IPS on CID Scanner: ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আইপিএস দেবাশিস ধরের বিরুদ্ধে, তেড়েফুঁড়ে উঠছে সিআইডি
CID: সিআইডির এফআইআরে দেবাশিসবাবুর সঙ্গে এই সুদীপ্ত রায়চৌধুরীরও নাম রয়েছে অভিযুক্ত হিসাবে বলেই সূত্রের খবর।
সিআইডি আধিকারিকদের দাবি, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেবাশিস ধরের সম্পত্তি যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। একটি এফআইআরের ভিত্তিতে রবিবার কলকাতা এবং কলকাতার আশেপাশে পাঁচ জায়গায় তল্লাশি চালান সিআইডি আধিকারিকরা। সুদীপ্ত রায়চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ীর সল্টলেকের এএল ব্লকের একটি বাড়ি ও মেট্রোপলিটনে পাঁচতলা একটি বাড়িতে হানা দেন তদন্তকারীরা।
সিআইডির এফআইআরে দেবাশিসবাবুর সঙ্গে এই সুদীপ্ত রায়চৌধুরীরও নাম রয়েছে অভিযুক্ত হিসাবে বলেই সূত্রের খবর। সিআইডি সূত্রে খবর, সুদীপ্ত রায়চৌধুরীর মাধ্যমে দেবাশিস ধর বেআইনিভাবে টাকা নিয়েছিলেন। এছাড়াও দেবাশিস ধরের অবৈধভাবে রোজগার করা টাকার একটা বড় অংশ এই সুদীপ্ত রায়চৌধুরীর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে বলেও দাবি সিআইডির।
রবিবার সল্টলেকের এএল ব্লকে সুদীপ্ত রায়চৌধুরীর বাড়িতে সিআইডি তল্লাশি চালালেও সে সময় তিনি ছিলেন না বলেই খবর। তাঁর কেয়ারটেকারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় তল্লাশি চালান আধিকারিকরা। একইসঙ্গে সিআইডি হানা দেয় সুদীপ্ত রায়চৌধুরীর মেট্রোপলিটনের বাড়িতে। সেখানেও সুদীপ্ত রায়চৌধুরী অনুপস্থিত ছিলেন।
সুদীপ্ত রায়চৌধুরীর স্ত্রী মিতালী রায়চৌধুরীর উপস্থিতিতে সন্ধ্যা পার করেও তল্লাশি চালান সিআইডি আধিকারিকরা। সিআইডি সূত্রে খবর, জিপ্লাস ফোর অর্থাৎ পাঁচতলা এই বাড়িতে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি তল্লাশির সময় দেখা যায়। এছাড়াও রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৪টি কুকুর। এর মধ্যে রয়েছে ডোবারম্যান, ল্যাব্রাডর, হাউন্ড জার্মান শেফার্ড।
সিআইডি সূত্রে খবর, প্রগতি ময়দান থানার পুলিশের উপস্থিতিতে এই তল্লাশির সময় একটি লকার খুলতে বলেন সিআইডি আধিকারিকরা। প্রথমে সেই লকারের চাবি না পাওয়া যাওয়ায় সিআইডি আধিকারিকরা ইলেকট্রনিক করাতও আনেন। পরে চাবি পাওয়া যাওয়ায় লকার আর ভাঙতে হয়নি বলে সূত্রের খবর। লকার খুলে তল্লাশি চালান সিআইডি আধিকারিকরা। সেখান থেকে বেশ কিছু গয়না এবং বেশ কিছু সম্পত্তি ও কোম্পানি সংক্রান্ত নথি পাওয়া গিয়েছে বলে সিআইডি সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, এই সুদীপ্ত রায়চৌধুরী এর আগে ২০১৮ সালে রোজভ্যালি চিটফান্ড মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন। রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর অভিযোগ ছিল, এই সুদীপ্ত রায়চৌধুরী ইডির তদন্ত ‘সেট’ করে দেবেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গৌতম কুণ্ডুর কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নিয়েছিলেন। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বিধাননগর কমিশনারেট ফের সুদীপ্ত রায়চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইডির তরফে বিধাননগর কমিশনারেটে একটি অভিযোগ জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, ইডির নথি জাল করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের তোলা আদায় করতেন এই সুদীপ্ত রায়চৌধুরী-সহ একাধিক দুষ্কৃতী। সেই মামলায় সুদীপ্ত রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়।
সিআইডি সূত্রে খবর, সেই সময় থেকেই সুদীপ্ত রায় চৌধুরীর সঙ্গে দেবাশিস ধরের ঘনিষ্ঠতার বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পান সিআইডি আধিকারিকরা। এই আইপিএস দীর্ঘদিন বিধাননগর কমিশনারেটে ডিসিপি পদে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কোচবিহারের পুলিশসুপার পদে নিযুক্ত হন। সেই নির্বাচনে শীতলকুচিতে সিআইএসএফ জওয়ানদের গুলি চালানোর ঘটনায় তদন্ত শুরু করে একাধিকবার দেবাশিস ধরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিআইডি আধিকারিকরা। কোচবিহারের ঘটনায় তাঁকে সাসপেন্ড করে নবান্ন। বর্তমানে দেবাশিস ধর এসপি পদমর্যাদায় কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে রয়েছেন। সূত্রের খবর, এই আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির এই তদন্তে আরও বেশ কিছু পুলিশ কর্তা এবং ব্যবসায়ীর নাম উঠে আসছে তদন্তে।