Jagadhatri Puja 2022: চন্দননগরের ৪ জগদ্ধাত্রী পুজোয় সিংহের রং সাদা! বিসর্জনের সময় জলে ঘোরে সাপ ও শুশুক

Jagadhatri Puja Vidhi : দুবছর পর আবারও স্বমহিমায় ও সারম্বরে পালিত হতে চলেছে চন্দননগরের এই ঐতিহ্যবাহী পূজা। গঙ্গার তীরের এই শহরে মাতৃরূপে পূজিত হন জগজ্জননী জগদ্ধাত্রী। হেমন্তের শীতল হাওয়ার পরশে এখন আলোর মালায় সেজে ওঠেছে এই শহর।

Jagadhatri Puja 2022: চন্দননগরের ৪ জগদ্ধাত্রী পুজোয় সিংহের রং সাদা! বিসর্জনের সময় জলে ঘোরে সাপ ও শুশুক
জগদ্ধাত্রী পুজো
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 04, 2022 | 5:16 PM

জগদ্ধাত্রী পুজোয় (Jagadhatri Puja 2022) আলোর কারসাজি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করেন হুগলীর প্রসিদ্ধ চন্দননগর শহরে (Chandannagar)। ২ বছরের বেশি সময় ধরে করোনার দাপটের কাছে হার মানেননি কেউই। তবে প্রাণের শহরে পুজোয় জৌলুস ফিকে হয়ে যাওয়া নিয়ে কষ্ট ছিল সকলের মনে। এবার সেই দুঃখ-যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে শহরটাকে আলোয় আলোকিত করে তোলা হয়েছে। ২ বছর ধরে গলায় কাঁটা বিধে রাখার মত চেপে রাখা হয়েছিল বর্ষপূর্তি উত্‍সবগুলিও। এবার সেই উত্‍সবে মেতে উঠতে দ্বিগুণ করে প্রস্তুতি নিয়েছে ফরাসডাঙ্গার বাসিন্দারা। পুজোয় যেমন চমক রয়েছে, তেমনি রাস্তায় রাস্তায় আলোর মেলাতেও রয়েছে অভিনবের ছাপ। চন্দননগর স্টেশন রোড ধরে হাঁটা দিলেই বোঝা যাবে এই শহরে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও রুচিবোধ অন্য পুজো ও অন্য জায়গার থেকে কত আলাদা। হৈমন্তিকার আরাধনায় নিজের মত করে সেজে ওঠে এই ছোট্ট সাজানো শহর।

দুর্গাপুজোর সময় এই শহরের বুকে যতগুলি পুজো পালিত হয়, সেগুলি বাড়ির বা প্রাচীন পুজো হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। টিমটিম করে আলো জ্বলে দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলগুলিতে। কারণ সেই সময় থেকেই এই শহরের সবচেয়ে দামি ও প্রিয় পুজোর খুঁটি পোতা শুরু হয়ে যায়। বারোয়ারি পুজোগুলির রেষারেষিতে আর কিছু না হোক, দেখার মত হয় টুনি বাল্ব দিয়ে সাজানো আলোর নানা থিমগুলি। বর্তমানে লেড আলোর চল শুরু হলেও শোভাযাত্রায় জৌলুস ফিকে হয়নি এতটুকু।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলো যেমন আকর্ষণের, তেমনি আকৃষ্ট করে প্রতিমাগুলিও। কারণ এমন প্রতিমা ভূ-ভারতে দেখা যায় না। শুধু কি তাই, প্রতিমার মুখমন্ডল কোনওভাবেই দুর্গার সঙ্গে মেলে না। রাজকীয়, ভারিক্কি ও স্নেহময়ী দেবীর মূর্তি তৈরি করা হয় এখানে। গায়ে প্রায় ১০০ ভরিরও বেশি সোনা-রূপার গয়না আর দামি বেনারসি শাড়ি। মাথায় থাকে বিশাল সোনার মুকুট। কানে কানপাশা, রুপোর চাঁদমালা। পায়ে রুপোর নুপূর, সিংহের জন্যও থাকে সোনা বা রুপোর মুকুট। দেখে মনে হবে রাজরানীর বেশে বসে আছেন এক গুরুগম্ভীর নারী। স্থানীয়রা এই পুজোকে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে মেনে চলেন। এ এক অন্য উন্মাদনা। গোটা শহর এক অন্য মাদকের নেশায় মেতে ওঠে। চোখধাঁধানো আলোকসজ্জা আর জগদ্ধাত্রী প্রতিমা দেখার জন এবছর অন্যান্য বছরের তুলনা একটু বেশিই জনজোয়ার চোখে পড়েছে। দুবছর পর আবারও স্বমহিমায় ও সারম্বরে পালিত হতে চলেছে চন্দননগরের এই ঐতিহ্যবাহী পূজা। গঙ্গার তীরের এই শহরে মাতৃরূপে পূজিত হন জগজ্জননী জগদ্ধাত্রী। হেমন্তের শীতল হাওয়ার পরশে এখন আলোর মালায় সেজে ওঠেছে এই শহর।

শাস্ত্রকার, পুরাণকারদের বক্তব্য, সিংহারূঢ়া জগদ্ধাত্রী যাঁকে রক্ষা করেন তার পতন নেই, বিনাশ নেই। জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস ও পুজোপদ্ধতি নিয়ে এই শহরের বুকে রয়েছে নানা কাহিনি। প্রায় ৩০০ বছর আগে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজো দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরি। তারপরই তিনি চন্দনগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টির নিচুপট্টীতে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন। তারকিছুকাল পরই এই পুজো ধুমধাম করে ছড়িয়ে পড়ে। এই পুজো চন্দননদরের আদি পুজো নামে পরিচিত। তাই স্থানীয়রা আদি মা নামেই চেনেন। জানা যায়, পুরুষাণুক্রমে দেওয়াব চৌধুরীদের উত্তরপুরুষের নামে পুজোর সংকল্প করা হয়। প্রতিমার আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সনাতনরীতির প্রতিমায় রয়েছে সাদা সিংহ ও বিপরীতমুখী অবস্থানে হাতিমুণ্ড। শোনা যায়, নিরঞ্জনকালে এই প্রতিমা জলে পড়লেই শুশুক বা সাপের দেখা যায়। অত্যন্ত জাগ্রত এই ঠাকুরের পুজো করা হয় ৩০০ বছর আগের রীতি অনুযায়ী।

এরপরেই রয়েছে লক্ষ্মীগঞ্জ কাপড়েপট্টি জগদ্ধাত্রী পুজো। যেটি চন্দননগরের দ্বিতীয় প্রাচীনতম পুজো। ১৭৬৮ সালে চাউলপট্টির চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় কাপড় ব্যবসায়ী শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায় (মতান্তরে শশধর) রীতিমতো চাঁদা তুলে এই পূজা প্রবর্তন করেন। এই অঞ্চলের অপর দুটি পূজা হল লক্ষ্মীগঞ্জ চৌমাথা (১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ) ও লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের (১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ) পূজা। আদি নিয়ম অনুযায়ী, উত্তর চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টি, কাপড়েপট্টি, চৌমাথা ও বাজার – এই চার পুজাতেই সিংহের রং সাদা থাকে। শহরের আরও একটি পুজো রয়েছে, যেটি ১৮৩৫ সাল থেকে পুজো করা হয়। চন্দননগরের বাগবাজারের পুজো। এটিও ওই প্রাচীন মতে পুজো করা হয়।