Jalpaiguri: স্কুলে টানা দেড় মাসের ছুটি, ড্রপ আউট ঠেকাতে তীব্র গরমেই অভিনব উদ্যোগ প্রধান শিক্ষিকার

Jalpaiguri: এবার ২২ এপ্রিল থেকে ২ জুন পর্যন্ত টানা ৪২ দিন গরমের ছুটি। আর এতেই ড্রপ আউটের সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। করোনাকালে স্কুল যখন দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল তখন ড্রপ আউটের সংখ্যা বেড়েছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। এদের অনেককেই এখনও স্কুলমুখী করা যায়নি।

Jalpaiguri: স্কুলে টানা দেড় মাসের ছুটি, ড্রপ আউট ঠেকাতে তীব্র গরমেই অভিনব উদ্যোগ প্রধান শিক্ষিকার
অভিনব উদ্যোগ শিক্ষিকার Image Credit source: TV-9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 02, 2024 | 11:57 PM

জলপাইগুড়ি: ড্রপ আউট ঠেকাতে গরমের ছুটিকেই হাতিয়ার করলেন প্রধান শিক্ষিকা। তীব্র দাবদাহ মাথায় নিয়ে চা বাগানের আদিবাসী মহল্লায় ঘুরে ঘুরে পড়ুয়াদের একত্রিত করে নাচ, গানের মাধ্যমে বিকল্প পদ্ধতিতে চলল শিক্ষাদান। প্রধান শিক্ষিকার প্রচেষ্টায় ভূয়সী প্রশংসা ডিআইয়ের।

এবার ২২ এপ্রিল থেকে ২ জুন পর্যন্ত টানা ৪২ দিন গরমের ছুটি। আর এতেই ড্রপ আউটের সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। করোনাকালে স্কুল যখন দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল তখন ড্রপ আউটের সংখ্যা বেড়েছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। এদের অনেককেই এখনও স্কুলমুখী করা যায়নি। উত্তরবঙ্গের শিক্ষকদের একটা বড় অংশের আশঙ্কা টানা দেড় স্কুল বন্ধ থাকলে ফের ড্রপ আউটের সংখ্যা বাড়তে পারে চা বাগানের পড়ুয়াদের মধ্যে। সেই আশঙ্কায় এই প্রবল গরমকে উপেক্ষা করে ভর দুপুরে জলপাইগুড়ি করলা ভ্যালি চা বাগানের শ্রমিক মহল্লায় ছুটে গেছেন জলপাইগুড়ি মোহিত নগর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কোয়েলি রায় বর্মন। সেখানে গিয়ে তিনি বাচ্চাদের নিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে শিক্ষাদান শুরু করেছেন।

প্রধান শিক্ষিকা কোয়েলি রায় বর্মন বলেন, আমার স্কুলে ড্রপ আউট সমস্যা রয়েছে। ফি বছর পড়ুয়া কমছে। এর পিছনে নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। আমার স্কুলে বেশির বাচ্চাই এই চা বাগান এলাকার। এদের বাবা মায়েরা সকাল হলেই চা পাতা তোলার কাজে বেরিয়ে যায়। বাচ্চা সারাদিন বাড়িতে একা থাকে। যখন স্কুল খোলা থাকে তখন এদের মধ্যে অনেক বাচ্চাই  স্কুলে যায়। কিন্তু অনেক বাচ্চার নাম খাতায় থাকলেও সারাবছর স্কুলে যায় না। কেবলমাত্র পরীক্ষার সময় যায়। এরা কেউ হয়তো বিভিন্নভাবে কাজকর্ম করে পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। আবার কেউ মোবাইলে মগ্ন হয়ে থাকে। এখন দীর্ঘদিনের জন্য ছুটি শুরু হয়েছে। ফের এরা ড্রপ আউট হয়ে যেতে পারে। আমি চাই আমার স্কুলের বাচ্চারা যাতে ড্রপ আউট না হয়ে যায়। তাই ছুটির মধ্যে ওদের বাড়ির কাছে এসে পড়াচ্ছি। এরপর পুজোর ছুটি হবে তখনও আমি ও আমার স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা এদের এখানে এসে পড়াতে সম্মতি দিয়েছেন। 

চা শ্রমিক রাম মাঝি বলেন, বাড়িতে অভাব থাকায় আমি বেশি দূর পড়তে পারিনি। কিন্তু এটা খুব ভালো উদ্যোগ।  আমার বাচ্চাও বাড়িতে বসে আছে। ভাবছি এখানে পাঠিয়ে দেব। তবে একটা অনুরোধ এই প্রচেষ্টা যেন দুই একদিন হয়ে বন্ধ না হয়ে যায়।

চা বাগানের আর এক বাসিন্দা রাজু সাহানি বলেন, করোনার সময় অনেকদিন স্কুল বন্ধ ছিল। সেইসময় আমাদের বাগানের অনেক বাচ্চা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। এরপর স্কুল খুললেও মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন কারনে স্কুল বন্ধ থাকে। বাচ্চারা বাড়িতে পড়াশোনা করতে চায় না। এই দিদিমণি ছুটি পেয়েও বেড়াতে না গিয়ে যেভাবে চা বাগানে ছুটে এসে পড়াচ্ছেন তাতে সত্যি আমরা অবাক। আমিও আমার বাড়ির আশেপাশের বাচ্চাদের দিদিমনির কাছে নিয়ে যাব। 

চা শ্রমিকের মেয়ে চন্দনা মাঝি সপ্তম শ্রেনীতে পড়ে। সে জানাচ্ছে এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা, নাচ, গান, ছবি আঁকা সবকিছু হচ্ছে। তাই গরমের ছুটিতে বাড়িতে না থেকে সকলকে এখানে এসে পড়াশোনা করতে বলে। সে আরও জানায় বড় হয়ে এই  বড় দিদিমনির মতো প্রকৃত শিক্ষিকা হতে চায়। শিক্ষিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রুবিনা মুন্ডা। তিনি বলেন, দিদিমণি খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা দিদিমণিকে সবরকম সাহায্য করব।

প্রধান শিক্ষিকার এহেন উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়েছেন ডি আই বালিকা গোলে। তিনি বলেন যেইভাবে উনি ড্রপ আউট আটকে শিক্ষার স্বার্থে এগিয়ে এসেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। নাচ গান এইসবের মাধ্যমে বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করলে অবশ্যই বাচ্চারা শিক্ষার অঙ্গনে থাকবে।