
কলকাতা: আগে থেকেই মোতায়েন ছিল বিএসএফ। শনিবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে অশান্তি ঠেকাতে মাঠে নেমেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। একইসঙ্গে কাজ করবে পুুলিশের সঙ্গে। শনিবার রাতেও নতুন করে অশান্তি ছড়াতে দেখা যায় সামশেরগঞ্জের একাধিক প্রান্তে। হিজলতলায় বিএসএফের গাড়িতেও ভাঙচুর চলেছে বলে অভিযোগ। শনিবার সন্ধ্যাতেই মুর্শিদাবাদে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। পৌঁছে গিয়েছেন দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল করণি সিং সেখাওয়াতও। নানা প্রান্তে চলছে আধা সেনার টহল।
সুতি, ধূলিয়ান, ব্যাক টু ব্যাক ভাঙড়। ওয়াকফ প্রতিবাদের নামে একই ছকে ভাঙড়ে চলল তাণ্ডব। ভাঙড়েও কলকাতা পুলিশের সিসিটিভি ভেঙে তাণ্ডব চালানো হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশের উপর হামলা দুষ্কৃতীদের
এবার ভাঙড়। ফের আক্রান্ত পুলিশ। ভাঙচুর করা হল একাধিক পুলিশের গাড়ি। কার্যত আক্রমণ করা হয়েছে পুলিশ আধিকারিকদের। ভাঙড়ের শোনপুরের ঘটনা। জানা যাচ্ছে, নয়া ওয়াকফ আইন নিয়ে প্রতিবাদ দেখাচ্ছিলেন প্রতিবাদীরা। তখনই উত্তেজনা ছড়ায়। কেউ বা কারা পুলিশের গাড়ি ভাঙুচর ও তাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ।
বিস্তারিত পড়ুন: এবার ভাঙড়! রাস্তার উপরই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল পুলিশের বাইকে
জাভেদ শামিম বলেন, “যে ঘটনা ঘটেছে, যে প্রোফাইলের লোক জড়িত আছে। তাতে কোনও প্ররোচনার কথা অস্বীকার করা যায় না। কারা জড়িত, কী উদ্দেশ্য, সবটাই বের করা হবে। তবে সবার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। এখানে মানুষ অনেক বেশি সচেতন। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় দ্রুত। দ্বিতীয়বার যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সেটা দেখতে হবে।”
জাভেদ শামিম জানিয়েছেন, বেশিমাত্রায় গুজব ছড়াচ্ছে। কেউ ফোন করে বলছে হামলা হয়েছে, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো ভুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে। সেই কারণেই ইন্টারনেট রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২০০-র বেশিজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এডিজি আইন-শৃঙ্খলা বলেন, “কেউ কোনও খবর পেলে জানান। যার দোষী, তারা ছাড়া পাবে না। দরকার হলে পাতাল থেকে নিয়ে আসব। প্রত্যেককে গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া হবে। পদ যাই হোক না কেন, সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”
শেষ ৩৬ ঘণ্টায় মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ। এমনটাই বললেন এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম। কোনও বড় ঘটনা ঘটেনি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে গুজব নিয়ে এখনও উদ্বিগ্ন পুলিশ। শামিম বলেন, “এখনও অনেক গুজব ছড়াচ্ছে। যত বেশি গুজব ছড়াবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া খুব কঠিন। মানসিক অস্থিরতা আগে কমানো দরকার।”
গুজব ছড়ানো রুখতে এবার মুর্শিদাবাদের আরও কয়েকটি জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি মালদহ এবং বীরভূমের কয়েকটি জায়গায়ও বন্ধ থাকছে ইন্টারনেট পরিষেবা। আজ (রবিবার) থেকে ১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাত ১০টা পর্যন্ত আপাতত ওইসব এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হলেও ফোনে কথা বলা যাবে। এবং এসএমএস পাঠানো যাবে। সংবাদপত্রও পৌঁছবে ওইসব এলাকায়।
রাজ্য পুলিশ ও বিএসএফ রয়েছেই। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর মুর্শিদাবাদে পা রেখে আধাসেনা। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার শনিবারই মুর্শিদাবাদে পৌঁছেছেন। এদিন তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।” জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার আনন্দ রাই বলেন, “পরিস্থিতি এখন অনেক ভাল আছে। একটাই অনুরোধ করব, কেউ গুজবে কান দেবেন না। অনেকরকম গুজব ছড়াচ্ছে। যদি কারও কোনও সন্দেহ থাকে, আমাদের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করুন। আমরা ব্যাখ্যা দিয়ে দেব। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল।” এখনও পর্যন্ত ১৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ময়দানে সেন্ট্রাল ফোর্স
হিরণের পর রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন অর্জুন সিংয়ের। অর্জুনের সাফ কথা, রাজ্যপালকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন তুললেন রেলের ভূমিকা নিয়ে।
ইউসুফ পাঠান, সাংসদ
জ্বলছে মুর্শিদাবাদের একাধিক জায়গা। তপ্ত সুতি, জঙ্গিপুর, ধুলিয়ানের মতো একাধিক এলাকা। নয়া ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে কার্যত সেখানে তাণ্ডব চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। নেমেছে আধা সেনা। তবে এই অশান্ত পরিবেশের পরও কেন দেখা যাচ্ছে না বহরমপুরের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠানকে? ছবি পোস্ট করে এক প্রকার সেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম নেতা সৃজন ভট্টাচার্য। যে সময় মুর্শিদাবাদের মানুষ এক প্রকার দিশেহারা, সেই সময় সাংসদ ব্যস্ত তার চায়ের কাপে চুমুক দিতে। নিজের ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিতে তেমনটাই বুঝিয়েছেন সৃজন বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
বিস্তারিত পড়ুন: Yusuf Pathan: জ্বলছে মুর্শিদাবাদ, ‘চায়ের কাপে শান্তি উপভোগ করছেন TMC সাংসদ’, ছবি পোস্ট করে লিখলেন সৃজন
বিস্তারিত পড়ুন: ‘পুলিশকে ওরা মানছে না…’, সামসেরগঞ্জে ছেড়ে মালদহের বৈষ্ণবনগরে নদী পেরিয়ে পাড়ি শতাধিক পরিবারের
বিস্তারিত পড়ুন: মুর্শিদাবাদের অশান্তির নেপথ্যে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের লাগাতার উস্কানি, বিএসএফের রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে বাংলায় আফস্পার দাবি জানালেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে শনিবার সন্ধ্যাতেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। রবিবার সকালে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে সেই রাজীব কুমারকেই একহাত নিতে দেখা গেল বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষকে। গোটা ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন পুলিশের ভূমিকা, অকর্মণ্যতা নিয়ে।
বিএসএফের ক্যাম্প চান সামশেরগঞ্জের বাসিন্দারা।
হামলার পর মনিরুল ইসলামের বাড়ির বাইরে পুলিশ।
আগেই মাঠে নেমেছিল বিএসএফ। শনিবার রাতেই কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে মাঠে নেমেছে আধা সেনা। অশান্ত এলাকায় রাত থেকেই চলছে টহল।
তপ্ত ধুলিয়ান
রাস্তায় পড়ে রয়েছে ঠেলাগাড়ি। চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সিঙারা-মিষ্টি। দেখে বোঝাই যাচ্ছে কীভাবে নষ্ট করা হয়েছে খাবার। মুর্শিদাবাদের একাংশ জায়গার অবস্থা ঠিক এমনই। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানকে সাজাতে যা যা উদ্যোগ নিয়েছিল প্রশাসন, তার প্রায় অনেক কিছুরই ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে এলাকায়। ঠিক যেমন ধুলিয়ান থানা থেকে ঠিক ১০০ মিটার দূরত্বে প্রায় এক লক্ষ টাকার বেশি খরচ করে তৈরি করা হয়েছিল ‘আই লাভ ধুলিয়ান’। পড়ে রয়েছে ‘D’। সৌন্দর্যায়নের জন্য সাজানো হয়েছিল গোটা এলাকা। এখন সেখানেই রয়েছে শুধুই তছনছের ছবি।
বিস্তারিত পড়ুন: ‘আই লাভ ধুলিয়ান’-এর পড়ে আছে শুধু ‘D’, ‘জলে গেল’ ১ লক্ষ টাকা
জঙ্গিপুরের সাংসাদের স্পষ্ট মত, যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই বাইরের। তাঁর সাফ কথা, “কোথা থেকে ডুকছে জানি না।” তবে এই ঘটনা আগে কখনও সামশেরগঞ্জে হয়নি বলেই তিনি জানান।”