Wood Smuggling’s Exclusive Video: নদীতে ভাসিয়ে কাঠ পাচার, বাস্তবের ‘পুষ্পা’দের দাপট বাংলায়
Wood Smuggling : নদী দিয়ে ভেসে আসছে বহুমূল্য সব কাঠ। ভাববেন না, কাঠগুলি নদীতে এমনি ভেসে আসছে। আসলে নদী দিয়ে আনা হচ্ছে।
কলকাতা : কয়েকমাস আগে পর্দা কাঁপিয়েছে দক্ষিণী সিনেমা ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’। পর্দার নায়কের কাঠ পাচারের দৃশ্য অভিভূত করেছে দর্শকদের। হাততালির ঝড় উঠেছে সিনেমা হলে। সেই দৃশ্যই বাস্তবে হচ্ছে বাংলার মাটিতে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, সুন্দরবনে দেখা যাচ্ছে বাস্তবের ‘পুষ্পা’দের দাপট। তাদের কাঠ পাচারের (Wood Smuggling) পদ্ধতি যেকোনও গল্পের সঙ্গে টক্কর দেবে। টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধিরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সেইসব কাঠ পাচারের কাহিনির খোঁজ করলেন।
কোচবিচারের বক্সিরহাটে রমরমিয়ে চলছে কাঠ চোরাচালানের ব্যবসা-
অসম-বাংলা সীমান্তে রায়ডাক নদী। নদীর উপর বাঁশের সাঁকো। আর সেই সাঁকো পেরোলেই চোখে পড়বে সারি সারি চেরাই কল। সেখানে কাঠ কাটার শব্দ। কিন্তু, কাঠ আসছে কোথা দিয়ে? নদীর দিকে চোখ ফেরালেই সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। নদী দিয়ে ভেসে আসছে বহুমূল্য সব কাঠ। ভাববেন না, কাঠগুলি নদীতে এমনি ভেসে আসছে। আসলে নদী দিয়ে আনা হচ্ছে। নদী থেকে তুলে কাঠগুলি আনা হচ্ছে চেরাই কলগুলিতে। সেখানে চেরাইয়ের পর বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে কাঠগুলি।
কোথা থেকে আসছে এই কাঠ?
টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধির কাছে প্রথমে মুখ খুলতে চাইলেন না কেউ। অনেক চেষ্টার পর এই কাজের সঙ্গে জড়িত দু-একজন জানালেন, ভুটান, অসম থেকে কাঠ কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উত্তরের নদী দিয়ে এপারে চলে আসছে কাঠ। নদীপথে আসছে শাল, সেগুন সহ বহুমূল্য কাঠ। নৌকার মতো কাঠ একসঙ্গে বেঁধে ভাসানো হয় জলে। দামি কাঠ টিউব দিয়ে বেঁধে ভাসানো হয়। ভুটান, অসম, ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে আসে শাল, সেগুন। এই চোরাই কাঠের কারবারেই দিন গুজরান হয় বক্সিরহাটের বহু পরিবারের। কাঠের কলে কাজ করেই চলে সংসার।
জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের জঙ্গলে সক্রিয় চোরাচালানকারীরা-
ঘন জঙ্গল। দামি সব গাছ। জলপাইগুড়ি জেলায় কাঠ মাফিয়াদের বাড়বাড়ন্তের খবর বিভিন্ন সময় সামনে আসে। উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে ভাল গুণগতমানের শাল কাঠ পাওয়া যায় মরাঘাট রেঞ্জের জঙ্গলে। তাই মরাঘাট, ডায়না, দলগাঁও রেঞ্জের জঙ্গলেই কাঠ মাফিয়াদের নজর।
কীভাবে কাঠ পাচার হয়?
কোন গাছ কাটা হবে, তা নিয়ে রীতিমতো ‘রেইকি’ করে পাচারকারীরা। দিনের বেলায় গাছ চিহ্নিত করে তারা। আর অন্ধকার হলেই সেই গাছগুলি কাটা হয়। রাতের মধ্যেই গাছ কেটে ব্লক তৈরি পাচারকারীরা। তারপর ভ্যান, সাইকেলে করে কাঠগুলি পাচার করা হয়। নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠানো হয়।
বনদফতরের নজর এড়াতে নানা ফন্দিও আঁটে চোরাকারবারিরা। পাচারের সময় বন কর্মীদের দিকভ্রষ্ট করতে, কোথাও হাতি ঢোকার ভুয়ো খবর, কোথাও আবার কাঠ চুরির ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়। বনকর্মীরা যখন সেইসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সেই সময় চলে অবাধে কাঠ লুঠ।
সুন্দরবনে চোরাকারবারিদের ‘গর্জন’-
ভয়াল ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করে। বজায় রাখে পরিবেশের ভারসাম্য। অথচ সুন্দরবনের সেই ম্যানগ্রোভের উপরই কোপ চোরাকারবারিদের। চুরি হয়ে যাচ্ছে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া। কেউ বলছেন, ভেড়ি তৈরি করতে নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হচ্ছে। বেআইনিভাবে নদীর তট দখল করতেও দাপাদাপি করছে জমি মাফিয়ারা। আর তাতে কোপ পড়ছে ম্যানগ্রোভে।
রায়দিঘির কঙ্কনদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের বুড়ির পোল এলাকা। গত কয়েক মাসে মণি নদী সংলগ্ন এলাকায় কয়েকশো বিঘা ম্যানগ্রোভ জঙ্গল ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। রাতারাতি সেখানে তৈরি হয়েছে মাছের ভেড়ি। এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ম্যানগ্রোভের ধ্বংসাবশেষ। ভেড়ির পাশেই মজুত সুন্দরী, গরান, গেঁওয়ার কাঠ। এই কাঠই চড়া দামে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বিজেপির অভিযোগ, সবকিছুই চলছে শাসকদলের ছত্রছায়ায়। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসকদল।
রাজনৈতিক এই চাপানউতোরের মধ্যে সাফ হয়ে যাচ্ছে জঙ্গল। বাস্তবের ‘পুষ্পা’-রা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে গাছ কাটলে মানুষের অস্তিত্বও দ্রুত বিপন্ন হয়ে পড়বে। পরিবেশ বাঁচাতে গাছ রক্ষা করতে হবে। কিন্তু, এই কথা চোরাচালানকারীদের কানে ঢুকবে কি?