Thankyou doctor: যে কোনও নতুন মহামারির মোকাবিলাই ভারত এখন করতে পারবে, ন্যাশনাল ডক্টর ডে কনক্লেভে চিকিৎসকেরা মতামত শেয়ার করেছেন
Thankyou doctor: TV9 গ্রুপ জাতীয় ডাক্তার দিবস উপলক্ষ্যে 'জাতীয় ডাক্তার দিবস কনক্লেভ'-এর আয়োজন করেছিল। এই প্রোগ্রামে দেশের অনেক চিকিৎসককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ৯টি সেশন হয়েছিল, যেখানে ডাক্তাররা বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত শেয়ার করেছেন।
নয়া দিল্লি: TV9 গ্রুপের তরফে জাতীয় চিকিৎসক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে ‘ন্যাশানাল ডক্টরস ডে কনক্লেভ’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁদের সম্মান প্রদান করা হয়। এই কনক্লেভে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাধিক সেশন অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল। সেখানে তাঁরা তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা সহ, স্বাস্থ্য খাতে নতুন প্রযুক্তি, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল চিকিৎসক একসঙ্গে বলেন যে, ভারত এখন স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোনও ধরনের জরুরি অবস্থার জন্য দেশ প্রস্তুত।
TV9-এর এই হেলথ কনক্লেভের প্রথম অধিবেশনের সূচনা হয়েছিল দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজের কথার মাধ্যমে। তিনি কোভিড সময়কালে ভারতে যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল, সে কথাই তুলে ধরেছিলেন এখানে। সৌরভ ভরদ্বাজ বলেছিলেন যে, যখন করোনা এসেছিল, তখন হাসপাতালে টেস্টিং কিট এবং বেডের অভাব ছিল। তারপর অক্সিজেন সরবরাহের সমস্যাও ছিল।
কিন্তু কোভিডের পর সরকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে। কোভিডের সময়, সরকারি হাসপাতালে প্রায় ১২,৪০০ শয্যা ছিল, যার সংখ্যা ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি হবে। দিল্লিতে দেশের বৃহত্তম ট্রমা সেন্টারও ২০২৪ সালের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। এখন দিল্লি সরকার কোভিডের মতো যে কোনও মহামারি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
সুস্বাস্থ্যের জন্য জীবনধারা ঠিক রাখুন
হেলথ কনক্লেভের দ্বিতীয় সেশনে, ইনস্টিটিউট অফ লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন, মেনডাটা হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ অরবিন্দর সিং তাঁর মতামত শেয়ার করেন। তিনি লিভারের স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন। ডাঃ সিং বলেন, আজকাল আরামদায়ক জীবনযাপন ও ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে লিভার সংক্রান্ত রোগ বাড়ছে। এমন অবস্থায় মানুষকে তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাপন ঠিক রাখতে হবে। কারণ লিভার ভাল থাকলে একাধিক শারীরিক রোগের ঝুঁকি কমে যাবে।
এই অধিবেশনে অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ও অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ যশ গুলাটিও তাঁর মতামত সকলের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের মতো গ্রামীণ এলাকার সরকারি হাসপাতালেও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর জন্য সর্বস্তরে কাজ করতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি হলে এটি শহরগুলোকে হাসপাতালে রোগীদের চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
ভারত মেডিকেল ট্যুরিজমের কেন্দ্র
জাতীয় চিকিৎসক দিবস কনক্লেভের তৃতীয় অধিবেশনে স্বাস্থ্য খাতে চ্যালেঞ্জ ও নতুন সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়। স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে চিকিৎসকেরা বলেন, বর্তমানে চিকিৎসকদের উপর সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে আস্থা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য খাতে নতুন সুযোগের বিষয়ে, AIIMS-এর ডাঃ সঞ্জয় রাই বলেন যে, ভারত মেডিকেল ট্যুরিজমের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ভারত ১০০টিরও বেশি দেশে এইচআইভি ওষুধ এবং ১৭০টিরও বেশি দেশে বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন রপ্তানি করে। অনেক দেশ থেকে রোগীরা ভারতে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসেন। অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেক সস্তা।
যে কোনও নতুন মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুত
অনুষ্ঠানের চতুর্থ অধিবেশনে ‘ভারত কি একটি নতুন জনস্বাস্থ্য সংকট পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত?’ এই নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এই অধিবেশনে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল (আইএম) এর সভাপতি ডাঃ শরদ কুমার আগরওয়াল বলেছেন যে, কোভিডের সময় দেশের ২ হাজার চিকিৎসক রোগীদের সেবা করতে গিয়ে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। চিকিৎসকদের কারণেই দেশ এত বড় মহামারির সঙ্গে লড়াই করতে পেরেছে। কোভিডের সময়, চিকিৎসকেরা দিনরাত রোগীদের সেবা করেছেন। এই সময়ে হাজার-হাজার চিকিৎসকও আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু নির্বিশেষে রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হয়।
ডাঃ শরদ বলেন, এখন দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বহুগুণ উন্নত হয়েছে। হাসপাতালে শয্যা বেড়েছে, নতুন মেশিন এসেছে। বেশিরভাগ হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন কোনও মহামারি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। দেশ কোভিডের মতো অন্য যে কোনও মহামারির সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত।
ডিজিএফের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শারদা জৈন বলেছেন যে, করোনার সময়টা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল, কোভিডের সময় চিকিৎসক এবং প্যারামেডিক্যাল স্টাফেরা কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। ওই সময় চিকিৎসকদেরও অনেক সমস্যায় পড়তে হয়, তবুও তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করে যান। কোভিডে চিকিৎসকেরা লক্ষাধিক রোগীর চিকিৎসা করেছেন।
ভারত যেভাবে কোভিড মহামারির সঙ্গে লড়াই করেছে, তা সারাবিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে। কোভিডের পর এখন স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অনেক উন্নত। এখন যেকোনও নতুন মহামারির সঙ্গে সহজেই মোকাবিলা করা যায়।
রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ
হেলথ কনক্লেভের পঞ্চম অধিবেশনে, “ওয়ান্ডার ওম্যান – ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স ম্যানেজিং” বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে অংশ নেন ডাঃ সুশীলা (স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ), ডাঃ রশ্মি গুপ্তা, ডাঃ ইলা গুপ্তা (ক্লাউড 9 হাসপাতাল) ও ডাঃ শ্বেতা গর্গ। এতে নারীর জীবনে কীভাবে কাজ ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ফেলিক্স হাসপাতালের পরিচালক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ রশ্মি গুপ্তা বলেন, অনেক সময় চিকিৎসকদের পরিবারের চেয়ে রোগীকে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে তাকে চিকিৎসা দেওয়াই চিকিৎসকের ধর্ম।
যেহেতু তিনি চিকিৎসকের পেশা বেছে নিয়েছেন, তাই তা পূরণ করার দায়িত্বও তাঁর। অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে, তাঁর সন্তানের যে কোনও সমস্যার সময়েও তিনি হাসপাতালে জরুরি অবস্থায় ভর্তি থাকা শিশুর চিকিৎসা করেছেন। ডাঃ রশ্মি বলেন, ডাক্তারদের জন্য কর্মজীবনের ভারসাম্য প্রয়োজন, কিন্তু ডাক্তার হিসেবে রোগীদের সেবা করাই তাঁর প্রধান কর্তব্য।
ডিজিটালাইজেশন স্বাস্থ্য খাতের ছবিটা পাল্টে দিয়েছে
এই ষষ্ঠ অধিবেশনে দেশের পরিবর্তনশীল স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামো ও ডিজিটালাইজেশন নিয়ে আলোচনা হয়।
সেশনে AGATSA প্রতিষ্ঠাতা রাহুল রাস্তোগী, AGATSA ডিরেক্টর নেহা রাস্তোগি, Ameri Health Home Health care Asian Institute of Medical Sciences-এর প্রধান এবং পরামর্শক ডাঃ চারু দত্ত অরোরা অধিবেশনে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। রাহুল রাস্তোগি বলেছিলেন যে, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটালাইজেশনের ফলে রোগীরা অনেক সুবিধা পাচ্ছেন। স্বাস্থ্যের ডিজিটালাইজেশনের ফলে রোগীদের রেকর্ড রাখা খুব সহজ হয়ে গেছে।
এই অধিবেশনে ডাঃ চারু অরোরা বলেন, ডিজিটাইজেশনের পর স্বাস্থ্য খাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন খাবারের মতো ওষুধও বাড়ির দোরগোড়ায় মিলছে। স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটালাইজেশনের ফলে রোগীদের সময়ও অনেক বাঁচছে।
এখন রোগী সহজেই তার ব্লাড প্রেশার, হৃদস্পন্দন সহজেই নির্ণয় করতে পারেন। যার রিপোর্ট অনলাইনে ডাক্তারের কাছে যায়। এখন ঘরে বসেই চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এখন ইন্টারনেটের সাহায্যে রোগী তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য চিকিৎসকের কাছে পাঠাতে পারেন। ভবিষ্যতে, এআই-এর সাহায্যে জটিল অস্ত্রোপচারও সহজে করা যাবে।
সমাজে চিকিৎসকদের বড় অবদান
হেলথ কনক্লেভের সপ্তম অধিবেশনে ফেলিক্স হাসপাতালের এমডি ডাঃ ডি কে গুপ্ত বক্তৃতা রাখেন। ডাঃ গুপ্তা বলেন, ডাক্তাররা সমাজে অনেক বড় অবদান রাখেন। দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোও বাড়ছে। নতুন সরকার আসার পর স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত শহরাঞ্চলের মতো গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবা ততটা ভাল নয়। গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসক ও নার্সিং স্টাফেরও ঘাটতি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এসবের উন্নতি প্রয়োজন। পিপিপি মডেল এবং স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি উন্নত করা যেতে পারে।
মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বেড়েছে
অনুষ্ঠানের অষ্টম অধিবেশনে “স্বাস্থ্য শিক্ষার পরবর্তী সীমান্ত” বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে অংশ নেন লোকনায়ক হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ সুরেশ কুমার, লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজের মেডিকেল ডিরেক্টর ডাঃ সুভাষ গিরি এবং ডেন্টাল সার্জন ডাঃ অনিল কোহলি। সকল বিশেষজ্ঞেরা চিকিৎসা শিক্ষার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।
ডাঃ সুভাষ বলেন, বিদেশের চেয়ে ভারতে মেডিকেল পড়াশোনার প্রতিযোগিতা বেশি। বিদেশে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া সহজ। যেখানে ভারতে, পরীক্ষায় ৯০%-এর বেশি নম্বর পেলে তবেই একজন ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারে। ডাঃ সুভাষ বলেন, এখন দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা দু’গুণ বেড়েছে। প্রতি বছর লাখ-লাখ ছেলেমেয়ে এমবিবিএস পরীক্ষায় পাস করছে।
ক্যানসারের চিকিৎসা সম্ভব
হেলথ কনক্লেভের শেষ সেশনে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা ও পরিচর্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। TATA 1mg/ (ডায়াগনস্টিক)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাঃ প্রশান্ত নাগ, ক্যানসার সার্জন ডাঃ অংশুমান কুমার, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাঃ রজিত চানানা, ডাঃ সমীর ভাটি এবং ডাঃ অনিল থাকওয়ানি এই সেশনে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় ডাঃ প্রশান্ত বলেন, প্রযুক্তির সাহায্যে এখন ক্যানসার নির্ণয় আগের চেয়ে সহজ হচ্ছে, যদিও ক্যানসারের মতো রোগ সম্পর্কে এখনও অনেক তথ্যের অভাব রয়েছে। কিন্তু নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়েও রোগ শনাক্ত করা যাচ্ছে। কিন্তু এখনও মানুষের মধ্যে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
তাঁরা জানে না যে, অনেক ফার্মা কোম্পানি ক্যানসার রোগীদের জন্য অনেক কাজ করে এবং রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধও দেয়। অনেক রাজ্য ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য পরিকল্পনাও চালাচ্ছে। এই অবস্থায় মানুষের উচিত ক্যানসারের লক্ষণ এবং ক্যানসার সম্পর্কিত চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জেনে রাখা।
Associate sponsor: Agatsa, Felix Hospital, TATA 1mg/Labs