তৃতীয় ঢেউয়ে প্রস্তুত শুধুই কি মুখের কথা? বেআব্রু হয়ে পড়ল ‘অজানা জ্বরেই’
Fever: উত্তরবঙ্গে এখনও বেলাগাম 'অজানা' জ্বরের (fever) দাপট। তার মধ্যেই সিঁদুরে মেঘ কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে। জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শহর, শহরতলি ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শিশুরাও। শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা।
রাজ্য: উত্তরবঙ্গে এখনও বেলাগাম ‘অজানা’ জ্বরের (fever) দাপট। তার মধ্যেই সিঁদুরে মেঘ কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে। জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শহর, শহরতলি ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শিশুরাও। শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গে ছোটদের জ্বরে অনেক ধরনের সংক্রমণের হদিশ পাচ্ছেন চিকিত্সকরা। কিন্তু এর মধ্যেই বেআব্রু রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
উত্তরবঙ্গে বেশিরভাগ হাসপাতালে বেডের অভাবে ঠাঁই হচ্ছে না শিশুদের। করোনার (Corona)-র তৃতীয় ঢেউয়ের বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য জানিয়েছিল সেইমতো পরিকাঠামো গড়ে তারা তৈরি। কিন্তু গত এক সপ্তাহে অজানা জ্বরে যে ভাবে রাজ্যে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, এবং হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না, তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে যে জ্বর এতদিন অজানা বলা হচ্ছিল নমুনা পরীক্ষা করতেই সেই তকমাটা চলে যাচ্ছে ক্রমশ। সামনে আসছে জ্বরের নানাবিধ কারণ। মূলত RS ভাইরাস এবং ভাইরাল নিউমোনিয়ার আক্রমণেই জ্বরের প্রকোপ বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তবে তার পাশাপাশি পরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া এবং দু একটি ক্ষেত্রে করোনা বা সোয়াইন ফ্লুয়েরও হদিশ মিলেছে বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকেরা। স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনকে কেন্দ্র করে জ্বরের তথ্য জোগাড়ের কাজ শুরু হয়েছে গতকাল বিকাল থেকেই।
এদিকে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের পরে এ বার মুর্শিদাবাদেও অজানা জ্বরে আক্রান্ত শিশুরা। এই জেলায় এখনও পর্যন্ত ১৫০ জন শিশু আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত শিশুরা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। এই প্রেক্ষিতে যে প্রশ্ন উঠছে তা হল, করোনা হয়েছে কিনা এই উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বহু শিশুর হাসপাতালে জায়গা হয়নি। কিন্তু এখন যখন করোনা নয়, এমন আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে, সে ক্ষেত্রেও কি কোনও ব্যবস্থা নেই?
করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার প্রেক্ষিতে কী কী সতর্কতা নিয়েছিল রাজ্য?
একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এই ঢেউ ভারতে আছড়ে পড়তে পারে। সেই ঢেউয়ে শিশুরাই বিপদসীমায় থাকবে বলে মনে করছেন গবেষকদের একাংশ। সেই কথা মাথায় রেখে মাস দুয়েক আগেই সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানান, আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয়, তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পেডিয়াট্রিক কেয়ার এর জন্য আলাদা ব্যবস্থা জুলাই মাসের মধ্যেই নেওয়া হবে। মুখ্যসচিব সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ১৩০০ পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, ৩৫০ এসএনসিইউ এবং ১০ হাজার জেনারেল বেড তৈরি রাখা হচ্ছে। পুরোটাই কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের কথা মাথায় রেখে।
তাছাড়া পিকু-র ব্যবস্থা করা হচ্ছে একাধিক হাসপাতালে। সাধারণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রয়েছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, তেমনি কেবলমাত্র শিশুদের একটি অত্যাধুনিক ইউনিট হল পিকু। যেখানে যাবতীয় উন্নত মানের চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকবে বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য। করোনার তৃতীয় ঢেউ সামলাতে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছে স্বাস্থ্য দফতর।
কিন্তু এখন যখন রাজ্যজুড়ে কয়েকশো শিশু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে, তখন রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি থাকার কোনও প্রতিফলন কেন দেখা যাচ্ছে না? কেন করোনা নয় এমন জ্বরেও শিশুদের বেডের অভাব হচ্ছে হাসপাতালে? ওয়াকিবহালের একাংশ বলছেন, তৃতীয় ঢেউয়ের আগে এই জ্বরের প্রকোপেই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অব্যবস্থার কথা প্রকট হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: TV9 বাংলার খবরের জের, অজানা জ্বর নিয়ে সাত দিন পর নড়েচড়ে বসল স্বাস্থ্য ভবন