Byron Biswas: ‘সাগরদিঘির মানুষের সঙ্গে বেইমানি করলেন’, বাইরনের ছবি পুড়িয়ে বিক্ষোভ কংগ্রেস কর্মীদের

Sagardighi: পাটকেলডাঙা এলাকায় রাস্তার মোড়ে বাইরন বিশ্বাসের ছবি পুড়িয়ে বিক্ষোভও দেখান কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। বাইরন বিশ্বাস সাগরদিঘির সাহসী মানুষদের সঙ্গে অন্যায় করলেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।

Byron Biswas: 'সাগরদিঘির মানুষের সঙ্গে বেইমানি করলেন', বাইরনের ছবি পুড়িয়ে বিক্ষোভ কংগ্রেস কর্মীদের
বাইরন বিশ্বাসের ছবি পোড়ালেন কংগ্রেস কর্মীরা।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 29, 2023 | 8:45 PM

সাগরদিঘি: ‘বিশ্বাসঘাতকতার উদাহরণ’ বাইরন বিশ্বাস (Byron Biswas)। সোমবার কংগ্রেসের প্রতীকে জয়ী বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস হাত ছেড়ে ঘাস-ফুল শিবিরে যোগ দেওয়ার পর এই ভাষাতেই গর্জে উঠেছে সাগরদিঘির (Sagardighi) মানুষ। বাম, কংগ্রেস কর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারাও বাইরন বিশ্বাসের দলবদলের ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন। কেবল ধিক্কার দেওয়া নয়, এদিন সন্ধ্যায় পাটকেলডাঙা এলাকায় রাস্তার মোড়ে বাইরন বিশ্বাসের ছবি পুড়িয়ে বিক্ষোভও দেখান কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। বাইরন বিশ্বাস সাগরদিঘির সাহসী মানুষদের সঙ্গে অন্যায় করলেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। তবে এই ধাক্কা সামলে পুনরায় বাম-কংগ্রেস জোট ঘুরে দাঁড়াবে এবং পাল্টা বাইরনকে জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন সিপিএম কর্মীরা।

ব্যক্তিগত চাপে পড়েই বাইরন বিশ্বাস দলবদল করেছেন বলে দাবি সাগরদিঘির কংগ্রেস কর্মী মহম্মদ ইবাদৎ আলির। বাইরন কেবল কংগ্রেসের সঙ্গে নয়, সাগরদিঘির মানুষের সঙ্গেও বেইমানি করলেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ইবাদৎ আলির কথায়, “উনি কী জন্য তৃণমূলে যোগ করলেন সেটা উনি বলতে পারবেন। কিন্তু, কংগ্রেসের সঙ্গে বেইমানি করলেন। সাগরদিঘির মানুষের কাছে বেইমান হলেন। বিশ্বাসঘাতকতার উদাহরণ বাইরন বিশ্বাস। তাঁর উপর কোনও চাপ পড়েছিল নাকি তিনি কেন তৃণমূলে গেলেন, সেটা জানি না। তবে তৃণমূল তো চাপ দেবেই। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা ছিল। তার জন্য তিনি দলবদল করে থাকতে পারেন। তবে এটা করে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসঘাতক হলেন।”

কংগ্রেস নেতার সুরেই সিপিএম নেতা মীর বদরুল হক বলেন, “বাইরন যে বলেছেন তিনি কাজ করতে পারছিলেন না, এটা কোনও চাপ নয়। আসলে উনি ব্যবসায়ী মানুষ। উনি নিজের কাজ করতে পারছিলেন না। সেই কাজের কাছেই তিনি মাথা নত করলেন। টাকা, লোভ ও চাপের কাছে বাইরন হেরেছেন। প্রত্যেকের সঙ্গে বেইমানি করলেন। এপ্রসঙ্গে তাঁর পাল্টা দাবি, বাইরন বিশ্বাসের যদি সত্যি কাজ করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে উনি পদত্যাগ করে ভোটে দাঁড়িয়ে আবার জিতে দেখান।”

কেবল বাম বা কংগ্রেস নেতা কর্মীরা নন, ক্ষুব্ধ সাগরদিঘির সাধারণ মানুষেরাও। বাইরন বিশ্বাসের দল বদলের ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা আসিফ আলি বলেন, “গোটা সাগরদিঘি বলবে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হয়ে ভোট পেয়ে যে জিতল সে আবার তৃণমূলে যোগ দিল। এটা বিশ্বাসঘাতকতার উদাহরণ। সাগরদিঘির মানুষের সঙ্গে অন্যায় করলেন। একজন বিরোধী ছিলেন। সেটা আর থাকল না। সাহসী মানুষদের প্রতি খুব অন্যায় হল।”

যদিও বাইরন বিশ্বাসের ঘাস-ফুলে যোগদান প্রসঙ্গে জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান কানাই চন্দ্র মণ্ডল কংগ্রেস নেতৃত্বকেই দায়ী করেছেন। তিনি পাল্টা বলেন, “অধীরবাবু বাইরনকে ঢাল করে এগোচ্ছিলেন। অধীরবাবু তাঁকে কেন ধরে রাখতে পারলেন না? ৩ মাসের মধ্যে কেন বাইরন পালিয়ে এলেন সেটা অধীরবাবু ভাল বলতে পারবেন।”

পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাইরন বিশ্বাসের দলবদলের ঘটনা বাম-কংগ্রেস জোটের ভিতকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। একথা স্বীকার করে নিয়েছেন বাম নেতা মীর বদরুল হক। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের সময় আমরা সিপিএম, কংগ্রেস জোট নিয়ে আলোচনা করছি। ভেবেছিলাম, সাগরদিঘি থেকে তৃণমূলকে বিদায় দেব। সেই সময়ে এরকম একটা ঘটনা বড় ধাক্কা।” সাগরদিঘি মডেল যেখানে গোটা পশ্চিমবঙ্গে চালু করবে বলে আশা করেছিল বাম-কংগ্রেস, সেখানে বাইরন বিশ্বাসের দলবদল গোটা সাগরদিঘিকে বড় ধাক্কা দিল জানিয়ে তিনি বলেন, “সাগরদিঘির মডেল গোটা পশ্চিমবঙ্গে চালু করব ভেবেছিলাম। বাইরন আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে বেইমানি করলেন। এই বেইমানি মডেলটা এবার চালু হয়ে গেল।”

বাইরন বিশ্বাস যে তৃণমূলে যাচ্ছেন, সেটা কেউ ঘুণাক্ষরে টের পাননি বলে দাবি সাগরদিঘির কংগ্রেস নেতা ইবাদৎ আলির। তিনি বলেন, “আমরা ঘুণাক্ষরেও কাল পর্যন্ত টের পাইনি যে বাইরন দল ছাড়ছেন।” তবে বাইরন বিশ্বাসের দলত্যাগে কংগ্রেস দলের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না দাবি জানিয়ে ইবাদৎ আলি পাল্টা বলেন, “বাইরন বিশ্বাস সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসঘাতক। তাঁর দলবদল কোনও প্রভাব ফেলবে না। অধীর চৌধুরির নেতৃত্বে আমাদের দল ভাল আছে। এই ধাক্কা কাটিয়ে আবার আমরা ঘুরে দাঁড়াব এবং জবাব দেব।”