বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। দিনের পর দিন অনাহারে, অর্থকষ্টে দিন কাটিয়ে এবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙেছে শ্রীলঙ্কাবাসীর। সরকারের কাছ থেকে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে সোজা প্রেসিডেন্টের বাড়িতেই হাজির হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেখা না মিললেও, যে বৈভব দেখেছেন তারা, তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
সমুদ্রের পাড়ে গোতাবায়া রাজাপক্ষের যে বাড়ি রয়েছে, তা বাড়ি বলা ভুল। নামের সঙ্গে মিল রেখেই আসলে তা রাজপ্রাসাদ। কী নেই সেই প্রাসাদে।
সিনেমায় দেখানো প্যাঁচানো সিড়ি থেকে শুরু করে সুইমিং পুল। খেলাধুলো, বিনোদনের জন্য আলাদা ঘর যেমন রয়েছে, বিপদের মুহূর্তে আত্মগোপন করার জন্য বাঙ্কারও রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাড়িতে ঢুকে সত্যিই মাথা ঘুরে গিয়েছে বিক্ষোভকারীদের। তাদের মুখে একটাই কথা, "ওরা উৎসব-আনন্দ করেছে, আর আমরা কষ্ট পেয়েছি"। প্রেসিডেন্টের বাড়ির ভিতরে তল্লাশি চালিয়েই লক্ষ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে বিক্ষোভকারীরা।
গতকালই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া নানা ভিডিয়ো ও ছবিতে দেখা গিয়েছিল, গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাড়িতে ঢুকে সুইমিং পুল দেখে নিজেদের আর নিয়ন্ত্রম করতে পারেননি বিক্ষোভকারীরা। সোজা ঝাঁপ দিয়েছেন সুইমিং পুলে। সারাদিন বিক্ষোভ, আন্দোলনের ক্লান্তি ধুয়ে ফেলতে চেয়েছেন ওই জলে।
বিস্ময়ের শেষ নেই বাড়ির ভিতরে ঢুকেও। বিশাল বড় বড় ঘর, দামি টিভি, ফ্রিজ থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, কী নেই সেখানে। জীবনে কোনও না দেখা এই সমস্ত জিনিসের সামনে দাঁড়িয়েই ছবি তুলতে ব্যস্ত বিক্ষোভকারীরা।
শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে চলছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। গতকাল বিক্ষোভকারীদের একাংশকে স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় জমাতে দেখা গিয়েছিল। যারা প্রেসিডেন্টের বাড়িতে ঢুকেছেন, বিক্ষোভের মাঝে খেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করেননি তারাও। টানটান মাটিতে শুয়ে পড়ে টিভিতেই উপভোগ করেছেন ক্রিকেট ম্যাচ।
কেউ কেউ আবার সারাদিন পুলিশের লাঠির আঘাত, কাঁদানে গ্যাস, জল কামানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে ক্লান্ত। প্রেসিডেন্টের ঘরের নরম গদি দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। সুখনিদ্রায় গিয়েছেন সেখানেই।
বিক্ষোভের আঁচ এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে শান্তির পথে চলা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সন্ন্যাসীরাও ইট-পাথর তুলে নিয়েছেন হাতে। পেটের দায় যে বড় দায়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ শ্রীলঙ্কার এই টুকরো চিত্রগুলিই।