Bangladesh Football: সাবিনা-তৃষ্ণাদের হাত ধরে আমূল পাল্টে যাবে বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবল

মেয়েরা বছরের পর বছর চেষ্টা, পরিশ্রম, মেধা দিয়ে তিল তিল করে নিজেদের গড়ে তুলেছে। তাঁরা যেমন এগিয়ে যাবেন, তেমনই তাঁদের দেখে এগিয়ে আসবে নতুন প্রজন্ম।

Bangladesh Football: সাবিনা-তৃষ্ণাদের হাত ধরে আমূল পাল্টে যাবে বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবল
Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 20, 2022 | 6:49 PM

রাজীব খান, ঢাকা

মেয়েদের ফুটবলে এটা বাংলাদেশের (Bangladesh Football) নবজাগরণ বললে ভুল হবে না। শুধু ফুটবলেই নয়, দেশের খেলাধুলায় মেয়েদের ব্যারিয়ার ভাঙা এক সাফল্য। সাফ কাপে মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর হয়তো এতদিনের ছবিটা পাল্টে যেতে পারে। এখন বাবা-মা ফুটবল খেলতে নিয়ে যাবেন মেয়েদের। অধিনায়ক সাবিনা, তৃষ্ণা, মার্জিয়া, মনিকা, আঁখি খাতুন একেক জন ব্র্যান্ড হয়ে উঠবেন। নতুন সূর্যোদয় হিসেবে দেখা যেতে পারে এই সাফল্য। প্রথম বারের মতো সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশের মেয়েদের টিমকে অভিনন্দনে ভরিয়ে দিচ্ছেন সবাই।

বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য ইতিহাস। এই ইতিহাস রচনায় খেলোয়াড়, কোচ, ট্রেনার সবার জন্যই বড় একটা পরিবর্তন সূচিত হল। ছোট্ট করে বললে, এটি মেয়েদের ফুটবলের জাগরণ। এই মেয়েরা বছরের পর বছর চেষ্টা, পরিশ্রম, মেধা দিয়ে তিল তিল করে নিজেদের গড়ে তুলেছে। তাঁরা যেমন এগিয়ে যাবেন, তেমনই তাঁদের দেখে এগিয়ে আসবে নতুন প্রজন্ম।

প্রাক্তন মহিলা ফুটবলার ও ফিফা স্বীকৃত দুই রেফারি জয়া চাকমা ও সালমা আক্তার মনিরা উচ্ছ্বসিত। তাঁরা ফিরে গিয়েছেন অতীতে। কেমন ছিল তাঁদের বেড়ে ওঠার দিনগুলো? দু’জনে একযোগে বললেন, ‘আমরা যখন প্র্যাক্টিসে যেতাম, স্থানীয় ছেলেরা বলত, তোমরা কী ফুটবল খেলবে? তার থেকে বরং এসো, আমাদের সঙ্গে খেলো। এ ভাবে প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হতাম। আর সেই কারণেই পরিবারের তরফে চাপ আসত।’ জয়া আর সালমা বলে দিলেন, ‘আমাদের ফুটবল খেলার ইচ্ছেপূরণের জন্য পরিবারকে কখনওই পাশে পাইনি। কারণ তাঁরা মনে করত, মেয়ে হয়ে জন্মেছি যখন, বিয়ে করে পরের ঘরে যেতে হবে। বয়স হয়ে গেলে পরে আর কেউ যদি বিয়ে করতে রাজি না হয়। তাই পড়াশুনার চাপই বেশি থাকত। অনেক বোঝানোর পর পরিবার মেনে নিলেও আশপাশের মানুষজন অন্য ভাবে দেখত। স্পনসরশিপ একদমই ছিল না। ভালো লাগছে সাবিনা, তৃষ্ণাদের দেখে। ওরা অনেক সাপোর্ট পাচ্ছে। আরও সাপোর্ট যদি পায়, আরও ভালো ফল করতে পারবে। অনেক ইতিহাস ওরা তৈরি করবে।’

এক সময় মাইলের পর মাইল হেঁটে প্রাক্টিসে যেতে হত জয়া চাকমা ও সালমা আক্তারদের। টাকা পয়সার অভাব তো ছিলই। খেলার পোষাক, জুতা বা অন্যান্য সরঞ্জামও ছিল না। এখন এগুলোর অভাব নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাদের টিন বা কাঁচা ঘরবাড়ি ছিল এখন তাদের ইট-পাথরের পাঁকা ঘর হয়েছে। সবই ফুটবলের অবদান। সেই তাঁরাই আশাবাদী,সাফ কাপের শিরোপা বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবলের বিবর্ণ ছবিটা নিশ্চিত ভাবেই পাল্টে দেবে। জয়া যেমন বলেই দিলেন, ‘খেলোয়াড়রা যদি নিজেদের ধরে রাখতে পারে, তা হলে আরও অনেক সাফল্য ধরা দেবে। বাংলাদেশে তৈরি হবে নারী ফুটবলের জাগরণ। মেয়েরা এখন মেয়েরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে। অনেক সংগ্রাম করে মেয়েদের এই পর্যায়ে উঠে আসা। মেয়েদের জাতীয় টিম এতদিনের ব্যারিয়ারটা ভেঙে দিয়েছে। অবশ্য মেয়েদের ফুটবলকে সর্বজনীন না হলে এত প্রতিভাবান ফুটবলার তৈরি হত না।’

যে মেয়েগুলো আজ থেকে পাঁচ বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৬ খেলেছে, সেই মেয়েরাই সাফের ফাইনাল খেলেছেন। জাতীয় দলে মেয়েগুলোর গড় বয়স ২৪-২৫ বছর। একই ট্রেনিং পেয়েছে, একই খাবার খেয়েছে, একই ছাদের নিচে থেকেছে, নিজেদের সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। সত্যিই অসম্ভব উন্নতি করেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। জয়তু নারী ফুটবল দল। জয়তু বাংলাদেশ।