Balurghat: ৪২ বছর আগে আরও এক তিলোত্তমার হয়েছিল ‘গণধর্ষণ’, দোষীরা ধরা পড়েনি, বাম জমানায় মিলেছিল ক্ষতিপূরণ
Balurghat: আজ থেকে ৪২ বছর আগে ১৯৮২ সালে উত্ত কোচবিহারেও এমন এক বিভৎস ঘটনার শিকার হন বালুরঘাটের মেয়ে। গনধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল ওই স্টাফ নার্সকে। ওই সময় এই ঘটনা রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল।
বালুরঘাট: আরজি কর ঘটনার সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে কোচবিহারের এক নার্সের ‘গণধর্ষণ’ মামলা৷ ৪২ আগে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক নার্সকে নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়েছিল। পরে তাঁকে করা হয়েছিল ‘গণধর্ষণ’। অভিযোগ উঠেছিল তেমনই। ১৯৮২ সালের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি আরজি করের ঘটনা। ৪২ বছর আগে সেই খুনে সঠিক বিচার হয়নি বলে দাবি নার্সের পরিবারের৷ মূল দোষীরা সাজা পাননি বলে দাবি। সেবারেও সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায় সেরেছিল। তবে এবার তিলোত্তমা খুনের বিচার পাক তাঁর পরিবার৷
আজ থেকে ৪২ বছর আগে ১৯৮২ সালে উত্ত কোচবিহারেও এমন এক বিভৎস ঘটনার শিকার হন বালুরঘাটের মেয়ে। গনধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল ওই স্টাফ নার্সকে। ওই সময় এই ঘটনা রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু পুরো বিষয়টিকে নজর রেখে ওই নার্সের পরিবারে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। শুধু তাই নয় ওই সময় শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ।
ওই সময়ের যন্ত্রণার স্মৃতি আজও বুকে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ওই নার্সের পরিবারের সকল সদস্যদের। ওই ঘটনায় তিনজন অভিযুক্তের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড হলেও, মূল অভিযুক্তরা আজও অধরা বলেই পরিবারের দাবি। পরিবারের মতে, আজও সুবিচার পায়নি পরিবার। তাই আরজি করের ঘটনা সামনে আসতেই এবারে অন্তত প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক বলে দাবি করছে নার্সের পরিবার।
নার্সের ছোট বোন এখন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি। পূর্ণিমার মতে, “১৯৮২ সালের ওই ঘটনা আমাদের পরিবারকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। দাদাকে রাজ্য সরকার চাকরি দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আমার বাবা, দিদির মৃত্যুর শোক সহ্য করতে পারেননি। আমার দিদি প্রতিবাদী ছিল, তাই ওই সময় চক্রান্ত করেই তার উপরে এমন ঘৃণ্য হামলা হয়েছিল।” তাঁর বক্তব্য, “আজ তৃণমূলের আমলে যেমন প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে, তখন বামেদের আমলেও প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছিল। তাই তিলোত্তমা কাণ্ডে যাতে আইওয়্যাশ নয়, প্রকৃত অপরাধীদের কতড়া শাস্তি হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।”
কোচবিহারের নিউ টাউনের বুড়িহাটি মসজিদের কাছে আদি বাড়ি ছিল ওই নার্সের বাবার। তবে ছয়ের দশকে চাকরির সূত্রে বালুরঘাটে চলে এসেছিলেন তিনি। চার মেয়ে, তিন ছেলে, মোট সাত ছেলে মেয়ে নিয়ে বড় সংসার ছিল নার্সের বাবার। বালুরঘাট বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী ওই নার্সের বাবা প্রথমে ভাড়া বাড়িতে থাকলেও, পরবর্তীতে শহরের দিশারী পাড়া এলাকায় বাড়ি করেন।
বড় মেয়ে ছিলেন নির্যাতিতা নার্স। তিনি বালুরঘাট কলেজ থেকে পড়াশোনা করার পরেই, কলকাতা থেকে নার্সিং ট্রেনিং করেন। কোচবিহার জেলাকে হোম ডিস্ট্রিক্ট হিসেবে দেখিয়ে সেখানে চাকরিতে যোগ দেন। পরিবার আদি বাড়িতে ফিরে যায়। আর সেই নার্স কোচবিহারকেই হোম ডিস্ট্রিক্ট হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন।
ওই নির্যাতিতার মেজো বোনের বিয়ে হয় কোচবিহারেই। আর চাকরি পাওয়ার পর তাঁর মেজ বোনের ভাড়া বাড়িতে গিয়েই উঠেছিলেন ওই নার্স। ১৯৮২ সালে এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে ওই নার্সকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পর এলাকার কয়েকজন তরুণ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত্যু হয় ওই নার্সের। সেই সময় সারা রাজ্য ক্ষোভে গর্জে উঠেছিল। বামফ্রন্ট সেই সময় রাজ্যের ক্ষমতায়। ওই ঘটনায় অভিযুক্তরা শাসকদল ঘনিষ্ঠ ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। আরজি করের ঘটনায় সেই মামলা যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)