EXCLUSIVE WIMBLEDON: করোনাকালে কেমন হল উইম্বলডন? অভিজ্ঞতা শোনালেন বাঙালি আম্পায়ার

WIMBLEDON :কোনও দর্শকই ভ্যাক্সিনের ডাবল ডোজ না পেলে পাননি উইম্বলডনের টিকিট। একেবারে কঠোর নিয়ম। আগে ডাবল ভ্যাক্সিনের রিপোর্ট দেখান, তবেই মিলবে উইম্বলডনের টিকিট। এটা শুধু সাধারণ দর্শকদের জন্য নয়। নিয়ম সেলেবদের জন্যও।

EXCLUSIVE WIMBLEDON: করোনাকালে কেমন হল উইম্বলডন? অভিজ্ঞতা শোনালেন বাঙালি আম্পায়ার
এবারের উইম্বলডনেও আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব সামলেছেন বাংলার আম্পায়ার সৈকত রায়
Follow Us:
| Updated on: Jul 12, 2021 | 10:14 PM

রক্তিম ঘোষ

কলকাতাঃ রবিবার ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের বাইরে কাতারে কাতারে দর্শক দেখে চোখ কপালে উঠেছে অনেকেরই। উইম্বলডনে দর্শকভর্তি স্টেডিয়াম না থাকলেও, কোনও দর্শকদের মুখেই মাস্ক ছিল না। করোনা উত্তরোত্তর বাড়ছে ব্রিটেনে। আবার। কিন্তু উইম্বলডনে কি করোনা বিধি কি আলগা ছিল? করোনা বিশ্বে প্রথমবার কেমন ছিল উইম্বলডনের নিয়মাবলী। এবার TV9 বাংলার সঙ্গে উইম্বলডনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন বাঙালি আম্পায়ার সৈকত রায়। চলতি উইম্বলডনে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব সামলেছেনব বাংলার আম্পায়ার সৈকত। কেমন ছিল করোনা বিশ্বে প্রথম উইম্বলডনের অভিজ্ঞতা? সৈকত রায়ের বয়ানে-

   কলকাতা টু লন্ডন-

এবার করোনার জন্য বিস্তর কড়াকড়ি ছিল লন্ডন যাওয়ার ক্ষেত্রে। কোনও ভারতীয়ই সরাসরি ভারত থেকে লন্ডনে প্রবেশ করতে পারছেন না। ইউরোপের অন্য কোনও দেশে কোয়ারেন্টিন কাটিয়ে তবেই ঢোকার ছাড়পত্র মিলছে লন্ডনে প্রবেশের। বাংলা থেকে প্রায় ৫জনের দল আমরাযাচ্ছিলাম উইম্বলডনে অফিশিয়াল হিসেবে। প্রথমে ঠিক করি আর্মেনিয়া হয়ে লন্ডন যাব। আর্মেনিয়ায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভিসা পাওয়া যায়। তবে আমাদের ভিসা বাতিল হয়।

এরপর আমরা খবর পেলাম সার্বিয়ায় ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা ‘ দেওয়া হয়। আমরা স্থির করলাম তবে সার্বিয়া হয়েই লন্ডনে যাব। ৯ই জুুন আমরা টিকিট বুক করি।কলকাতা থেকে মুম্বই হয়ে আমস্টারডাম। সেখান থেকে পৌঁছলাম সার্বিয়াতে।

১০ তারিখ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে থাকতে হয় সার্বিয়ার হোটেলে। খাওয়া দাওয়া থেকে হোটেল বিল- সব নিজের পকেট থেকেই খরচ করতে হয় আমাদের। তার মধ্যে আবার করোনা পরীক্ষা। সব সামলে আমরা প্রস্তুত হচ্ছিলাম লন্ডন যাওয়ার জন্য।

  উইম্বলডনে কড়াকড়ি-

২১ তারিখই আমরা সার্বিয়া থেকে পৌঁছই লন্ডনে। সেদিন থেকেই ৪দিনের জন্য শুরু হয় উইম্বলডনের কোয়ালিফাইং রাউন্ড। কিন্তু নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে আমাদের প্রথম কোর্টে উপস্থিত থাকার ক্ষেত্রে ছিল নিষেধাজ্ঞা। কেন?

আমরা এতদিন উইম্বলডনে ম্যাচ পরিচালনা করতে গেলে দেখেছি নিজেদের টাকা খরচ করে হোটেল বুক করে থাকতাম। এবার উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ নিজেরাই হোটেল বুক করে দিচ্ছে। কিন্তু সেই হোটেলে যা নিয়ম, সেই কড়াকড়ি দেখলে অবাক হতে হয়। আমরা হোটেলে পৌঁছানোর পর কড়া নির্দেশ, আমরা MRE অর্থাৎ মিনিমাম রিস্ক এনভায়োরমেন্ট জোনে ঢুকে পড়লাম। যেখানে কারও সঙ্গে মেলামেশা করা যাবে না। সোজা ঘরে চলে যান,এল নির্দেশ। হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে হবে করোনা টেস্ট। ঘরে ব্যাগ রেখে সোজা চলে আসতে হবে সেখানে। করতে হবে পরীক্ষা।

হোটেলের রুমে ঢুকে দেখি প্যাকেট। যার মধ্যে রয়েছে আম্পায়ারের জন্য পোষাক। উইম্বলডনের পক্ষ থেকে রেখে যাওয়া হয়েছে। আমি সোজা নেমে গেলাম করোনা পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষার পরও নির্দেশ, যতক্ষণ ফল বেরোবে ততক্ষণ ঘরবন্দি হয়েই থাকতে হবে। বিকেলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসতেই আমরা ছাড় পাই স্টেডিয়ামে গিয়ে আমাদের অ্যক্রিডিটেশন কার্ড তোলার।

তবে পরের তিনদিন আমরা ছিলাম উইম্বলডনের সেন্টার কোর্ট থেকে অন্য কোর্টেও। ৩দিন টানা কোয়ালিফাইং রাউন্ডে।

 উইম্বলডনের পরিচয়পত্রেও করোনা সতর্কতা-

পরিচয় পত্রে আবার সতর্কতা?  সে আবার কি? এবার পরিচয়পত্রে রয়েছে অনেক রকমের রং। কারও সবুজ, কারও হলুদ। এরকম। যাঁরা হলুদ কার্ডের মালিক তাঁরা শুধুমাত্র হলুদ কার্ড অধিকারীদের সঙ্গে মিশতে পারবেন। সবুজ কার্ডের মালিকরা অন্য সবুজ কার্ডধারীদের সঙ্গে। এর বাইরে মেশা যাবে না। তাই আমাদের মেনে চলতে হত স্টেডিয়াম থেকে হোটেল।

স্টেডিয়ামে কঠোর নিয়ম-

স্টেডিয়ামেও ছিল কড়া নিয়ম। কোর্টে নামার আগে অবধি সারাক্ষণ মুখে রাখতে হবে মাস্ক। কোর্টের নামার পরেই খোলা যাবে মাস্ক। এভাবেই আমরা মূলপর্বের ম্যাচ শুরু করি। আমি নিজে প্রথমে ১২ নম্বর কোর্টের দায়িত্বে ছিলাম। মন্ট্রিয়েলের মত তারকার ম্যাচ পরিচালনা করেছি।

গ্যালারিতে তো কারও মুখে মাস্ক ছিলনা?

গ্যালারিতে ম্যাচ দেখতে কে আসেননি! টম ক্রুজ থেকে ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রী। উইম্বলডন দেখতে হাজির সবাই। কিন্তু কারও মুখে মাস্ক না দেখে আপনারা হয়ত সমালোচনা করেছেন। তবে আপনাদের জানিয়ে রাখি, কোনও দর্শকই ভ্যাক্সিনের ডাবল ডোজ না পেলে পাননি উইম্বলডনের টিকিট। একেবারে কঠোর নিয়ম। আগে ডাবল ভ্যাক্সিনের রিপোর্ট দেখান, তবেই মিলবে উইম্বলডনের টিকিট। এটা শুধু সাধারণ দর্শকদের জন্য নয়। নিয়ম সেলেবদের জন্যও। কোনও ফাঁকফোকর নয়। আর তাই যাঁরা ভাবছেন এই করোনার বাজারে কিভাবে অবলীলাক্রমে দর্শকরা মাস্কহীন মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানালাম উইম্বলডনের নিয়ম।

কেমন ছিল ফেডেরার-জকোরদের নিয়ম?

কড়া বায়ো বাবলের নিয়ম ছিল রজার ফেডেরার, জকোভিচদের জন্য। কঠিন বায়ো বাবলের নিয়মের জাঁতাকলে আটকে ছিলেন ফেডেরার, জকোভিচরা। আমরাও নির্দিষ্ট জোনের বাইরে কখনও যেতে পারিনি।

ফেরাতেও ভোগান্তি-

৯ই জুলাই আমাদের ওখান থেকে বিমান ছিল। প্রথমে ফ্লাইট রুট ছিল লন্ডন থেকে দোহা। সেখান থেকে কলকাতা। হঠাৎই বাতিল হল বিমান। অবার অন্য সংস্থার বিমানে ফেরার পালা। এবার লন্ডন থেকে বিমানে প্রথমে আবু ধাবি। সেখান থেকে সোজা বেঙ্গালুরু। সেখানে অপেক্ষা করতে হল ৮ ঘন্টা। কারন বিদেশ থেকে আসলে, করোনা টেস্ট বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে বাধ্যতামূলক। সেসব মিটিয়ে অবশেষে কলকাতায় ঢুকলাম শুক্রবার।

আর হ্যাঁ, একটা তথ্য দিয়ে রাখি, উইম্বলডনের মাঝে ২টি রবিবার থাকে। এতদিন নিয়ম ছিল , মাঝের রবিবারে হবেনা কোনও ম্যাচ। সেই নিয়ম উঠে যাচ্ছে। পরের বছর থেকে ২ রবিবারই হবে ম্যাচ।

(সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুলিখন)