Shane Warne: ‘ওয়ার্ন চিরকাল ২০ বছর বয়সেই আটকে ছিল’
গত শতাব্দীর নয়ের দশকে বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করা অস্ট্রেলিয়া টিমের অনেকেই তাই আজও ওয়ার্নে আচ্ছন্ন। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের একটা স্ট্যান্ড ওয়ার্নের নামে করার কথা ঘোষণাও করে দিয়েছে।
সিডনি: ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ এখনও ভুলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ানরা। দেশকে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জেতানোর মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন শেন ওয়ার্ন (Shane Warne)। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে দুরন্ত বোলিং করেছিলেন। দুটো ম্যাচেই সেরা বাছতে হয়েছিল তাঁকে। ওয়ার্ন মানে এক আশ্চর্য ইতিহাস হয়তো। যাঁরা তাঁর সঙ্গে খেলেছেন, যাঁরা তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা জানেন, বিশৃঙ্খল জীবনযাপনই পছন্দ ছিল ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ লেগস্পিনারের। নিয়ম ভাঙাই যেন নিয়ম করে ফেলেছিলেন। পেস শাসিত অস্ট্রেলিয়া তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটকেও স্পিনের জাদুতে মুগ্ধ করে গিয়েছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। ৫২ বছর বয়সে তাঁর হঠাৎ মৃত্যু আরও একবার মনে করিয়ে দিল, ওয়ার্নকে নিয়মে বাঁধা যায় না। প্রিয় বন্ধু হয়তো কারও, হয়তো তাঁকে ঘোর অপছন্দ করতেন, হয়তো তাঁর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতেন কেউ কেউ। কিন্তু শেন ওয়ার্নকে বাদ দিয়ে তাঁরাও কখনও ক্রিকেটকে ভাবতে পারেননি। গত শতাব্দীর নয়ের দশকে বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করা অস্ট্রেলিয়া টিমের অনেকেই তাই আজও ওয়ার্নে আচ্ছন্ন। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের একটা স্ট্যান্ড ওয়ার্নের নামে করার কথা ঘোষণাও করে দিয়েছে।
ওয়ার্নের কেরিয়ারের অধিকাংশ সময় টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন স্টিভ ওয়া। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক মোটেও ভালো ছিল না। নিজের আটোবায়োগ্রাফি ‘নো স্পিন’এ তা ফলাও করে লিখেওছিলেন। ওয়ার্নের মৃত্যুতে তিনিও শোকে মুহ্যমান। স্টিভ লিখেছেন, ‘অনেক স্মৃতি ওয়ার্নকে ঘিরে। আর সে সব ভোলার নয়। ওর পাশে, ওর সঙ্গে খেলা আমার কাছেও বিরাট প্রাপ্তি।’ স্টিভেরই যমজ ভাই মার্ক ওয়ার সঙ্গে আবার সম্পর্ক ভালো ছিল ওয়ার্নের। লেগস্পিনারের বলে ক্লোজ-ইন ফিল্ডিংয়ের সময় প্রচুর ক্যাচ নিয়েছেন মার্ক। সেই তিনি লিখলেন, ‘মাঠ আর মাঠের বাইরে ও বরাবর বিনোদন ছিল। জীবনের একটা মুহূর্তও ওর কাছে সাদামাঠা ছিল না। খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট আরও এক কিংবদন্তিকে হারাল।’
অস্ট্রেলিয়ান টিমে ওয়ার্নের খুব কাছের বন্ধু ছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। ২০০৭ সালে অ্যাসেজ সিরিজের পর দু’জন একসঙ্গে অবসর নিয়েছিলেন। সেই ম্যাকগ্রা বলেছেন, ‘আমরা কুড়ি বছর বয়সে যে জীবন কাটাতে ভালোবাসি, জীবনের উর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করি যে সময়টা, তাতেই ওয়ার্ন চিরকাল আটকে ছিল। ও বরাবর জীবনকে উপভোগ করেছে। যেটা খুব কম মানুষ করতে পারে। ক্রিকেট মাঠে ওয়ার্ন কখনও হারতে ভালোবসত না। যে কোনও পরিস্থিতি থেকে জেতার জন্য ঝাঁপাত। ওর ওই মানসিকতার জন্য আমরা বহু ম্যাচ জিতেছি। ক্রিকেট ছাড়ার পরও ও জীবনকে ওই ভাবেই নিয়েছিল।’
ওয়ার্নের আর এক কাছের বন্ধু রিকি পন্টিং। বন্ধুর মৃত্যুর খবরে তিনি ফিরে গিয়েছেন ছেলেবেলায়। ‘ওর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৫ বছর বয়সে, অ্যাকাডেমিতে। পরিচয় হওয়ার পরই ও আমাকে ডাকনাম দিয়ে ‘পান’। এক দশকেরও বেশি সময় আমরা টিমমেট ছিলাম। উত্থান-পতন দুই দেখেছি। ওয়ার্ন এক বন্ধু, যাকে দরকারের সময় ঠিক পাওয়া যেত। ওর কাছে আমরা বন্ধুরাই ছিলাম সব।’