Shubman Gill: চার-ছয় না মেরেই ‘সেঞ্চুরি’, ধোনির রাঁচিতে সাবালক হলেন শুভমন গিল!
IND vs ENG: ১৯২ রানের লক্ষ্য চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নামা ভারতের এক সময় হাঁটু কাঁপছিল। মনে হচ্ছিল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে যে কোনও সময়। হল না, শুভমন গিলের জন্য। ক্রিকেট চার-ছয়ের খেলা। টি-টোয়েন্টি আসার পর থেকে ক্রিকেটে আগ্রাসনের রমরমা। যে যত ছয় মারতে পারেন, তাঁর ভক্তের সংখ্যা তত বেশি। শুভমনও তাই। দ্রুত রান তোলেন। বিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করেন। এ সব তো সবাই করেন। তিনি ব্যতিক্রম কেন?
অভিষেক সেনগুপ্ত
কলকাতা: ভোটাধিকার মানেই কি সাবালক হওয়া? সাবালকত্বের সংজ্ঞ বোধহয় তা নয়। সাবালক হতে সময় লাগে। কেউ কেউ দ্রুত হন পরিণত। কারও কারও সময় লাগে অনেকখানি। ক্রিকেট মাঠেও ‘সাবালক’ হতে হয় সাফল্য পেতে হলে। ১৬ বছরের সচিন তেন্ডুলকর টেস্ট ক্রিকেটে পা রেখেই দেখিয়েছিলেন, তিনি অনেক আগেই সাবালক হয়ে গিয়েছেন। তারুণ্যের আগ্রাসন অনেক সময় সাবালকত্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ সেই বাধা টপকে যেতে পারেন। ২৪ বছরের শুভমন গিল (Shubman Gill) যেন এতদিনে সাবালক হলেন। মহেন্দ্র সিং ধোনির মাঠ তাঁকে শেখাল, সাবালক হতে গেলে কী করতে হয়!
১৯২ রানের লক্ষ্য নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নামা ভারতের এক সময় হাঁটু কাঁপছিল। মনে হচ্ছিল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে যে কোনও সময়। হল না শুভমন গিলের জন্য। ক্রিকেট চার-ছয়ের খেলা। টি-টোয়েন্টি আসার পর থেকে ক্রিকেটে আগ্রাসনের রমরমা। যিনি যত ছয় মারতে পারেন, তাঁর ভক্তের সংখ্যা তত বেশি। শুভমনও তাই। দ্রুত রান তোলেন। বিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করেন। এ সব তো সবাই করেন। তিনি ব্যতিক্রম কেন? আজও টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য মাপা হয় ধৈর্য দিয়ে। একশো বছর পরও তা-ই হবে। এই ধৈর্যের খেলায় শুভমন রাঁচির ইনিংসের জন্য একশোয় ১০০ পাবেন। শোয়েব বসির, টম হার্টলি, জো রুটের মতো তিন স্পিনার টাট্টুর মতো বল ঘোরাচ্ছেন। পটাপট পড়ছে উইকেট। ওই সময় বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে হত কাউকে। যিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ডিফেন্স করতে জানেন। বিপক্ষের বোলিংয়ে ঘাবড়াবেন না। লড়াই করবেন। পাল্টা ছক সাজাবেন।
শুভমন প্রথম ইনিংসে রান পান না। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে পারেন। রাঁচিতে দ্বিতীয় ইনিংসে হাফসেঞ্চুরির পর হয়তো নিজেকে অনেক প্রশ্নের উর্ধ্বে তুলে ধরলেন। চতুর্থ ইনিংসে শুভমন যখন সেরাটা দিতে পারছেন, তিনি যে চাপ নিতে জানেন, তাও প্রমাণ হয়ে যায়। ৬ নম্বর হাফসেঞ্চুরি করলেন কেরিয়ারে। যার তিনটে এল দ্বিতীয় ইনিংসে। চেতেশ্বর পূজারার বদলে তিন নম্বরে নেমে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বড় কথা হল, ধৈর্যের নিরিখে অনেক সিনিয়রের থেকে এগিয়ে থাকবেন তিনি। রাঁচিতে ১২৪ বলে ৫২ নট আউট করে গেলেন। ১১৯ বল পর্যন্ত কোনও চারও মারেননি। সোজা কথায় বললে, বল খেলার ‘সেঞ্চুরি’ করে ফেলেছেন। কিন্তু ছয় দূরে থাক, একটা চারও মারেননি। হালফিলের ক্রিকেটে, সে টেস্ট হোক আর অন্য কোনও ফর্ম্যাট, তাতে বলের সেঞ্চুরি হয়ে গেলেও চার বা ছয় আসেনি, এমনটা বিরল ঘটনা। শুভমন দেখালেন, ধৈর্য সব প্রজন্মেরই দরকার। ১১৯ বলে ৩৯ রান করে ক্রিজে ছিলেন। ১২০তম বলে মারলেন প্রথম ৬। পর পরই আবার এল একটা ছয়। আর তা দিয়েই হাফসেঞ্চুরি।
নিজের এমন ব্যতিক্রমী ইনিংস নিয়ে কী বললেন শুভমন? ‘একটু টেনশন ছিল। পর পর উইকেট পড়লে চাপ তো তৈরি হয়ই। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে হয় অনেক সময়। ওরা এত ভালো লাইনে বল করছিল যে, চার মারার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই কারণেই উইকেটে দাঁড়িয়ে থেকে খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তবে মাথায় ছিল, সিঙ্গলসটা চালু রাখতে হবে।’
টেস্টে রান পাচ্ছেন না কেন, প্রশ্ন উঠছিল। টিম থেকে বাদ দেওয়া উচিত, বলাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরলেন প্রথাগত নিয়ম অনুসরণ করে। পা বাড়িয়ে মাথা নিচু করে ডিফেন্স করে। ১৫৯ মিনিট ক্রিজে থেকে ১২৪ বল খেলে নট আউট ৫২ রানের ইনিংসটা ব্যতিক্রমীই বটে। বিরাট রাজার সাম্রাজ্যে শুভমনকে কেন যে প্রিন্স বলা হচ্ছে, তাই যেন দেখিয়ে গেলেন। পরিণত হলে সব পারা যায়।