দেশের স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রি এবং হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীদের জন্য বড় ঘোষণা করল ভারত সরকার (Government Of India)। একটি স্বদেশি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র, যা সম্পূর্ণ ভাবে ভারতে তৈরি হবে এবং ভারতীয়দের জন্য়ই তৈরি করা হবে। আর সেই দেশি বা মেড ইন ইন্ডিয়া অপারেটিং সিস্টেম (Made In India Operating System) হবে গুগল-এর অ্যান্ড্রয়েড এবং অ্যাপল-এর আইওস-এর (Android And iOS) বিকল্প। বিশ্বের স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে বহু বছর ধরেই ডুওপলি চলছে, একচ্ছত্র আধিপত্য অ্যাপল এবং গুগল-এর। আর সেই জায়গাতেই একটা ভারতীয় বিকল্প এনে প্রতিযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশিই অপারেটিং সিস্টেমের জগৎেও ভারতের একটা প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার জন্য় একটি অ্যাকাডেমিক এবং স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমও গড়ে তোলা হবে বলে জানা গিয়েছে।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম পিটিআই-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইলেকট্রনিক্স ও আইটি দফতরের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর ভারত সরকারের এই আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। চন্দ্রশেখর বলছেন, সরকার একটি নীতিও চালু করতে চাইছে, যেখানে এমন অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসার জন্য একটি সহজতর ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা হবে। মন্ত্রী বলছেন, “এই বিষয়ে ভারত সরকার এবং সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গিয়েছে।”
অপারেটিং সিস্টেমে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এর একচ্ছত্র আধিপত্য এবং হার্ডওয়্যারের উপরে তাদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি উল্লেখ করে চন্দ্রশেখর বলছেন, “তৃতীয় আর কেউ নেই। যদি দেশের ইকোসিস্টেমের মধ্যেই কিছু বাস্তব সক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়, তাহলে সরকার সেই বিশেষ ক্ষেত্রের উন্নয়নে ব্যাপক ভাবে আগ্রহী হবে।” কিন্তু কারা এই অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করবে এবং কবে নাগাদ তা চালু হবে সে বিষয়ে চন্দ্রশেখর বলছেন, “এ বিষয়ে আমরা অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। তবে সবার প্রথমে পলিসির দিকে নজর রাখছি।”
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-র একটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে, স্বদেশি অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসার ভারত সরকারের এই প্রয়াস যুক্তিযুক্ত। তবে অতীতেও নতুন অপারেটিং সিস্টেম তৈরির উদ্যোগ লক্ষ্য করা গিয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক বারই সেই প্রয়াস মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার সবথেকে বড় কারণ হল, অপারেটিং জগৎের এই দুই জায়ান্ট অ্যাপল ও গুগল-এর মধ্যে বাকিদের সাইডলাইন করে রাখার এক প্রবণতা। অতীতে আমরা ব্ল্যাকবেরি ওএস বা অপারেটিং সিস্টেম দেখেছি, য়া ধোপে টিকতে পারেনি। দেখেছি সিম্বিয়ান অপারেটিং সিস্টেমও, সেটিই খুব একটা ছাপ ফেলতে পারেনি অপারেটিং সিস্টেমের জগৎে।
একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা এবং সেটিকে কাজ করার জন্য, একটি বিস্তৃত পরিকল্পনারও প্রয়োজন যা হার্ডওয়্যার পর্যন্ত পরবর্তীতে প্রসারিত হতে পারে। কারণ, তা সফল করার জন্য বড় হ্যান্ডসেট নির্মাতাদের সেটিকে গ্রহণ করতে হবে। ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি মন্ত্রকের জন্য প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন যে, এবার সম্পূর্ণরূপে ভারতে একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর এই বিষয়ে বলছেন, “শীর্ষস্থানীয় প্রতিটি পণ্য বিভাগে দেশি চ্যাম্পিয়ন তৈরি করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।”
বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওস-এর বিকল্প বেশ কিছু অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। কয়েক বছর আগে টিজ়েন নামক একটি অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে এসেছিল স্যামসাং। যদিও তা স্মার্টফোনে সে ভাবে ব্যবহৃত না হলেও পরবর্তীতে বেশ কিছু স্মার্টটিভিতে এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেছিল স্যামসাং। রিলায়েন্স জিও তার প্রতিটি ফিচার ফোনের জন্য কাইওএস নামক একটি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে। নোকিয়া-র কিছু ফিচার ফোনেও আবার এই অপারেটিং ব্যবহৃত হয়। অন্য দিকে সম্প্রতি লঞ্চ হওয়া রিলায়েন্স জিওর সস্তার স্মার্টফোন জিওফোন নেক্সট-এ ব্যবহৃত হয়েছে প্রগতি অপারেটিং সিস্টেম, যদিও তা তৈরি করেছে গুগল।
গত দশকে ফোনের জন্য উইন্ডোজ় অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে এসেছিল মাইক্রোসফট। পাই অ্যান্ড্রয়েডকে টেক্কা দিতেই তৈরি করা হয়েছিল সেটি। কিন্তু ডেভেলপার সাপোর্টের অভাবে তারও অকাল মৃত্যু হয়! যদিও সিকিওরিটি এবং সামগ্রিক ইউজার অভিজ্ঞতার দিক থেকে নজর কেড়েছিল মাইক্রোসফট-এর উইন্ডোজ ফোন প্ল্যাটফর্ম। এখন দেখার, স্বদেশি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার চ্যালেঞ্জ কোন কোন ভারতীয় সংস্থা নিতে চায় এবং তার থেকেও বড় বিষয়টি হল, কোন কোন স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থা সেই মেড ইন ইন্ডিয়া অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন: দেশে সাইবার অপরাধের ঘটনা কেন বেড়েই চলেছে? সুরক্ষিত থাকার মোক্ষম দাওয়াই জেনে নিন
আরও পড়ুন: চলতি বছরেই বাজারে রিলায়েন্স জিও-র ৫জি স্মার্টফোন, জিওফোন ৫জি-র দাম হবে ১০,০০০ টাকারও কম
আরও পড়ুন: ফোন মেরামতি থেকে কাছাকাছি সার্ভিস সেন্টার, সব সমস্যার সমাধানে সার্ভিস প্লাস অ্যাপ লঞ্চ করল শাওমি