জলে নতুন কায়দায় দখলদারি, দক্ষিণ চিন সাগরে বড় যুদ্ধের আশঙ্কা

চিনের পতাকার রং লাল। তাই রেড ড্রাগন বলাটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সাগরে চিনের আগ্রাসন লাগামছাড়া হওয়ায় এখন তাদের ব্লু ড্রাগন বলে ডাকছে দুনিয়া। এতদিন চিন নাইন ড্যাশ লাইন নামে একটা কাল্পনিক রেখা এঁকে দিয়ে দাবি করত দক্ষিণ চিন সাগরে এটা তাদের জলসীমা। এবার তারা টেন ড্যাশ লাইন নামে নতুন একটা রেখা টেনে দেশের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে যে সাউথ চায়না সি-র ৯০ শতাংশই ড্রাগনের গ্রাসে চলে যাচ্ছে।

জলে নতুন কায়দায় দখলদারি, দক্ষিণ চিন সাগরে বড় যুদ্ধের আশঙ্কা
| Edited By: | Updated on: Jun 17, 2024 | 11:57 PM

সকালে উঠে দেখা গেলো পায়ের পাতাটা ফুলে গেছে। দুপুরের মধ্যে হাঁটু পর্যন্ত পা ফুলে ঢোল। সঙ্গে গাঁটে গাঁটে ব্যথা। বমি, পেট খারাপ। তারপর আর কিছু করা গেল না। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মানুষটার ঠাঁই হল অ্যালবামে। টোকিও মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান কেন কিকুচি সংবাদমাধ্যমে তাঁর রোগীদের এই অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। রোগটার পোশাকি নাম streptococcal toxic shock syndrome, STSS. মৃত্যুর হার শুনলে চমকে যাবেন। ৩০ শতাংশের বেশি। মানে প্রতি ৩ জন আক্রান্তের মধ্যে ১ জনের নিশ্চিত মৃত্যু। আর সেটাও আবার অসুস্থ হওয়ার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। জাপানে ছড়িয়েছে এই অসুখ। গত ১৫ দিনেই হাজারের বেশি আক্রান্ত। আমি আপনাদের একাধিকবার বলেছি যে দুনিয়ার তাবড় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচার উপায় নেই। একটা মহামারি যাবে তো আরেকটা আসবে। এটাই এখন নিউ নর্মাল। তো সেই নিউ নর্মালের এবারের ভিকটিম হল জাপান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু জানিয়েছে ২০২২ সালে ইউরোপের ৫ দেশে এই রোগ ছড়িয়েছিল। ফলে এবার জাপান থেকে আর কোথায় ছড়াবে, তা নিয়ে একটা আশঙ্কা তো থাকেই। আর জাপান দেশটা তো আমাদের ঘর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তাই সতর্ক তো থাকতেই হবে। আর সেই কারণেই আজ এই বিষয়টা দিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা শুরু করলাম। প্রাণঘাতী এই জীবাণুর নাম Group A Streptococcus বা GAS. একে ফ্লেশ ইটিং ব্যাকটেরিয়া বা মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়াও বলা হয়। কারণ এই জীবাণু মানবদেহের মাসল ও টিস্যুর ওপর আক্রমণ করে সেগুলোর দ্রুত ক্ষয় ঘটায়। কয়েকটা উপসর্গের কথা তো শুরুতেই বললাম। এর সঙ্গে আছে গলা ব্যথা। ধূম জ্বর। শ্বাসকষ্ট। হাত-পায়ে র‍্যাশ ও দ্রুত ব্লাড প্রেসার নেমে যাওয়া। ব্লাড প্রেসার নেমে যাওয়ায় দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে রক্ত সরবরাহে ঘাটতি। সেটা থেকে মাল্টি অর্গান ফেলিওর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোভিডের মতোই বয়স ৫০ পেরোলে streptococcal toxic shock, STSS-এ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যাঁদের ডায়াবিটিজ আছে বা যাঁরা অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে কিছু অসুখে ভোগেন, তাঁদের বিপদ বেশি। তো এই রোগ থেকে বাঁচার উপায় কী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড চলে যাওয়ার পর নিয়মকানুন সব উঠে গেছে। আর জীবাণু সেই সুযোগই নিচ্ছে। তাই মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য ঘনঘন হাত ধুতে হবে। আর শরীরে যদি কোথাও কাটা থাকে তাহলে তা ফেলে না রেখে দ্রুত সারিয়ে ফেলতে হবে। রোগ-জীবাণু যদি এভাবে মারাত্মক আকার নেয় তাহলে আরেকটা দিক থেকেও বিপদ আছে। আমরা সবাই জানি যে জীবাণু যুদ্ধ নিষিদ্ধ। কিন্তু দুনিয়ার প্রায় সব বড় দেশই গোপনে ল্যাবরেটরিতে যুদ্ধের জন্য ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া নিয়ে নানা জেনেটিক পরীক্ষা করে থাকে। তারা যদি প্রাকৃতিকভাবেই Group A Streptococcus-এর মতো এরকম প্রাণঘাতী জীবাণু হাতে পেয়ে যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। মানে মানবজাতির আরও সর্বনাশ আর কী। ইতিহাসের দিকে তাকালে ভয় না পেয়েও তো উপায় নেই। সভ্যতার সেই শুরু থেকেই তো নানা ফর্মে চলে আসছে জীবাণু যুদ্ধ।

ধরুন ভারত মহাসাগর। মানে কী ভারতের মহাসাগর। নিশ্চই নয়। ভারত মহাসাগরে আমাদের একটা জলসীমা আছে। অন্যান্য দেশেরও সেরকম জলসীমা আছে। আর বাকিটা আন্তর্জাতিক দরিয়া। নামটা শুধু বড় দেশ হওয়ায় ভারতের নামে। সেই একইরকমভাবে দক্ষিণ চিন সাগর চিনের সম্পত্তি নয়। নামটা শুধু চিনের নামে। কিন্তু ব্লু ড্রাগন এখন দাবি করছে যে দক্ষিণ চিন সাগরে ৯০ শতাংশ এলাকাই চিনের জলসীমার মধ্যে পড়ে। ব্লু ড্রাগন কথাটা খেয়াল করুন। চিনের পতাকার রং লাল। তাই রেড ড্রাগন বলাটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সাগরে চিনের আগ্রাসন লাগামছাড়া হওয়ায় এখন তাদের ব্লু ড্রাগন বলে ডাকছে দুনিয়া। এতদিন চিন নাইন ড্যাশ লাইন নামে একটা কাল্পনিক রেখা এঁকে দিয়ে দাবি করত দক্ষিণ চিন সাগরে এটা তাদের জলসীমা। এবার তারা টেন ড্যাশ লাইন নামে নতুন একটা রেখা টেনে দেশের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে যে সাউথ চায়না সি-র ৯০ শতাংশই ড্রাগনের গ্রাসে চলে যাচ্ছে। সাগরের নানা জনমানবহীন দ্বীপে চিন আর্মি বেস তৈরি করছে। কোস্ট গার্ডের পাহারায় জেলেদের দিয়ে দেদার মাছ ধরাচ্ছে। আর যেসব জায়গায় এসব হচ্ছে, সেগুলোর কোনওটাই চিনের জলসীমার মধ্যে পড়ে না। সাউথ চায়না সি-র অন্য সব দেশের জলসীমার মধ্যে পড়ে। অন্তত বিশেষজ্ঞরা এটাই জানাচ্ছেন। কিন্তু এই অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর বেজিংকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ফলে জিনপিং দাদাগিরিটা চালিয়ে যেতে পারছেন। United Nations Convention on the Law of the Sea-কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি এখন ভারত মহাসাগরেও সমান আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন। লক্ষ্য মালদ্বীপ-শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোকে হাত করে ইন্ডিয়ার ওশেন রিজিয়নে ইন্ডিয়ার প্রভাব কমানো। তবে ভারতের প্রতিরোধের সামনে এক্ষেত্রে চিন যে ঠিক সুবিধে করতে পারছে না। সেকথা আমি আপনাদের আগে বলেছি। একইভাবে দক্ষিণ চিন সাগরে সেনাঘাঁটি তৈরি করে আমেরিকা-ইউরোপের স্বার্থে ঘা দিয়েছেন জিনপিং। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যে যখন তখন লেগে যেতে পারে যুদ্ধ। আর এক্সপার্টরা বলছেন সাউথ চায়না সি-তে একবার যুদ্ধ লাগলে সেটা সীমাবদ্ধ থাকবে না। তা পরিণত হতে পারে আরেকটা ওয়ার্ল্ড ওয়ারে।

গুণে গুণে ঠিক তিনটে প্রশ্ন। এক, রাশিয়া- ইউক্রেনের যুদ্ধে দুনিয়া জুড়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সেখানে একপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কি সমাধানসূত্র বেরোতে পারে? দুই, রাশিয়া ও ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে বসাতে আদৌ কি কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল? তিন, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে কি কোনও খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে? যদি হয় তাহলে সেই প্রস্তাবে কী রয়েছে? যুদ্ধ থামাতে সুইত্‍জারল্যান্ডে পিস সামিটে বসেছিল দুনিয়ার ৮৮টি দেশ। ২ দিনের শান্তি সম্মেলনে যে প্রস্তাব পাশ করা হল, তাতে সই করল না ভারত-সহ ৮ দেশ। ভারতের সই না করার কারণ, যে প্রশ্নগুলো আপনারা শুনলেন, সেগুলোর উত্তর মেলেনি। গত এপ্রিলে এই পিস সামিট ডাকার সময়ই রাশিয়া বলে দিয়েছিল তারা যোগ দেবে না। মজার কথা হল রাশিয়াকে সামিটে ডাকাও হয়নি। রাশিয়াকে বাদ দিয়েই রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে আলোচনা হল। এটা কি আদৌ বাস্তবসম্মত। আপনারাই ভাবুন। শান্তি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধ বন্ধ করে অধিকৃত এলাকা ইউক্রেনকে ফেরত দিতে হবে। খুব ভাল কথা সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকৃত এলাকা রাশিয়ার থেকে ফেরত নেবেই বা কে? ইউক্রেনকে ফেরত দেবেই বা কে? মূল প্রশ্নটার তো উত্তর নেই। বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতি নিয়ে যে প্রস্তাব দেন, সামিটে তার উচ্চবাচ্যও করা হয়নি। এসবের জন্যই আপত্তি জানায় ভারত। ভারতের প্রতিনিধি বিদেশমন্ত্রকের সচিব পবন কে ভার্মা তিনটি প্রশ্ন তোলেন। যেমন বললাম এর কোনও উত্তর আসেনি। পবন ভার্মা এও বলেছেন রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ দু-দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সংশ্লিষ্ট দুই দেশকে বাদ দিয়ে এখানে আর কারও ভূমিকা থাকতে পারে না। পাকিস্তান হোক বা চিন। দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে ভারত বরবারই তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের বিরোধী। রাশিয়া – ইউক্রেন নিয়েও সেই অবস্থানে অনড় থাকল বিদেশমন্ত্রক। ভারতের পাশাপাশি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশও পিস প্রোপাজালে সই করেনি। এবার যে খবরটা দেব, তাতে স্পষ্ট হবে, এই কৌশল আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের আরেকটা বড় সাফল্য। রবিবার পিস সামিট শেষ হওয়ার পর এদিন এনিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে। তো সুইস প্রেসিডেন্ট ভিয়োলা আমহার্ড বললেন, শুধু পিস সামিটে প্রস্তাব পেশ করেই ইউক্রেনে শান্তি ফেরানো সম্ভব নয়। রাশিয়াকে এই প্রক্রিয়ায় সামিল করার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। মানে ভারতের কথাটাই একদিন পর অন্যভাবে বললেন হোস্ট কান্ট্রির প্রেসিডেন্ট।

কেউ বলেছিলেন, দ্য রাইজিং স্টার অফ ইউরোপ। কেউ ডাকছিলেন দ্য পারফেক্ট লেডি প্রেসিডেন্ট বলে। দ্য ডিপ্লোম্যাটের মতো নামী পত্রিকা তাঁকে নিয়ে কভার স্টোরিও ছেপে দিয়েছে। শিরোনাম, মেলোনি এফেক্ট অফ ইউরোপ। জি-৭ শীর্ষ বৈঠকেও নানা মুডে দেখা গেল ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে। কখনও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। আবার কখনও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কানে কানে কথা বলে মজা করেছেন। এক্কেবারে পারফেক্ট মেলানি স্টাইল। এবার আমার পাশের ছবিটা দেখুন। সম্মেলন শেষে গুডবাই হ্যান্ডশেকের সময়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়ে মেলোনির মুড চেঞ্জ। শীতল চাহনি, চোখে-মুখে বিরক্তি। ইন্টারনেটে ভিডিও ভাইরাল। তো কী এমন হলো যে সম্পর্কের তাল কেটে গেল? আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থার দাবি, বৈঠকের শেষদিনে যৌথ বিবৃতি নিয়ে কার্যত দু-ভাগ হয়ে যায় জি-সেভেন। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, দুনিয়ার সব মানুষের সম্মতির ভিত্তিতে যৌনতার অধিকার নিশ্চিত করবে জি সেভেন গোষ্ঠী। তবে এখানে গর্ভপাতের অধিকারের কথা বলা নেই। বিবিসির দাবি, ইতালির প্রেসিডেন্ট জর্জিয়া মেলোনির আপত্তিতেই গর্ভপাতের অধিকারের কথাটি বাদ দেওয়া হয়। ম্যাক্রোর অনুরোধেও নাকি নরম হননি মেলোনি। দেখুন এটা আসলে অতি-দক্ষিণপন্থী মেলানির সঙ্গে উদারপন্থী ম্যাক্রোর মতাদর্শগত টানাপড়েন। চরমপন্থী নেত্রী হিসাবেই ইতালিতে মেলোনির উত্থান। শরণার্থীদের জায়গা দিতে আপত্তি। গর্ভপাত বিরোধী আইন পাশ করা ও চার্চের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করার আন্দোলনে বরবারই ছিলেন মেলানি এবং এখনও আছেন। আর সেই কারণেই ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ অস্বাভাবিক নয়। এখানে আরেকটা কথা বলতেই হচ্ছে। যৌথ ঘোষণাপত্র নিয়ে কিছুটা তিক্ততা হলেও অন্য একটা ব্যাপারে মেলোনিকে ধন্যবাদ জানাতেই পারেন ম্যাক্রো। ফরাসি বিপ্লবের সময়কার একটা হারিয়ে যাওয়া পদকে জি-সেভেনের গালা ডিনারে এবার তুলে আনে ইতালি। ময়দার সঙ্গে মাংসের কিমা মিশিয়ে তৈরি বিশেষ খাবার। যার নাম ক্রানচি লাজানিয়া। আর শেষ পাতে আরও এক পদ মন কেড়েছে অতিথিদের। যার সঙ্গে জুড়ে আছে বাঙালির সন্দেশ। বাঙালির নিজস্ব মাখা সন্দেশের সঙ্গে ইতালিয়ান সসের মিশেলে নতুন পদ তৈরি করেন ওই দেশের স্টার শেফ মাসিমো বাটুরা। রেসিপির পেটেন্টের জন্য আবেদনও করে রেখেছেন তিনি।

 

Follow Us: