Shane Warne: ক্রিকেট চিরকাল মনে রাখবে ঈশ্বরের হাত

দর্শকরা সব সময় ওঁর আশ্চর্য বোলিং দেখার জন্য অপেক্ষা করেছে। বিস্ময়কর স্পেলের জন্য ওয়ার্ন চিরকাল ইতিহাসে থেকে যাবেন। ক্রিজে সহজ-সরল রান আপ, খুব সহজেই হাত ঘুরিয়ে কব্জির মোচড় দেওয়া আর তারপর বল এসে পড়ে লেগ স্টাম্পের প্রায় দু'হাত বাইরে। ব্যাটসম্যান হয়তো ভাবল, ওই বল নিশ্চিতভাবেই কিপারের হাতে চলে যাবে। আম্পায়ার ওয়াইডের সিগন্যাল দেবেন। আর তখনই চমক ভাঙবে, যখন দেখবে, ওই বল নড়িয়ে দিয়েছে উইকেট।

Shane Warne: ক্রিকেট চিরকাল মনে রাখবে ঈশ্বরের হাত
Shane Warne: ক্রিকেট চিরকাল মনে রাখবে ঈশ্বরের হাত (Pic Courtesy- Twitter)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 05, 2022 | 12:51 PM

সন্দীপন শর্মা

শেন ওয়ার্নকে (Shane Warne) শুধু ক্রিকেটার হিসেবে মাপা যাবে না। একজন জাদুকর বলা উচিত। ২২ গজে বরাবর বক্স অফিস হিট। দর্শকরা সব সময় ওঁর আশ্চর্য বোলিং দেখার জন্য অপেক্ষা করেছে। বিস্ময়কর স্পেলের জন্য ওয়ার্ন চিরকাল ইতিহাসে থেকে যাবেন। ক্রিজে সহজ-সরল রান আপ, খুব সহজেই হাত ঘুরিয়ে কব্জির মোচড় দেওয়া আর তারপর বল এসে পড়ে লেগ স্টাম্পের প্রায় দু’হাত বাইরে। ব্যাটসম্যান হয়তো ভাবল, ওই বল নিশ্চিতভাবেই কিপারের হাতে চলে যাবে। আম্পায়ার ওয়াইডের সিগন্যাল দেবেন। আর তখনই চমক ভাঙবে, যখন দেখবে, ওই বল নড়িয়ে দিয়েছে উইকেট।

ক্রিকেট ইতিহাসের ‘হ্যান্ড অফ গড’ বলা যেতে পারে। যদি এভাবেও না ভাবি, ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি মুহূর্ত তো বটেই। টেস্ট কেরিয়ারে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম বার বল করছেন শেন ওয়ার্ন। প্রতিপক্ষ ব্যাটারের নাম মাইক গ্যাটিং। ওয়ার্নের বল পড়ল লেগ স্টাম্পের অনেকখানি বাইরে। গ্যাটিং ভাবলেন, যদি খুব বেশি ঘোরে, তা হলে প্যাডে সামলে দেবেন। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে চকিৎ ঘুরে সেই বল নড়িয়ে দিল অফস্টাম্প। বিশ্মায়বিষ্ট গ্যাটিং তাকিয়ে রইলেন স্টাম্পের দিকে। হতবম্ভ হয়ে দেখতে থাকলেন যেখানে পড়েছিল বল। কী আশ্চর্য, স্টাম্প আর বলের স্পট দেখা যেন শেষই হচ্ছিল না গ্যাটিংয়ের। হয়তো বুঝতে পারছিলেন না একটা বল কী করে সিডনি থেকে লন্ডনের দিকে টার্ন নিতে পারে। গ্যাটিংকে দিয়ে শুরু। যতবার ওয়ার্নের বিরুদ্ধে নেমেছেন কোনও ব্যাটার এইরকম অসংখ্য মুহূর্ত ফিরে ফিরে এসেছে। আউট হয়ে ড্রেসিংরুমের পথে ফিরতে ফিরতে ব্যাটাররা ভেবেছেন, অবিশ্বাস্য কিছু একটা ঘটে গেছে। বিশ্বাসের ঊদ্ধে উঠে যাওয়া এই মুহূর্তগুলোই শেন ওয়ার্ন নামক লেগস্পিনারকে জাদুকরে বদলে দিয়েছিল। বিশ্বক্রিকেটের সমস্ত ব্যাটাররা বুঝতে পেরেছিলেন কাঁরা ওয়ার্ন-যুগে পা দিয়েছেন।

ওয়ার্ন ক্রিকেটে পা দেওয়ার আগে পর্যন্ত, ভাবাই যেত না একজন স্পিনার সুপারস্টার হতে পারেন। তাও কিনা অস্ট্রেলিয়ার মতন দেশের। যারা পেস বোলিং সর্বস্ব ভাবনা নিয়েই মাঠে নামার চেষ্টা করেছে। অ্যালান বর্ডার, হিলি টমসন, হগ ম্যাকডার্মটদের মতো পেস বোলাররাই শাসন করেছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট। এই কারণেই ওয়ার্ন অনন্য।

উপমহাদেশে কিছু স্পিনার, বিশেষ করে লেগস্পিনারদের রাজত্ব শুরু হয়েছিল। পাকিস্তানের আব্দুল কাদির, ভারতের শিবরামাকৃষ্ণন ও নরেন্দ্র হিরুয়ানিরা সাফল্য পাচ্ছিলেন। কিন্তু লেগস্পিন নামক শিল্প ক্রমশ চাপা পড়ে যাচ্ছিল।ওয়ার্নের কৃত্বিত্ব এখানেই, তুনি ওই মৃতপ্রায় শিল্পকে পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন। যে কারণে তাঁর সময় আরও দুই স্পিনার তারকা থেকে মহাতারকা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। একজন ভারতের অনিল কুম্বলে। অন্যদিকে মুথাইয়া মুরলীথরন।

পেসারদের যুগে ওয়ার্নের উত্থান ক্রিকেটকে আরও রঙিন করে দিয়েছিল। যে কারণে ওয়ার্নের মেগা স্টার হতে সময় লাগেনি। কেন? ওয়ার্নের বোলিং আসলে অনেকটা আগাথা ক্রিস্টির থ্রিলারের মতো। সর্বক্ষণ কী হয় কী হয় একটা ব্যাপার। ওয়ার্ন যখন বল করতে এসেছেন রুদ্ধশ্বাস গ্যালারি অপেক্ষা করেছে অকল্পনীয় কোনও কিছুর।

২২ গজের বাইরেও জোর চর্চায় থাকতেন ওয়ার্ন। ক্রিকেটের বাইরেও তাঁর ব্যাক্তিগত জীবন ছিল অত্যন্ত রঙিন। ড্রাগস নেওয়া, বুকিদের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া, ড্রাগস ও সেক্টটিং কাণ্ডে জড়িয়ে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হওয়া, নিজের স্ত্রীর কথা না ভেবে অন্য মহিলার সংস্পর্শে আসা…কোনও কিছুই বাদ দিয়ে জীবন উপভোগ করেননি এই বিস্ময় লেগস্পিনার। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায় রীতিমতো বর্ণময় ছিল ওয়ার্নের ব্যাক্তিগত জীবন। বিভিন্ন মহলে ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে ওয়ার্নের ব্যাক্তিগত জীবনের তুলনাও চলে।

ভারতীয়দের মধ্যে ওয়ার্নপ্রেমীর তালিকাটাও বেশ লম্বা। ভারতের বিরুদ্ধে বোলিং করার সময় ওয়ার্নের বিষ্ময় বোলিংয়ে যেমন মুগ্ধ হতেন ভারতের স্টেডিয়ামে থাকা দর্শকরা, তেমনই আইপিএলের প্রথম মরসুমে রাজস্থান রয়্যালসের ক্যাপ্টেন্সির ব্যাটন যখন ওয়ার্নের হাতে ছিল, তাঁকে নিয়ে কম উন্মাদনা দেখা যায়নি ভারতীয় দর্শকদের মধ্যে। দর্শকরা আইপিএল চলাকালীনও তাঁর বোলিং তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করত। ম্যাচ শেষ হলে ডাগআউটের ধারে সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন ওয়ার্ন। তাঁকে ঘিরে থাকতেন একগুচ্ছ ছেলে-মেয়েরা। সেই দৃশ্যও ভোলার ব্যাপার নয়।

যতটা বর্ণময় ছিল তাঁর ব্যাক্তিগত জীবন, ঠিক ততটাই উজ্জ্বল ছিল তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার। সেখানেও ছির ভরপুর উত্থান-পতন। কিন্তু যেভাবে তিনি হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন, তা যথেষ্ট বেদনার। তবে গোটা বিশ্ব চিরকাল মনে রাখবে লেগস্পিনের জাদুকর ওয়ার্নকে।