কলকাতা: টাকা থাকলে কি না হয়! বড়লোক হলে যা ইচ্ছে কিনে ফেলা যায়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশীয় সংস্থা। ক্রিকেট দুনিয়ার এই ‘বড়লোক’ বোর্ডকে নিয়েই তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বলা হয় আইসিসি আসলে চলে বিসিসিআইয়ের টাকায়। আর তাই আইসিসির যে কোনও টুর্নামেন্টে বাড়তি অ্যাডভান্টেজ পেয়ে থাকে ভারত। সূচি থেকে শুরু করে ম্যাচ সম্প্রচার পর্যন্ত সবই করা হয় ভারতের কথা ভেবে। রোহিত শর্মাদের বিশ্বকাপ (T20 World Cup 2024) সেমিফাইনাল শুরুর আগে এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া। বলা উচিত, এত দিনের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে।
২৭জুন অর্থাৎ আগামিকাল ভারতীয় সময় অনুযায়ী সকালে খেলা প্রথম সেমিফাইনাল। আফগানিস্তান নামবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। আর দ্বিতীয় সেমিফাইনাল অর্থাৎ ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ রাত্রি ৮টা থেকে। ইউরো হোক আর কোপা কিংবা ফুটবল বিশ্বকাপ গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচ, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল যে টিমগুলো খেলে, তাদের ম্যাচ দেওয়া হয় একই সময়ে। আশ্চর্যজনক ভাবে ক্রিকেট এই নিয়ম কখনওই মানে না। টি-২০ বিশ্বকাপও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রথম সেমিফাইনাল সকালে, দ্বিতীয় সেমিফাইনাল রাতে। আর এতেই উঠেছে অভিযোগ, জেনে বুঝে আইসিসি ভারতকে টানছে। ভারতীয় দর্শকদের কথা ভেবে রাত্রি ৮টায় রাখা হয়েছে ম্যাচ। অর্থাৎ আইসিসি ভারতীয় মার্কেট থেকেই বিশ্বকাপের অর্থ তুলে নিচ্ছে টিভি সম্প্রচারের মাধ্যমে। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট এ ভাবে চলবে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ইংল্যান্ডের মিডিয়া।
অবাক করার ঘটনা এখানেই শেষ নয়। প্রথম সেমিফাইনালের জন্য রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে। অর্থাৎ আফগানিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ যদি বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যায়, তা হলে তা হবে পরদিন। অথচ ভারতের ম্যাচের কোনও রিজার্ভ ডে নেই। গায়ানাতে বৃষ্টি ঢুকে পড়েছে। ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা যথেষ্ট। তা সত্ত্বেও এই ম্যাচে রিজার্ভ ডে কেন রাখা হয়নি? ওই দুই দেশের মিডিয়ার যুক্তি ভারত যেহেতু সুপার এইটের গ্রুপে টপ করেছে, তাই বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে গেলে ফাইনালে চলে যাবেন বিরাট কোহলিরা। অবশ্য এর পাল্টা যুক্তিও রয়েছে। বিশ্বকাপের সূচি যখন প্রকাশ হয়েছিল, তখনই বোঝা গিয়েছিল ভারত যদি সুপার এইটে ভালো পারফর্ম করে, সেমিফাইনাল ম্যাচ যদি বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়, তা হলে সরাসরি ফাইনালে চলে যাবে। দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচে রিজার্ভ ডে না রাখার পিছনে যুক্তি ছিল, গায়ানা থেকে বার্বাডোজ যাওয়ার সময় পাবেন না রোহিত-কুলদীপরা। তেমনটা হলে অনুশীলন ছাড়াই ফাইনালে নামতে হবে ভারতকে।
তা সত্ত্বেও বিতর্ক এড়ানো যাচ্ছে না। ভারতকে নানাবিধ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার খেলা আইসিসি বহুদিন ধরেই খেলছে, এমন অভিযোগ নতুন নয়। ভারতের মতো দেশে ক্রিকেট ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক বলেই আইসিসিও বিসিসিআইয়ের দাদাগিরি মেনে নেয়। এই বিপণনের কাছে নতিস্বীকার করে আইসিসি আসলে ক্রিকেটেরই ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ এতদিন চাপা সুরেই শোনা যেত। তা-ই ক্রমশ প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হয়ে উঠছে।