয় বলতেই হয়, অনেকেই মনে করেছিলেন, শিয়ালদহ-সেক্টর ফাইভ মেট্রো চালু হলে বিধাননগর থেকে বাস-অটো ধরার ভিড় কমবে! তেমনটা বোধহয় খুব একটা হয়নি, সেটা রোজ সকালে ৮-১১টার মধ্যের বিধাননগর স্টেশনের হাল ধরলেই বোঝা যাবে।
সেক্টর ফাইভ মেট্রো রুটের অটো
এক্ষেত্রে আরও একটা বিষয় বলতেই হচ্ছে, শিয়ালদহ-সেক্টর ফাইভ মেট্রো যখন চালু হল, এখনও সেক্টর ফাইভ থেকে সেক্টর ফাইভ মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত অটো চলা শুরু হল। কিন্তু সেটা এখন হাতে গোনা! সেক্ষেত্রে বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই ভরসা বাস! মনে করা হচ্ছে, হাওড়া -সেক্টর ফাইভ মেট্রো চালু হলে সেক্টর ফাইভ মেট্রো স্টেশনের ভিড় বাড়বে, ফলে বাড়তে পারে অটোরও সংখ্যা।
অরেঞ্জ লাইন
২২ তারিখ উদ্বোধন হচ্ছে আরও একটি রুটে। এবার থেকে আপনি সোজা নিউ গড়িয়া থেকে বেলাঘাটা অবধি আসতে পারবেন। তবে এর আগে নিউ গড়িয়া থেকে মেট্রো ধরলে রুবি পর্যন্ত আসা যেত। কিন্তু রুবি অবধি এসে লাভটাও বা কী, তা নিয়েই নানা মহলে প্রশ্ন ছিল। এবার রুবি থেকে এক্সটেন্ড হয়ে আসতে পারবেন বেলেঘাটা পর্যন্ত, ভাড়া ২০ টাকা। সায়েন্স সিটির সামনেই যে মেট্রো স্টেশনটা রয়েছে, নাম দেওয়া বয়েছে বরুণ সেনগুপ্ত, তার থেকে কয়েক পা এগোলেই বেলেঘাটা মেট্রো স্টেশন। কিন্তু এখনও বাইপাসের ধারে মেট্রো থেকে নেমে যাতায়াতের অসুবিধা। কারণ কোনও অটো চলে, ভরসা সেই বাস, তবে তাও কানেক্টিং পয়েন্ট নয়। আর এখানেই জট রয়ে গেল, প্রশ্ন তুলছেন মেট্রো কর্তারা। তাঁরা বলছেন চিংড়িহাটাটা হয়ে গেলে বড্ড ভাল হত, জোড়া গেল না চিংড়িহাটা। অগত্যা, সেক্ষেত্রে ভরসা বেলঘাটা থেকে বাস!

