Swarnendu Das: অসহ্য যন্ত্রণা, তবু খবরে চোখ

Swarnendu Das: ১৩ জুন ওর জন্মদিন ছিল। মাঝ রাতে রিপোর্টার্স গ্রুপে সহকর্মীদের উইশ দেখে ও লিখেছিল, "মহান শক্তিমান-এর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন দ্রুত আমায় কাজে ফিরিয়ে দেন।"

Swarnendu Das: অসহ্য যন্ত্রণা, তবু খবরে চোখ
স্বর্ণেন্দু দাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 23, 2022 | 7:52 PM

রাজা চট্টোপাধ্যায়

মৃত্যু তখন মাত্র তেরাত্রি দূরে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এসএসকেএম-এর কেবিনে শুয়ে স্বর্ণেন্দু। যন্ত্রণা কমানোর ওষুধের ঘোরে দু’টো চোখ বুজে আসছে বার বার। কান দু’টো কিন্তু সজাগ। বললাম, “তোর মোবাইলটা কই? খবর চেক করছিস না।” ব্যস ঘোর কাটতেই বউকে বলল, “মিতালী, আমার মোবাইলটা দাও তো।” বাচ্চারা যেমন খেলনা নিয়ে আনমনা হয়ে যায়, ঠিক তেমনই হাতে মোবাইলটা পেয়েই অন্য মনস্ক হয়ে গেল স্বর্ণ। খবরের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজতে শুরু করল। কোন খবরটা অফিসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করা যায়! প্রিয় জন, শুভাকাঙ্খীরা যখন অনিবার্য দুঃসংবাদের আশঙ্কায় মনমরা, স্বর্ণেন্দু তখনও খবর খুঁজে গিয়েছে। উত্থান শক্তি দূরের কথা, হাওয়া ভরা বিছানায় শুয়ে পাশ ফেরার সামর্থটুকু হারিয়ে ফেলেছিল। তখনও বলে চলেছে, ডাক্তার বলেছে আমি ক্রমশ ভালোর দিকে। চ্যানেল-এর টিআরপি ক্রমেই বাড়ছে শুনে ঠোটের কোনে টিম-ম্যান সুলভ হাসি।

১৩ জুন ওর জন্মদিন ছিল। মাঝ রাতে রিপোর্টার্স গ্রুপে সহকর্মীদের উইশ দেখে ও লিখেছিল, “মহান শক্তিমান-এর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন দ্রুত আমায় কাজে ফিরিয়ে দেন।” সাহসীকে সাহস জোগানো সহজ। তাই আমরা সবাই বলতাম, তুই ঠিক খবরের ময়দানে ফিরবি। ও ছিল জাত রিপোর্টার। স্থলে জলে অন্তরীক্ষে যে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনায় ওর আগ্রহ অতুলনীয়। কাশ্মীরে কোনও পাহাড়ের মাথায় ভারতীয় জওয়ানদের অবিশ্বাস্য অপারেশন হোক বা মাঝ সমুদ্রে নৌসেনার উদ্ধারকাজ। কলকাতায় বসে স্বর্ণেন্দুর দেওয়া ছবি নিউজ রুম-এর উত্তেজনা বাড়িয়ে দিত। মাঝ রাতে জ্বালানির দাম বাড়ার হিসেব নিয়ে গ্রাফিক্স করার প্রয়োজন হলে, স্বর্ণেন্দুর দেওয়া তথ্যের উপর চোখ বুজে ভরসা করতেন ডেস্কের সহকর্মীরা। পাতাল রেলের নির্মীয়মান সুড়ঙ্গের ভিতর ঢুকে প্রযুক্তির খুঁটি নাটি দর্শকদের দেখাত স্বর্ণেন্দু।

সমান উৎসাহে কভার করত ভোটের রণক্ষেত্র। ২১’এর বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার রাতে নন্দীগ্রাম থেকে ওর লাইভ রিপোর্টিং চমৎকার হয়েছিল। বরাবরই লো প্রোফাইল। অফিস ঠিক যেটা চাইত, সেটাই যথা সম্ভব নিখুঁতভাবে পেশ করত স্বর্ণেন্দু। মনে মনে খুব ভাল স্টোরি এডিট করতে পারত। হাবিজাবি অনেক কিছুর মধ্যে নির্মেদ খবরটি খুঁজে নিয়ে সম্পাদনার কাজটিও সহজ করে দিত সহকর্মীদের জন্য। লড়াকু, পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে বাজারে সুনাম থাকবে ওর।

আজ তোর স্টোরির কোনও সাইন অফ হবে না স্বর্ণ। কাজের ফাঁকে তোকে খুব মনে পড়বে।