Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

H5N1 Virus: 5 কোটিরও বেশি মৃত্যু এই ভাইরাসে, ভবিষ্যৎ নিয়ে কী বলছে WHO?

H5N1 Virus effects: ইতিমধ্যেই নজিরবিহীন এই H5N1-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। H5N1 নামক স্ট্রেনটি এখনও পর্যন্ত পাখিদের শরীরে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে বিপজ্জনক ভাইরাসগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

H5N1 Virus: 5 কোটিরও বেশি মৃত্যু এই ভাইরাসে, ভবিষ্যৎ নিয়ে কী বলছে WHO?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 03, 2023 | 8:45 AM

এক অতিমারী যেতে না-যেতেই আবার কি এক মহামারীর সামনে পৃথিবী? 2020 সাল থেকে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে গোটা বিশ্ব যে মৃত্যুমিছিল দেখেছে, তা যে কতটা মর্মান্তিক, 2023-এ এসে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সব কিছু যখন অনেকটাই স্বাভাবিক, তখন প্রায়শই সামনে আসছে, নিত্যনতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর। 2022 সাল থেকে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়া H5N1 ভাইরাসের কারণে 50 মিলিয়ন, অর্থাৎ 5 কোটিরও বেশি পাখি মারা গিয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, প্রায় 10 কোটি পাখি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মিউটেশন হয়ে বার্ড ফ্লু ভাইরাস প্রাণীকূলের জন্য আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, দাবি করছে সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্ট। ইতিমধ্যেই নজিরবিহীন এই H5N1-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। H5N1 নামক স্ট্রেনটি এখনও পর্যন্ত পাখিদের শরীরে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে বিপজ্জনক ভাইরাসগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

H5N1 ভাইরাস কী?

বার্ড ফ্লু কথাটির সঙ্গে সকলেই অল্পবিস্তর পরিচিত। বার্ড ফ্লু সাধারণত 5 ধরনের ভাইরাস দ্বারা ছড়ায়। এগুলি হল: H7N3, H7N7, H7H9, H9N2 ও H5N1। এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়েছে H5N1-কে। 1997 সালে চিনে এই ভাইরাসের প্রথম ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল । এটি সামুদ্রিক পাখি, মুরগি, হাঁসের মতো পাখিদের দেহে ছড়িয়ে পড়েছে। ধীরে-ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।

এই ভাইরাসের গ্রাসে কত পাখির প্রাণ গিয়েছে?

সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, 20টি বিলুপ্তপ্রায় ক্যালিফোর্নিয়া কনডর পাখি H5N1 অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। গোটা বিশ্বে এই পাখি মাত্র 300টি বেঁচে আছে। শুধু তাই-ই নয়, আমেরিকায় 2022-এর জানুয়ারি থেকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গিয়েছে আরও অনেক পাখির। তার মধ্য়ে রয়েছে প্রচুর সংখ্যক বাল্ড ঈগল, ক্যাসপিয়ান টার্নস ইত্যাদি। 2022 সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় H5N1 ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে 30টি বিলুপ্তপ্রায় আফ্রিকান পেঙ্গুইনেরও প্রাণ গিয়েছে।

H5N1 ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক?

করোনার মতো প্রাণঘাতী ভাইরাস পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ধীরে-ধীরে বিলুপ্তির পথে। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, এই H5N1 ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক। বিজ্ঞানীরা কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ভাইরাসটিকে সত্যিই বিপজ্জনক হিসাবে বিবেচনা করছেন তারা। কারণ এর স্ট্রেন বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে। এই ভাইরাসের কারণে মানুষের মৃত্যুর হার 60 শতাংশের বেশি, যা উদ্বেগের বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র মতে, এই ভাইরাস যদি মানুষের মধ্য়ে দ্রুত ছড়াতে শুরু করে, তাহলে তা মারাত্মক ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

স্তন্যপায়ী প্রাণীরা এই ভাইরাস দ্বারা কীভাবে আক্রান্ত হচ্ছে?

প্রথমে পাখিরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। তারপর তারা কোনওভাবে অন্যান্য প্রাণীর সংস্পর্শে এসে ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু এভাবেই নয়, পাখিদের বিষ্ঠার সঙ্গেও এই ভাইরাস পরিবেশে মিশছে। তারপর সেই ভাইরাস প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরে ঢুকছে। বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন থেকে সামনে এসেছে এক ভয়াবহ তথ্য; ইতিমধ্যেই এই ভাইরাস বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আর সেই সব দেশে বহু স্তন্যপায়ী প্রাণী আক্রান্ত হয়েছে। সেই সব আক্রান্ত প্রাণীদের মধ্য়ে তালিকায় প্রথমে রয়েছে শীল মাছ এছাড়াও আক্রান্তের তালিকায় রয়েছে কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বন্য ভাল্লুক-সহ আরও অনেক প্রাণী। শুধুমাত্র 2023 সালে, পেরুতে H5N1 3,000 টিরও বেশি শীল মাছের মৃত্যু হয়েছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর ঘটনা প্রথম পাওয়া যায় স্পেনের একটি খামারে বেড়ে ওঠা মিঙ্কদের (বেজি জাতীয় প্রাণী) মধ্য়ে।

এই ভাইরাস কি মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাসে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার অনেক ঘটনা ঘটছে। যারা ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হয়েছে, তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত বিভিন্ন পাখির সংস্পর্শে এসেছে। আর তা থেকেই মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। ফ্লু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে WHO জানিয়েছে, এই ভাইরাস এবার অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে, তাই সতর্ক থাকা দরকার। তবে তারা জানাচ্ছে, ভাইরাস এত সহজে মানুষকে সংক্রমিত করতে পারবে না। তবে এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসটির ক্রমাগত জেনেটিক পরিবর্তনের হয়। যদি H5N1 ভাইরাস মানুষের মধ্যে আরও সংক্রমণযোগ্য হয়ে ওঠে, তাহলে তা উদ্বেগের কারণ হবে নিঃসন্দেহে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই ভাইরাস নিজের গঠন দ্রুত বদলাচ্ছে। সোজা কথায়, এটির মিউটেশন হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে এ নিয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছে, যেভাবে এই ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি বদলাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে এটি আরও বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরেও দানা বাঁধতে পারে। আগে থেকে প্রস্তুতি ও সচেতনতা থাকাটা তাই দরকার। ভবিষ্যতে এই ভাইরাসের হানা থেকে বাঁচার জন্য টিকারও প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞই।

এখনও পর্যন্ত কতজন মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে?

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, 2021 সালের ডিসেম্বর থেকে সারা বিশ্বে 11 জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সকলের শরীরে হালকা থেকে গুরুতর লক্ষণ দেখা গিয়েছে। তবে যা কিছুই হয়েছে, তার সবই কোনও না কোনও পাখির দ্বারাই ছড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত মানুষ থেকে মানুষে ভাইরাস ছড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণা চলছে। যে সব মানুষেরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পোলট্রি সেন্টারে কাজ করতেন অথবা তারা সংক্রামিত পাখির সংস্পর্শে এসেছিলেন।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী এক দশকের মধ্যে করোনার মতো প্রাণঘাতী কোনও নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ যদি ছড়িয়ে পড়ে, তবে তার জন্য প্রত্যেকটি দেশ কতটা প্রস্তুত, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। 2009 সালে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণও বড় আকার ধারণ করেছিল। করোনার পাশাপাশি H5N1 ভাইরাসও এই মুহূর্তে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে নতুন অতিমারির আশঙ্কা কিন্তু অমূলক নয়।